বিএসএফের গুলি নিহত রাজবংশী যুবকের পরিবারকে কাছে টেনে দোষীদের শাস্তির দাবিতে আওয়াজ তুললেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বেঙ্গালুরুতে কাজ করতেন কোচবিহারের রাজবংশী পরিবারের ছেলে প্রেমকুমার বর্মণ। চারবছর পরে কাজ থেকে বাড়ি ফিরেছিলেন তিনি। সকালে গিয়েছিলেন চাষের জমিতে। কিন্তু বিএসএফের গুলিতে প্রাণ হারান প্রেম বর্মণ। এই ঘটনায় দিল্লির বিজেপি সরকারকে প্রবল আক্রমণ করলেন অভিষেক। শনিবার, মাথাভাঙার সভা থেকে তিনি জানান, “আমি এর শেষ দেখে ছাড়ব।“ প্রেম বর্মণের মাকে জড়িয়ে ধরে, তাঁর চোখের জল নিজের রুমাল দিয়ে মুছিয়ে দেন। আশ্বাস দেন পাশে থাকার।
দিনহাটা ১ নম্বর ব্লকের বছর তেইশের প্রেমকুমার বর্মণ বেঙ্গালুরুতে কাজ করতেন। চারবছর পর বাড়ি ফিরেছিল। সকালে মাঠে গিয়েছিলেন। সেখানেই বিএসএফ-এর জওয়ানরা তাঁকে গুলি করে মারে। এই ঘটনা নিয়ে এদিনের সভা থেকে বিজেপি তথা কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে তুমুল আক্রমণ করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রেমকুমারের দেহ ১৮০টি গুলির টুকরো পাওয়া গিয়েছে। দীর্ঘ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন বিশেষজ্ঞও এই বীভৎসতা দেখে শিউরে উঠেছেন বলে দাবি অভিষেকের। তিনি দাবি করেন, কাশ্মীরে জঙ্গিদের মারার বন্দুক দিয়ে প্রেম বর্মণকে মারা হয়েছে। অতিরিক্ত রক্তরক্ষণেই মৃত্যু হয়েছে ওই রাজবংশী যুবকের। অথচ তাঁর থেকে গরু, সোনা, গুলি-বন্দুক, বোমা কিছুই পাওয়া যায়নি। তাহলে, কেন তাঁকে গুলি করা হল? তিনি যদি অপরাধ করে থাকেন, তাহলে তাঁকে গ্রেফতার করা হল না কেন! প্রশ্ন তোলেন অভিষেক। এরপরেই বর্মণ পরিবারকে মঞ্চে ডাকেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। নিজে প্রেমকুমারে মাকে জড়িয়ে ধরে মঞ্চে নিয়ে আসেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন নিহত যুবকের বাবা ও দাদা। তাঁদের সামনে দাঁড়িয়ে অভিষেক কথা দেন এর শেষ দেখে ছাড়বেন। শনিবার, কলকাতা ফিরেই তিনি বিষয়টি নিয়ে কথা বলবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। প্রেমকুমারে পরিবারে তরফ থেকে এফআইআর করা হয়েছে। ”এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য়ে কে? শেষ দেখে ছাড়ব।” বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্ট থেকে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত লড়বেন বলে আশ্বাাস দেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
এরপরেই এই ঘটনা নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে তোপ দাগেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। বলেন, বিএসএফ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীন। আর তার মন্ত্রী অমিত শাহ। কোচবিহারের সাংসদ ওই মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী। অভিষেক বলেন, “এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে কে? শেষ দেখেই ছাড়ব। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জবাব দিন নিশীথ প্রামাণিক, জবাব দিক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক।“ দুমাসের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে হবে বলে দাবি করেন তিনি। এই ঘটনার পরে বিজেপি-র পক্ষ থেকে কেউ গিয়ে প্রেম বর্মণের পরিবারে সঙ্গে দেখা করেননি। তাঁদের পাশে দাঁড়াননি- অভিযোগ তৃণমূল সাংসদের। এরপরেই অভিষেক কটাক্ষ করেন। বলেন, ভোটের আগে রাজবংশীদের দরদ দেখিয়ে ভোট নিয়েছিল গেরুয়া শিবির। অথচ এখন সেই পরিবারের সন্তানের মৃত্যুতে তারা পাশে নেই।
এই পুরো বক্তব্যের সময়েই তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের কাঁধে মাথা রেখে ফুঁপিয়ে কেঁদে গিয়েছেন প্রেমের মা। নিজের পকেট থেকে সাদা রুমাল বের করে মায়ের চোখের জল মুছিয়ে দেন অভিষেক। প্রেমের দাদা, বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলেন, ”চিন্তা করবেন না। আপনারা আমার সঙ্গে যোগাযোগ রাখবেন। কোনও অসুবিধা হলেই বলবেন।” এই দৃশ্য দেখে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন মাথাভাঙা সভাস্থলের সবাই।
Be the first to comment