ফের রাজ্য বিজেপির এক পরিচিত নেতার মাদক চক্র যোগের তথ্য সামনে এলো। মাদক ব্যবসায় যুক্ত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হলেন হাওড়ার ডোমজুড়ের বিজেপির মণ্ডল সভাপতি অষ্ট নস্কর। লিলুয়া থানা এলাকার জগদীশপুর থেকে তাঁকে গ্রেফতার করেছে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। ভিন রাজ্য থেকে এ রাজ্যে শুধু গাঁজা আমদানি করাই নয়, একইসঙ্গে মাদক কারবারিদের তিনি গাড়ি ভাড়া দিতেন বলে অভিযোগ। পাশাপাশি তিনি নিজেও মাদক ব্যবসায় জড়িত বলে জেনেছে পুলিশ। এর আগে বিজেপি যুবনেত্রী পামেলা গোস্বামী ও বিজেপি নেতা রাকেশ সিংয়ের নাম জড়িয়ে ছিল মাদক কাণ্ডের সঙ্গে। গ্রেফতারের পর দীর্ঘদিন জেলেও ছিলেন তাঁরা।
গত জুলাই মাসে আলিপুর থেকে দুই মাদক কারবারিকে গাঁজা সহ গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশ। ওই গাঁজা ওড়িশা থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল। গাড়িটি ভাড়া দিয়েছিলেন হাওড়ার বাসিন্দা বিজেপি নেতা অষ্ট। সপ্তাহখানেক আগে হেস্টিংস এলাকায় অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যেও গাঁজা পাওয়া যায়। গ্রেফতার করা হয় গাড়ির চালক ও মাদক কারবারিকে। তাদের জেরাতেও উঠে আসে অষ্টর নাম।
মাদক কারবারের একাধিক লিঙ্কের কাছ থেকে বিজেপি নেতা অষ্ট নস্করের নাম উঠে আসায় খোঁজখবরশুরু করে পুলিশ। তদন্তকারীরা জানতে পারেন, তাঁর বাড়ি হাওড়ার চ্যাটার্জিহাট থানা এলাকার চৌধুরীপাড়ায়। ট্র্যাভেল এজেন্টের ব্যবসা রয়েছে তাঁর। এরজন্য বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে গাড়ি ভাড়া নেন তিনি। যাঁদের থেকে তিনি গাড়ি নিতেন, তাঁদের মোটা টাকা পেমেন্ট করতেন। সেই গাড়ি যেত ওড়িশায়। তাতে করেই আসত গাঁজা। মূলত হাওড়া ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার গাঁজা কারবারিদের অষ্ট নস্কর গাড়ি দিয়ে সাহায্য করতেন বলে দাবি করেছে পুলিশ।
এই বিজেপি নেতা নিজেও ভিন রাজ্য থেকে অন্যের গাড়িতে করে গাঁজা এনে বিভিন্ন মাদক কারবারির কাছে পাঠাতেন বলে অভিযোগ। এক একটি ট্রিপে ৮০ থেকে ১০০ কেজি পর্যন্ত গাঁজা আসত। বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে আদালত থেকে ওয়ারেন্ট বের করা হয়। সেই নির্দেশ হাতে নিয়েই হাওড়ায় যান গোয়েন্দারা। চ্যাটার্জিহাট থানার পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে তাঁর বাড়িতে তল্লাশি চালান তাঁরা। কিন্তু সেখানে পাওয়া যায়নি অষ্টকে।
তদন্তকারীরা জানতে পারেন, জগদীশপুরে ডেরা রয়েছে অষ্টর। এরপর সেখানে তল্লাশি চালিয়ে গ্রেফ্যাট করা হয় এই বিজেপি নেতাকে। তাঁর বিরুদ্ধে মাদক আইনের ধারা যুক্ত করা হয়েছে। ধৃতকে আলিপুর আদালতে তোলা হলে দু’দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।
অষ্টকে জেরা করে তদন্তকারীরা জেনেছেন, যাঁদের থেকে তিনি গাড়ি ভাড়া নিতেন, তাঁদের দ্বিগুণ বা তিনগুণ টাকা দেওয়া হতো। তাই তাঁকে গাড়ি ভাড়া দিতে আগ্রহী অনেকেই। মূলত অ্যাম্বুলেন্স ও লাক্সারি গাড়ি ভাড়া নিতেন তিনি। কিন্তু সেই গাড়ি কোথায় যাবে, তা গোপন রাখতেন অষ্ট। হাওড়ার পাশাপাশি অন্যান্য জেলা থেকেও গাড়ি ভাড়া নিতেন অভিযুক্ত।
পুলিশের দাবি এই কারবারে অষ্ট নিজের রাজনৈতিক পরিচয়কে কাজে লাগাতেন। তিনি জেরায় জানিয়েছেন, রাজনৈতিক নেতা হওয়ায় হাওড়ার মাদক কারবারিদের তিনি বলতেন, তাঁর থেকে গাড়ি নিলে পথে ধরপাকড়ের সম্ভাবনা নেই। যে কারণে এই কারবারিরা তাঁর উপর ভরসা রেখেই গাড়ি ভাড়া নিত। পরে অন্য জেলার মাদক ব্যবসায়ীরাও গাড়ি ভাড়া নেওয়া শুরু করে। অষ্টর সঙ্গে যে সব মাদক কারবারির যোগ রয়েছে, হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট থেকে তাদের সম্পর্কে বিস্তারি জানতে পেরেছে পুলিশ। এখন সেই মাদক কারবারিদের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ।
Be the first to comment