অবশেষে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি মানতে বাধ্য হলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। রাজ্যের বকেয়ার দাবি জানাতে বৈঠকের এক ঘণ্টার মধ্যেই দিল্লি রওনা দিলেন রাজ্যপাল। তিন সপ্তাহ সময় দিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তার মধ্যে জব কার্ড হোল্ডারদের প্রাপ্য বকেয়া না মেটানো হলে পয়লা নভেম্বর থেকে বৃহত্তর আন্দোলনে নামবে তৃণমূল। ধর্নামঞ্চ থেকেই ঘোষণা দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের। তৃণমূল সভানেত্রীর নির্দেশ মতো তুলে নিলেন অবস্থান ধর্নাও।
কী কথা হল রাজ্যপাল-অভিষেকের?
বাংলা জুড়ে যখন এই কৌতুহল তুঙ্গে তখন রাজভবনের সামনে ধর্নামঞ্চ থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, “দিল্লির কৃষি ভবন থেকে আমাদের যে মেরে বের করে দেওয়া হয়েছে সেটা বলিনি। আমাদের লক্ষ্য হল লড়াই। বিজেপির মতো না। তৃণমূলকে হারাতে পারছি না, লোক হচ্ছে না, সে কারণে রাজ্যপালের কাছে যাই না। একবারও বলিনি যে আমাদের বের করে দিয়েছে।” অভিষেক জানান, ভুক্তভোগীরা জব কার্ড দেখান। রাজ্যপালের সামনে ভেঙে পড়েন ভুক্তভোগীরা। প্রশ্ন তোলেন, “আমাদের সংসার চলছে না। কেন্দ্র কেন টাকা আটকে রেখেছে।”
এরপরেই প্রতিনিধি দলেরনেতা হিসেবে রাজ্যপালকে অভিষেক প্রধান দুটো বিষয়ে প্রশ্ন করেন। এক, কাজ করিয়েছেন কি না? দুই, করালে টাকা বন্ধ করে রাখা কেন?
এরপরেই রাজ্যপালকে সময় বেঁধে দেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। বলেন, “আপনি ১ সপ্তাহ সময় নিন, ২ সপ্তাহ সময় নিন। কেন্দ্রের কাছে জানুন কেন টাকা বন্ধ। সরকারের টাকা কেন বন্ধ?”
আইনত প্রাপ্য সুদের কথাও তোলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর প্রশ্ন, ভুক্তভোগী যাঁরা, তাঁদের দোষ কী? বিরোধীদের তীব্র কটাক্ষ করে তৃণমূলে সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বলেন, “দুর্নীতি বলে বলে যাঁরা লাফাচ্ছে তারা একটা FIR করেননি। মুখ্যমন্ত্রী একাধিকবার প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন, চিঠি লিখেছেন। আপনারা টাকা আটকে রাখতে পারেন না। আমরা সৌজন্য রক্ষা করেছি। ২ বছর সময় দিয়েছি। ৩ সপ্তাহ আরও সময় দেব। আমাদের জানতে হবে”
কেন্দ্রকে নিশানা করে অভিষেক বলেন, “টাকা ছাড়বে কি না সেটা মানুষ বাধ্য করবে। কিন্তু লিখিত চাই কোন আইনে টাকা আটকে!” রাজ্যপালকে তিনি বলেন, “আমরা আপনার শরণাপন্ন হয়েছি, কারণ ২১ লক্ষ মানুষের জীবন নির্ভর করছে। ২ সপ্তাহ পর আপনারা যদি আমাদের সদুত্তর না দেন আন্দোলন থেকে সরব না।”
অভিষেক জানান, “রাজ্যপাল কথা দিয়েছেন ২ সপ্তাহ নয়, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কেন্দ্রের জবাব জানাব। ইতিমধ্যে উনি দিল্লির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন। আশা করছি এর একটা বিহিত উনি করবেন”
এরপর সবার মনেই প্রশ্ন ছিল তাহলে কি ধর্না উঠবে?
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, “কল্যাণদা, সৌগতদা, সুদীপদা, শোভনদেবদারা অনুরোধ করেছেন ধর্না তুলে নেওয়ার জন্য। দলনেত্রীর সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। আমি ২৪ ঘণ্টা আরও অপেক্ষা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু দলনেত্রী বলেছেন, যেহেতু রাজ্যপাল সৌজন্য দেখিয়েছেন, আমাদেরও পাল্টা সৌজন্য দেখানো উচিত।”
এরপরেই তৃণমূলে সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের ঘোষণা, “রাজ্যের মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষার কথা মনে রেখে এই ধর্না প্রত্যাহার করে নিচ্ছি।” কিন্তু কেন্দ্রকে সময় বেধে দেন তিনি। বলেন, “২ সপ্তাহ পর নবমী। তার পর দশমী, লক্ষ্মীপুজো, শোভাযাত্রা। ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিচ্ছি। তার মধ্যে জবাব না এলে আবার ১ নভেম্বর থেকে যতদিন না টাকা আসছে ততদিন আন্দোলন। একটা মানুষকে আমরা ভাতে মারতে দেব না। যতদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার আছে। আমাদের দায় মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে কষ্ট করে তাদের শ্রমে উপার্জিত টাকা ফিরে আসে তার ব্যবস্থা করা।”
Be the first to comment