বাঙালি হতে হলে বইটি প্রসঙ্গে প্রকাশক সুনন্দন রায় চৌধুরি লিখেছেন, বাঙালির ইংরেজিপনা, বাঙালির দ্বিচারিতা, পরনিন্দা, পরচর্চা, বাঙালির কবিতা, বাঙালি এবং কলকাতার বানিজ্য, অর্থনৈতিক গতিশীলতা, বাঙালি নামক প্রাণী কী ৩০০ বছর পর ডাইনোসর হবে? এরকম হাজার কথার বুনটে তৈরি মৃদুল পাঠকের এই চমৎকার বইটি। লেখক মৃদুল পাঠক কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিওলজির ছাত্র ছিলেন। ছিলেন রাজস্থান ক্যাডারের আইএএসও। নাইজেরিয়ার তেল কোম্পানিতে কাজ করেছেন বেশকিছু বছর, আমেরিকায় বসবাস করেছেন দীর্ঘদিন ধরে। জেআইএস সংস্থার উচ্চপদে আসীন। এহেন ব্যক্তির সম্পর্কে প্রকাশক বলেছেন, লেখক পাড়া বেপাড়া, দেশ বিদেশ, কবিতা কারিগরি, বাঙালির খাবার, বাঙালির ব্যবসা সবেতেই তাঁর অবাধ গতি। পার্ক স্ট্রিটের পাঁচতারা হোটেলের বলরুম হোক বা পাড়ার বালক সংঘ ক্লাব সবক্ষেত্রেই তিনি সমান সাবলীল। মোট ৩২ গদ্যে বাঙালির সমাজ দর্শনের অনবদ্য ছবি এঁকেছেন লেখক। প্রথম লেখাটির শীর্ষক হল, ‘আজি হতে শতবর্ষ পরে’।
লেখক লিখেছেন, আজি হতে শতবর্ষ পরে বালক বালিকাদের বিদ্যালয়ের ইতিহাস চর্চায় এক নতুন অধ্যায় সংযোগ হবে। একদা বাঙালি নামে এক সম্প্রদায় বাস করত, এটাও লেখা হবে হিন্দি বা ইংরেজিতে। ‘দুধ না খেলে হবে না ভালো ছেলে’, কী যে করি, এ পরবাসে, প্রজাপতির জীবনকাহিনী, সবজান্তা, আজ নগদ কাল ধার, ধারের পায়ে নমস্কার, শুক্তুমিতে ঝাল দিয়েছে অম্বলেতে কী? প্রভৃতি লেখা দেখে বোঝা যায় লেখক বাঙালি প্রবাদ, প্রবচন, গান বা কবিতার অংশ সম্পর্কে ঠিক কতটা ওয়াকিবহাল। যেমন ‘খাদ্যরসিক’ শীর্ষক ৯ নম্বর গদ্যাংশে মৃদুলবাবু লিখেছেন, বাঙালি খেতে ভালোবাসে———— সর্বজনবিদিত। সকালে চা, টোস্ট, অমলেট দুপুরে মাংস বা ভেটকি ফ্রাই, বিউলির ডাল, পোস্ত, সর্ষে বাটা দিয়ে পাবদা বা চিংড়ি, চাটনি-দই, মিষ্টি, রসগোল্লা, সন্দেশ অতিপ্রিয় জিনিস আমাদের। এই খাদ্যরসিক গদ্যাংশে বিরিয়ানি, মোগলাই, পটলের দর্মা, বাচ্চাদের ম্যাগি, পিৎজা, মোমো, বার্গার খাওয়ার কথাও বলা হয়েছে। ডাল, ভাত, শুক্তো, চড়চড়ি, চিংড়ি ভাপা, আলুভাতে বড্ড হ্যাপা। তরকা, রুটি, মটন কষা অথবা এগরোল জিন্দাবাদ। মাদ্রাজিরা ইডলি, ধোসা বাড়িতে খায়, অতিথি এলে তাঁদেরও দেয়। পাঞ্জাবিরা বাইরে গিয়েও রুটি, ডাল, তন্দুরি, কাবাব খায় বাড়িতেও তাই। কিন্তু আমরা তা পারিনা। আমাদের বাড়িতে কোনও অবাঙালি বন্ধু এলে তাঁদের রুটি, তড়কা, ধোসা, সাম্বার খাওয়াই পারি না মাছের ঝোল ভাত করে খাওয়াতে। এইভাবে কোথাও বাঙালির প্রশংসার ছলে নিন্দা, কোথাও বা তার আত্মবিস্মৃতি নিয়ে ৩২ ফুল দিয়ে যেন মালা গেঁথেছেন মৃদুল পাঠক। আত্মসমালোচনা থাকলেও বাঙালির গরিমাকে নীচে টেনে নামানোর প্রয়াস করেননি লেখক। দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় যা দেখেছেন, যা বুঝেছেন তাই মজার করে তুলে ধরেছেন।
বাঙালি হতে হলে
লেখক- মৃদুল পাঠক, দাম ২২৫ টাকা, সম্পর্ক প্রকাশনী
Be the first to comment