বছরের শুরুতেই বড় ধাক্কা। টানা দুই মাস রোগভোগের পর প্রয়াত রশিদ খান। বয়স মাত্র ৫৫ বছর। তাঁর অসুস্থতার খবর প্রথম জানিয়েছিল আজকাল ডট ইন। উস্তাদজির মৃত্যুর খবর ছড়াতেই শোকস্তব্ধ সঙ্গীতমহল। রাজ্য সরকার তাঁর চিকিৎসার খরচ বহন করছিল। শহরের বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন শিল্পী। খবর পেয়ে সেখানে জয়নগর থেকে পৌঁছে যান মমতা বন্দোপাধ্যায়। সঙ্গে ছিলেন ববি হাকিম, মহুয়া মৈত্র, ইন্দ্রনীল সেন, অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। শিল্পীর কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. সুব্রত মিত্র জানান, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন শিল্পী। মঙ্গলবার দুপুর ৩.৪৫ মিনিটে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এদিন তাঁকে পিস ওয়র্ল্ডে রাখা হবে। বুধবার গান স্যালুট জানিয়ে টালিগঞ্জে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে। পরে পরিবারের অনুরোধে সেই সিদ্ধান্তে বদল ঘটেছে। খবর, পরিবার পিস ওয়র্ল্ডে রাখার বদলে শিল্পীর দেহ বাড়িতে নিয়ে যাবে। সকালে প্রয়াত শিল্পীকে শায়িত রাখা হবে রবীন্দ্রসদনে। দুপুরে গানস্যালুট দিয়ে তাঁকে শেষবিদায় জানাবে রাজ্য সরকার।
বিশিষ্ট শিল্পীর প্রয়াণে শোকপ্রকাশ করেছেন রাজনৈতিক জগতের বিশিষ্টরা। এক্স হ্যান্ডেলে শোকপ্রকাশ করেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে থেকে শুরু করে রাহুল গান্ধী ও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরীও।
উস্তাদ রশিদ খানের অকাল প্রয়াণে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের জগতে নক্ষত্র-পতন হলো। হিন্দুস্থানি শাস্ত্রীয় সংগীতের জগতে উস্তাদ রশিদ খানের অনির্বচনীয় অবদান চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে। পদ্মভূষণ পুরস্কার প্রাপ্ত সঙ্গীতজ্ঞ রশিদ খানের প্রয়াণে আমরা গভীরভাবে শোকস্তব্ধ। আমরা তাঁর শোকাহত পরিবারবর্গের প্রতি জানাই গভীর সমবেদনা।
— অধীর রঞ্জন চৌধুরী
গত ২২ নভেম্বর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ নিয়ে শহরের প্রথম সারির বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন উস্তাদজি। ছিল উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস। এছাড়াও, দীর্ঘদিন ধরে তিনি প্রস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত। ডা. মিত্র আরও জানান, প্রথমে চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছিলেন। অবস্থারও উন্নতি হয়েছিল। আচমকাই মঙ্গলবার সকালে নতুন করে অবস্থা সঙ্কটজনক হয়ে পড়ে। প্রেসার দ্রুত নামতে থাকে। সঙ্গে সঙ্গে রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখার ওষুধ দেওয়া হয় তাঁকে। কিন্তু চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘চিকিৎসকেরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। তাঁদের চিকিৎসায় কোনও ত্রুটি ছিল না।’’ তিনি শিল্পীর প্রয়াণের আনুষ্ঠানিক খবর জানাতে গিয়ে কার্যত ভেঙে পড়েন। জানান, উস্তাদজি তাঁর আপন ভাইয়ের সমান। আন্তরিক সমবেদনা জানান, প্রয়াত শিল্পীর স্ত্রী জয়িতা খান, দুই মেয়ে এক ছেলেকে।
সকাল থেকেই শিল্পীর অসুস্থতার খবর ছড়াতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে দেশের বিখ্যাত শিল্পীরা। আজকাল ডট ইনের কাছে শোক জানিয়েছেন পরিচালক অরিন্দম শীল। তাঁর ‘মিতিন মাসি’ ছবিতে রশিদ খান গেয়েছিলেন। বলেন, ‘‘রশিদ আমার থেকে বয়সে ছোট। বেশিদিন কথা না হলেই ফোন আসত ওর তরফ থেকে। আমি, বিক্রম ঘোষ আর রশিদ খান— এই ত্রয়ীর রসায়ন আগামী কোনও ছবিতে আর দেখা যাবে না।’’ পণ্ডিত বিক্রম ঘোষ বলেন, ‘‘আমার ছোটবেলার বন্ধু চলে গেল। এক বছরে আমাদের জন্ম। রশিদ তিন মাসের বড় ছিল। ১৩ বছর বয়স থেকে বন্ধুত্বের শুরু। একসঙ্গে সারাক্ষণ ওঠাবসা ছিল আমাদের। বন্ধুবিয়োগ মেনে নিতে তাই খুব কষ্ট হচ্ছে।’’
Be the first to comment