বিজেপির কাছে কখনোই মাথানত করব না। ওদের খাতায় নাম লেখাব না। চেতলার বাড়িতে সিবিআই হানা প্রসঙ্গে এবার কেন্দ্রের মোদি সরকারের বিরুদ্ধে রীতিমতো গর্জে উঠলেন ফিরহাদ। রবিবার সাতসকালে পুর নিয়োগকাণ্ডে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চেতলার বাড়িতে পৌঁছে যায় সিবিআই আধিকারিকরা। টানা সাড়ে ৯ ঘণ্টা তল্লাশি চালালেও নিটফল জিরো। এদিন সন্ধে সাড়ে ৬টার কিছু সময় পর সিবিআই আধিকারিকরা চেতলার বাড়ি থেকে বেরোলে রীতিমতো সাংবাদিক সম্মেলন করে কেন্দ্রের প্রতিহিংসাপরায়ণ রাজনীতিকে কাঠগড়ায় তোলেন ফিরহাদ। পরে সাংবাদিক সম্মেলনে মেয়র হুঁশিয়ারি দেন, বিজেপির কাছে কখনোই মাথানত করব না। তবে এদিন ফিরহাদ সাফ জানান, আমার পরিবারকে হেনস্থা করা হলে চুপ করে থাকব না। আজ আমার ভাইয়ের শ্রাদ্ধানুষ্ঠানেও যেতে দেওয়া হয়নি আমাদের। জোর করে তল্লাশির নামে বাড়িতে আটকে রেখেছিল সিবিআই। তবে ফিরহাদ সাংবাদিক বৈঠক থেকে প্রশ্ন তোলেন, আমি কী চোর? কেন বারবার আমাকে এবং আমার পরিবারকে হেনস্থা করা হচ্ছে তা নিয়ে এদিন প্রশ্ন তোলেন ফিরহাদ হাকিম।
তবে এদিন এখানেই থেমে থাকেননি মেয়র। তিনি প্রশ্ন তোলেন, পুর মন্ত্রীর পুর নিয়োগের কী সম্পর্ক আছে? যারা চাকরি দিয়ে টাকা নেয় তারা সমাজের কীট। এর থেকে নিজের মায়ের মাংস খাওয়া ভালো বলে উল্লেখ করেন তিনি। পাশাপাশি ফিরহাদ মনে করিয়ে দেন, বামফ্রন্ট আমলেও আমি লড়াই করেছি। কেস হয়েছে, মার খেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। কিন্তু চোর অপবাদ কেউ দিতে পারেনি। আমি কোনওদিন দুর্নীতির সঙ্গে আপোস করিনি। এরপরই ফিরহাদ বলেন, একটা মানুষ দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারলে আমি সঙ্গে সঙ্গে পদ ছেড়ে দেব। এরপর পুর নিয়োগ মামলা প্রসঙ্গে কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহার উদ্দেশে ফিরহাদ প্রশ্ন করেন কি রিলেটেড পেলেন? সিবিআইকে প্রশ্ন করবেন না? ফিরহাদ বলেন, আমি নীতি-মতাদর্শ নিয়ে রাজনীতি করেছি। কোনওদিন অনৈতিক কাজে যুক্ত হইনি। শুধুমাত্র মানুষের সেবা করেছি। এরপরই রাজ্যের বিরোধী নেতা সুজন চক্রবর্তী, বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য, দিলীপ ঘোষের উদ্দেশে ফিরাদের প্রশ্ন আপনারা তো আমাকে মানুষ হিসাবে চেনেন। রাজনীতি সরিয়ে রেখে বলুন আমি কী চোর?
মেয়র আরও অভিযোগ তোলেন, ভেবেছিলাম কোর্টে সুবিচার পাব, কিন্তু পাই নি। এরপরই বিজেপির উদ্দেশে প্রশ্ন ছুঁড়ে ফিরহাদ বলেন, আমাকে দরকার হলে জেলে রাখুন কিন্তু অপমান করবেন না। বিজেপি সামনে দিয়ে লড়তে পারে না পিছন দিয়ে সম্মানহানি করে। এরপরই গদ্দার শুভেন্দুকে প্রশ্ন ছুঁড়ে ফিরহাদ বলেন, তুমি সিবিআই-র ভয়ে বিজেপিতে যেতে পার। কিন্তু আমি যাব না। আমার পরিচয় পত্র, দলিল, জুয়েলারি লিস্টের জেরক্স কপি নিয়ে গিয়েছে। তবে এদিন মেয়র বারবার মনে করিয়ে দেন, আমার দফতরের সঙ্গে নিয়োগের কোনও সম্পর্ক নেই। তবে এদিন সিবিআই তল্লাশির নির্জাস যে বিগ জিরো তা জানিয়ে দেন ফিরহাদ। এর পরেই সরাসরি বিজেপিকে আক্রমণ করে ফিরহাদ বলেন, একটা অসভ্য, বর্বর দল। এদের কাছে মাথা নত করব না। বিজেপিকে ছিছিক্কার করে ফিরহাদ বলেন, ছি ছি ছি! এরা সম্মানহানি করে! অন্যদিকে, এ প্রসঙ্গে নারদা প্রসঙ্গও উঠে আসে ফিরহাদের কথায়। ফিরহাদ বলেন, একটি মামলাতেই আমি অভিযুক্ত। কিন্তু সেই মামলার বিচার হবে না। রাজীব গান্ধীর যেমন মৃত্যুর পর ক্লিনচিট পেয়েছিলেন, ওই মামলাতেও তাই হবে। আমি মারা যাওয়ার পর হয়তো ক্লিনচিট পাব। তবে এ ব্যাপারে নারদা কাণ্ডে অভিযুক্ত শুভেন্দু অধিকারীর কথাও টেনেন আনেন ফিরহাদ। প্রশ্ন করেন, ওই একই মামলায় শুভেন্দুও তো অভিযুক্ত। কই ওকে তো ডাকা হল না?
এদিন সন্ধে সাড়ে ৬টার কিছু সময় পর ফিরহাদের চেতলার বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন ইডি আধিকারিকরা। আর কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরা বাড়ি থেকে বেরোতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন ফিরহাদ কন্যা প্রিয়দর্শিনী হাকিম। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, টানা সাড়ে ৯ ঘণ্টা ধরে আমাদের উপর মানসিক নির্যাতন হয়েছে। আমি মেয়ে হিসাবে নয় নাগরিক হিসাবে বলছি আমার বাবা কোনও দুর্নীতিতে যুক্ত নয়।
Be the first to comment