হুগলি জেলা পরিষদ ও মৎস্য দপ্তরের উদ্যোগে কলকাতা থেকে ৭৫ কিলোমিটার দূরে ১৯৯৩ সালে গড়ে উঠেছে মায়ায় ঘেরা স্বপ্নময় সবুজ দ্বীপ। বেহুলা ও হুগলি নদীর সংযোগস্থলে চর জেগে রূপ নিয়েছে ২ কিলোমিটার দীর্ঘ, ৪০ ফুট প্রশস্ত, ১৮০ বিঘা জুড়ে ঝাউ, আকাশমনি, পাম, ইউক্যালিপটাস, অর্জুন, শাল, সেগুন, মেহগনি, সুপারি, নারকেল ও দেবদারুর সবুজে ছাওয়া দ্বীপের নাম সবুজ দ্বীপ। চড়ুইভাতির এ এক আদর্শ জায়গা। শীতের মিঠে রোদ্দুরে কোনও এক উইক এন্ডে বেড়িয়ে আসা যায় সবুজ দ্বীপে।
একমাত্র পথ দক্ষিন থেকে উত্তরে, দুপাশে নারকেল গাছের সারি। চিলড্রেনস পার্ক, ভিউ টাওয়ারও হয়েছে। আর আছে সবুজ দ্বীপে রাজা ও তৃপ্তি হোটেল অ্যান্ড রেস্তোরাঁ। ভাত থেকে চা সবই মেলে এখানে। চলার পথে বলাগড় থানার অন্তর্গত গুপ্তিপাড়ার দক্ষিনে বর্ধিষ্ণু জনপদ সোমড়ায় ১৭৫৫ সালের নবরত্ন মন্দিরটি বিধ্বস্ত আর জঙ্গলাকীর্ণ হলেও দেবী রয়েছেন সিংহবাহিনী জগদ্ধাত্রী। আর আছে ১৭৬৫ সালের পিরামিডধর্মী পঞ্চরত্ন মন্দিরে শ্রী শ্রী মহাবিদ্যা, গড় বেষ্টিত সুখাড়িয়ার প্রাসাদোপম বিশাল প্রাসাদটিও আজ ভগ্নস্তুপে পর্যবসিত। তবে ১৮১০ সালে তৈরি নাগারা শৈলীর টেরাকোটায় সমৃদ্ধ অনিন্দ্যসুন্দর ২৫ চুড়োর বারোচালার আনন্দময়ী মন্দিরটি দেখে নেওয়া যায়।
আর আছে দ্বাদশ শিবমন্দির, হরসু্ন্দরী ও নিস্তারিণী কালীর মন্দির আনন্দময়ীকে ঘিরে। তেমনই রিকশায় চলা যায় শ্রীপুর জমিদারবাড়িতে দারুতে তৈরী কারুকার্যময় আটচালার দুর্গামন্ডপ দর্শনে। ১৭৪৬ সালে তৈরি একচুড়োর রাধাগোবিন্দজিউর মন্দির, সামনে ১৯১৭ এর দোলমঞ্চ, বাংলার তক্ষন শিল্পের নিদর্শন ১৭০৮ সালের তৈরি দোচালা চন্ডীমন্ডপ, আটচালা শিবমন্দির, গড়ের বাইরে রেখ শৈলীর জোড়া শিবের পঞ্চরত্ন মন্দির আজও রমণীয়। শ্রীপুর বাজারে নৌশিল্পের কারখানাগুলিও দেখে চলা যায়। তেমনই গুপ্তিপাড়ায় বৃন্দাবনচন্দ্রের মন্দির ও রথের যথেষ্ট প্রশস্তি। প্যাকেজ ট্যুরেও যাচ্ছে চুঁচুড়া ফেরিঘাট থেকে যাতায়াত ও আহার-বিহার নিয়ে ব্যবস্থা এদের।
কীভাবে যাবেন?
হাওড়া থেকে ৪০ কিলোমিটার দুরের ব্যান্ডেল হয়ে ব্যাক লুপ লাইনে ত্রিবেণী ৪৮, বলাগড় ৬৫, সোমড়া বাজার ৬৮ কিমি অর্থাৎ ত্রিমুখী ৩ রেল স্টেশন থেকে চলা যেতে পারে সবুজ দ্বীপ। সরাসরি ট্রেনও যাচ্ছে ৮টা ৬ এ শিয়ালদহ ছেড়ে শিয়ালদহ-কাটোয়া লোকাল ব্যান্ডেল ৯টা ২৬, ত্রিবেণী ৯টা ৩৯, বলাগড় ৯টা ৫৬, সোমড়া বাজার ৯টা ৫৬ এ পৌঁছে গুপ্তিপাড়া, অম্বিকা কালনা, নবদ্বীপ ধাম হয়ে কাটোয়া যাচ্ছে। আর হাওড়া থেকে ৫টা ৩৮, ৮টায় ছেড়ে লোকাল অনকে ট্রেনই কাটোয়া যাচ্ছে। সোমড়া বাজার রেল স্টেশন থেকে রিকশা বা পায়ে ১০ মিনিটের পথে সুখাড়িয়া গ্রাম বা সবুজ দ্বীপ ঘাট। এরপর নৌকা পেরোনো। বলাগড় থেকেও পায়ে বা রিকশায় সোমড়া বাজার পৌঁছে একইভাবে চলা যায় সবুজদ্বীপে। চুঁচুড়া থেকে চুঁচুড়া-কালনা ৮ নম্বর বাসে কোড়লার মোড় নেমে ১২ মিনিটে যাওয়া যায় সুখাড়িয়া ফেরি ঘাটে।
ফেরার পথে উচিত হবে কাটোয়া-হাওড়া লোকালে সোমড়া বাজার বিকেল ৪টে ৪৩, বলাগড় ৪টে ৪৬, ত্রিবেণী ৫টা ৫, ব্যান্ডেল ৫টা ৪১ এ পৌঁছে ৬টা ৪৮ ও হাওড়ায় ফেরা। এছাড়া শিয়ালদহ যাওয়ার জন্যও প্রচুর ট্রেন মেলে।
Be the first to comment