সুকান্ত ইস্যুতে সংসদ-কমিটির শুনানিতে স্থগিতাদেশ সুপ্রিম কোর্টের

Spread the love

সন্দেশখালিতে সুকান্ত-ইস্যুতে সংসদীয় কমিটির তলবকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে কিছুটা হলেও স্বস্তি রাজ্যের। সংসদীয়-শুনানিতে আপাতত স্থগিতাদেশ শীর্ষ আদালতে। সোমবারের শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের  প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ সব পক্ষকে নোটিস ইস্যু করার নির্দেশ দিয়েছে। আগামী ৪ সপ্তাহের মধ্যে নোটিসের জবাব দিতে হবে।

প্রসঙ্গত, গত বুধবার সন্দেশখালির অভিযান ছিল বিজেপি সাংসদ সুকান্ত মজুমদারের। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পথে ১৪৪ ধারা জারি থাকায় পুলিশি বাধার মুখে পড়েন সুকান্ত মজুমদার। রীতিমতো রাজ্য পুলিশ কর্মীদের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ বেঁধে যায় তাঁর। গাড়ি থেকে পড়ে যান তিনি।  সাংসদ অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রথমে তাঁকে বসিরহাট জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয় কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে।

অভিযোগ ওঠে,  সুকান্ত মজুমদার একজন সাংসদ হওয়া সত্ত্বেও, তার ‘প্রিভিলেজে’  হস্তক্ষেপ করেছে পুলিশ। অভিযোগ আরও ওঠে, তাঁকে শারীরিকভাবে নিগ্রহ করা হয়। তিনি আহত হওয়ার পর তাঁকে দেরি করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এই প্রত্যেকটি বিষয় একজন সাংসদের স্বাধিকারকে লঙ্ঘন করে বলে অভিযোগ ওঠে। এই অভিযোগ তুলে লোকসভার সচিবালয় থেকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে একটি চিঠি জমা পড়ে। চিঠিতে বলা হয়, সাংসদ সুকান্ত মজুমদারের স্বাধিকার লঙ্ঘনের চেষ্টা হয়েছে। এই মর্মে রাজ্যের ডিজিপি রাজীব কুমার-সহ তিন পুলিশকর্তা তলব করা হয়। ডেকে পাঠানো হয়  রাজ্যের মুখ্যসচিব বিপি গোপালিক এবং উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক শরৎকুমার দ্বিবেদীকে। ৯ তারিখ প্রিভিলেজ কমিটি অর্থাৎ সংসদীয় কমিটির বৈঠক ছিল। কিন্তু তাঁরা এদিন কেউই আসেননি। পাল্টা রাজ্যের তরফে মুখ্যসচিব সুপ্রিম কোর্টে এই সংসদীয় তলবকে চ্যালেঞ্জ করে একটি পিটিশন ফাইল করে। জরুরি শুনানির আর্জিও জানানো হয়।

এদিনের শুনানিতে, রাজ্যের মুখ্যসচিবের তরফে আইনজীবী কপিল সিব্বল বলেন, “সন্দেশখালির ঘটনা একটা রাজনৈতিক কর্মসূচি ছিল। সেখানে একজন সাংসদের অধিকার ভঙ্গের কোথাও কোনও প্রশ্ন নেই। ১৪৪ ধারা লঙ্ঘন করা হচ্ছিল।” তিনি আরও সওয়াল করেন, “যে অভিযোগ করা হচ্ছে, অর্থাৎ সুকান্ত মজুমদারকে ধাক্কা দিয়ে গাড়ি থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছে, তার প্রমাণ ভিডিয়োতে নেই। বরং ভিডিয়োতে যে অ্যাভিডেন্স পাওয়া যাচ্ছে, সুকান্ত মজুমদারই দলের এক কর্মী তাঁকে টেনে নামান। তাঁর ধাক্কাতেই কার্যত সুকান্ত মজুমদার পড়ে গিয়েছিলেন।” আইনজীবী কপিল সিব্বলের বক্তব্য, “যেদিন ঘটনা ঘটেছিল, ঘটনাস্থলে মুখ্যসচিব, রাজ্য পুলিশের ডিজি, এসপি কেউই ছিলেন না। তাঁদের কেন এক্ষেত্রে তলব করা হয়েছে। এই বিষয়টি কোনওভাবেই প্রিভিলেজের আওতায় পড়ে না।”

আইনজীবীর কপিল সিব্বলের পাশাপাশি আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ভিও সওয়াল করেন, যে যে অভিযোগের ভিত্তিতে স্বাধিকার ভঙ্গের ধারা যুক্ত হয়, তার কোনওটিই এক্ষেত্রে হয়নি। অন্যদিকে, লোকসভার অধ্যক্ষের তরফ থেকে সওয়াল করা হয়, কোনও সাংসদ যখন কোনও অভিযোগ করেন, তখন সেই অভিযোগ খতিয়ে দেখার জন্য প্রত্যেকের একটা মৌখিক-অ্যাভিডেন্স নেওয়া হয়। এই চার জনকে কখনই দোষী সাব্যস্ত করা হয়নি। তাঁদের বক্তব্য জানতে চেয়েই ডাকা হয়েছে। তাঁদের বক্তব্য রেকর্ড করা হত।

এদিনের প্রত্যেকের বক্তব্য শোনার পর প্রধান বিচারপতি জানিয়ে দেন, আপাতভাবে ৪ সপ্তাহ সময় দেওয়া হল। সংসদীয় কমিটির তলবে আপাতত স্থগিতাদেশ দিচ্ছে সুপ্রিম কোর্ট। চার সপ্তাহের মধ্যে সব পক্ষ অর্থাৎ লোকসভার সেক্রেটারির বক্তব্য পাশাপাশি, যারা অভিযোগ করেছে অর্থাৎ রাজ্যের তরফ থেকেও বক্তব্য দিতে নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*