কালিয়াগঞ্জে বিজেপি কর্মী খুনের ঘটনায় প্রকৃত দোষী কে? গুলি চালালো কে? বৃহস্পতিবার, মালদহের প্রশাসনিক বৈঠক থেকে প্রশ্ন তুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই ঘটনায় বিএসএফের ভূমিকা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন তিনি। একই সঙ্গে কালিয়াগঞ্জে নাবালিকার দেহ উদ্ধারে পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী।
রাধিকাপুরে বিজেপি কর্মী মৃত্যুঞ্জয় বর্মণের মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় উত্তাল রাজ্য রাজনীতি। তার পাশের জেলা মালদহে প্রশাসনিক সভা করতে গিয়ে কালিয়াগঞ্জের ঘটনা নিয়ে পরোক্ষভাবে বিএসএফকে কাঠগড়ায় তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রশ্ন তোলেন, “গুলিটা কে চালালো? আমি তো শুনেছি BSF নাকি ওই গ্রামটা নিয়ন্ত্রণ করে। পুলিশের কাছে কোনও খবর আছে? এটার তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। বিএসএফ তো এখন ৫০ কিলোমিটারের ভিতরে ঢুকে গিয়েছে। অনেকে নাকি মারাও গিয়েছে। গুলিটা কে চালাল? কোথায় থেকে চলল? এটার তদন্ত হওয়া দরকার আছে।”
ওই গ্রামে বিএসএফের প্রভাব কতটা? উত্তরে এক জেলা আধিকারিক জানান, রাধিকাপুর গ্রামটি সীমান্তবর্তী এলাকায়। ক্ষোভ প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “তার মানে তোমাদের কাছে যে তথ্য নেই, সেই তথ্য আমাদের কাছে আছে। তোমাকে কেউ গালি দিচ্ছে, আর তুমি চুপ করে শুনছ। আমি তোমাকে গুলি চালাতে বলছি না। কিন্তু তোমার কাছে আইন আছে, সেটাই অনেক।” বিএসএফ যদি অত্যাচার চালায়, তাহলে এফআইআর করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী।
এরপরেই বিজেপির বিরুদ্ধে নাম না করে তীব্র আক্রমণ করেন মমতা। তাঁর অভিযোগ কালিয়াগঞ্জ, কালিয়াচকের মতো হিংসার ঘটনার নেপথ্যে দিল্লির চক্রান্ত রয়েছে। ”কালিয়াগঞ্জ, কালিয়াচক, গাজোলের মতো জায়গায় ইচ্ছা করে হিংসা ছড়ানো হচ্ছে। দিল্লি থেকে আসা ২০-২৫ জনের মিটিং হয়েছে। ওরা বলছে জাতিগত সংঘর্ষ লাগাও। শুধু হিন্দু-মুসলমান না। জাতিগত সংঘর্ষ লাগাও। কেউ সংঘর্ষ চায় না। কিছু দজ্জাল রাজনৈতিক নেতা সংঘর্ষ চায়।”
এদিন ফের কালিয়াগঞ্জের নাবালিকার দেহ উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, “এখন কিন্তু সে যুগ নেই যে একটা ঘটনা ঘটার চার ঘণ্টা পর পুলিশ যাবে। ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে যেতে হবে। অপেক্ষা করার কোনও জায়গা নেই। কালিয়াগঞ্জের ঘটনাটায় ময়নাতদন্তের রিপোর্ট মানুষকে জানাতে এত সময় লাগল কেন? সঙ্গে সঙ্গে কী ঘটেছে জানিয়ে দিলে মিডিয়া ট্রায়াল করতে পারে না?“ এরপরেই আইসিদের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি অভিযোগ করেন, কোনও আইসি (IC) অলস হয়ে গিয়েছেন। কেন কালিয়াগঞ্জে প্রথমে কনস্টেবলকে পাঠানো হয়েছে? কেন আইসি যাননি? সসম্মানে মৃতদেহ বহন হবে। মৃতদেহ বহনকারী ব্যাগ রাখার কথা ফের জানান মমতা। বলেন, দরকার হলে সাদা কাপড় রাখতে হবে। কারণ, মৃত্যুর পরে আরও বেশি সম্মান জানানো উচিত। তবে, পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ”কে মারছে, বিডিও অফিস ভাঙচুর করছে, এত সাহস হয় কী করে? মনে রাখবেন পুলিশের গায়ে উর্দি আছে।”
বিএসএফ-এর ভূমিকা নিয়ে নজরদারির কড়া নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। একই সঙ্গে বাইরে থেকে লোক এনে বাংলায় অশান্তির তৈরির চেষ্টা চলছে বলবে অভিযোগ করেন মমতা। এই বিষয়ে কড়া ব্যবস্থা নিতে বিহার, ঝাড়খণ্ডের ডিজি-দের সঙ্গে বৈঠক করার নির্দেশ রাজ্যের ডিজি-কে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
Be the first to comment