নেপালের ভূমিকম্পে লাফিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা! যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন বহু এলাকায়

Spread the love

নেপালের বিধ্বংসী ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। শনিবার বিকেলে সে দেশের পুলিশ জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত ১৫৭ জনের দেহ উদ্ধার করা গিয়েছে। তবে উদ্ধারকাজ শেষ হলে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অন্য দিকে, ভূমিকম্পের পর ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলির সঙ্গে যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। তবে নেপাল সেনা এবং নেপাল পুলিশের তত্ত্বাবধানে উদ্ধারকাজ চলছে। শনিবার সকালেই চিকিৎসকদের একটি দলকে নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলি ঘুরে দেখেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্পকমল দহাল।

শুক্রবার রাত ১২টা নাগাদ ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্র নেপাল। ন্যাশনাল সেন্টার ফর সিসমোলজির তরফে জানানো হয়, ভূমিকম্পের উৎসস্থল ছিল নেপালের জাজারকোটের রামিদন্ডা। কম্পনের কেন্দ্র মাটি থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার গভীরে ছিল। রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা ছিল ৬.৪। নেপালের ভূকম্পনের অভিঘাতে কেঁপে উঠেছিল সুদূর দিল্লির মাটিও। বেশ কিছু ক্ষণ ধরে টের পাওয়া গিয়েছিল কম্পন। এ ছাড়াও ভূমিকম্পের কারণে এনসিআর, অযোধ্যা-সহ উত্তর ভারতের বড় অংশের মাটিতে কম্পন অনুভূত হয়েছিল। লখনউ এবং বিহারেরও বেশ কিছু জায়গার মাটি কেঁপে ওঠে।

নেপালের সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, ভূমিকম্প আঘাত হানার কিছু ক্ষণের মধ্যে বেশ কয়েকটি বাড়ি তাসের ঘরের মতো ধসে পড়ে। বহু বাড়িতে চওড়া চওড়া ফাটল ধরেছে। ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়ে মৃত্যু হয়ছে বহু মানুষের। তবে সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পশ্চিম রুকুম এবং পাহাড়ি জাজারকোট এলাকার বাসিন্দারা। এই দু’টি এলাকা কার্যত শ্মশানে পরিণত হয়েছে। ওই দুই এলাকার চারিদিকে এখন শুধু স্বজনহারাদের চিৎকার এবং আর্তনাদ।

নেপালের প্রধানমন্ত্রী ভূমিকম্পের কারণে মৃত্যু এবং ক্ষয়ক্ষতির জন্য শোকপ্রকাশ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তরফে এক্স হ্যান্ডলে লেখা হয়েছে, শুক্রবার রাত ১২টা নাগাদ জাজারকোটের ভূমিকম্পের কারণে হওয়া মৃত্যু এবং ক্ষয়ক্ষতির জন্য গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী পুষ্পকমল দহাল। উদ্ধারকাজ এবং ত্রাণের জন্য তিনটি নিরাপত্তা সংস্থা ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করেছে।’’ নেপালের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করে তিনি লেখেন, ‘‘নেপালে হওয়া ভূমিকম্পের কারণে প্রাণহানি এবং ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে গভীরভাবে শোকাহত। নেপালের জনগণের পাশে আছে ভারত। নেপালকে সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা করতে প্রস্তুত ভারত। স্বজনহারা পরিবারগুলির প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি এবং আহতরা যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন, সেই কামনা করছি।

সংবাদ সংস্থা পিটিআইয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মূল ভূমিকম্প এবং আফটারশকের আতঙ্কে বহু মানুষ নিজেদের বাড়িতে প্রবেশ করতে ভয় পাচ্ছেন। সুরক্ষেত জেলা হাসপাতালে বেশিরভাগ আহতদের চিকিৎসা চলছে। বিজ্ঞানীদের একাংশের বক্তব্য, হিমালয়ের নীচে ভূকম্পন বলয় সক্রিয় হয়ে উঠেছে। যার জেরে ভারতীয় পাতের সঙ্গে ইউরেশীয় পাতের বিরোধ তৈরি হতে পারে। ভারতীয় পাতটি ক্রমে উত্তর দিকে এগোচ্ছে। এর ফলে ইউরেশীয় পাতের সঙ্গে তার সংঘর্ষ হতে পারে। তাই হিমালয় এলাকায় যে কোনও মুহূর্তে বড়সড় ভূমিকম্পের আশঙ্কা রয়েছে।

ভূকম্পনবিদ অজয় পাল জানিয়েছেন, নেপালের নীচে একটি ভূকম্পন বলয়কে অতি সক্রিয় হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাই বাসিন্দাদের সতর্ক থাকতে হবে। শুক্রবারের ভূমিকম্পের উৎসস্থল ছিল নেপালের ডোটি জেলার কাছে। ২০২২ সালের নভেম্বর মাসেও ওই একই এলাকায় ভূমিকম্প হয়েছিল, রিখটার স্কেলে যার মাত্রা ছিল ৬.৩। তিন জন মারা গিয়েছিলেন সেই কম্পনের ফলে। এ ছাড়া, গত ৩ অক্টোবর নেপালের ওই এলাকাতেই পর পর বেশ কয়েক বার কম্পন অনুভূত হয়। কম্পনগুলির মধ্যে সময়ের ব্যবধান ছিল অত্যন্ত কম।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*