গ্রেফতার সন্দীপ ঘোষ, তাঁকে সিজিও থেকে নিজামে আনলো সিবিআই

Spread the love

 

চিরন্তন ব্যানার্জি:-

গত দু’সপ্তাহ ধরে লাগাতার জেরার পর অবশেষে সোমবার সন্ধ্যায় গ্রেফতার করল সিবিআই। এদিন তাঁকে সিজিও কমপ্লেক্স থেকে বার করে সিবিআই অফিসারেরা সন্দীপকে নিয়ে যান নিজাম প্যালেসে। তার পরেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তরফে জানানো হয়, গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁকে।
আরজি করে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় তো বটেই, পাশাপাশি হাসপাতালের আর্থিক দুর্নীতির ইস্যুতেও সন্দীপ ঘোষ কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের প্রশ্নের মুখে পড়েছেন। তাঁর পলিগ্রাফ টেস্টও হয়েছে। টানা ১৬ দিন ধরে সকাল থেকে রাত তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে চলেছিল সিবিআই। কিন্তু ১৬ দিন ধরে জিজ্ঞাসাবাদের পরও তাঁকে কেন গ্রেফতার করা হচ্ছিল না, সে প্রশ্ন উঠেছিল বার বার। তারপরই সোমবার সন্ধ্যায় অবশেষে গ্রেফতার হলেন আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ। যদিও এখনও পর্যন্ত তাঁকে স্বাস্থ্যভবন সাসপেন্ড করেনি।
প্রসঙ্গত, গত ৯ অগস্ট আরজি করে মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার পর থেকেই তৎকালীন অধ্যক্ষ সন্দীপের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে নানা মহলে। গত ১৫ অগস্ট তাঁকে প্রথম বার তলব করে সিবিআই। সে দিন হাজিরা দেননি সন্দীপ। পর দিন অবশ্য রাস্তা থেকে সোজা সিবিআইয়ের গাড়িতে ওঠেন তিনি। তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় সিজিও কমপ্লেক্সে সিবিআই দফতরে। তার পর থেকে ২৪ অগস্ট পর্যন্ত টানা ১৪ দিন তাঁকে তলব করা হয় সিজিওতে। দৈনিক ১০ থেকে ১৪ ঘণ্টা পর্যন্ত সিবিআই দফতরে থাকতে হয়েছিল সন্দীপকে। গত ২৫ অগস্ট সকালে সন্দীপের বেলেঘাটার বাড়িতে হানা দেয় সিবিআইয়ের একটি দল। ৭৫ মিনিট বাইরে অপেক্ষার পর দরজা খোলেন সন্দীপ। ভিতরে ঢোকেন সিবিআই কর্তারা। কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে আরজি করে মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার তদন্ত করছে সিবিআই। এ ছাড়া, ওই হাসপাতালে আর্থিক অনিয়মের মামলার তদন্তভারও সিবিআইয়ের হাতে দিয়েছে আদালত। দু’টি মামলাতেই কেন্দ্রীয় সংস্থার জোড়া আতশকাচের নীচে রয়েছেন আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ। আর্থিক অনিয়মের মামলায় ২৪ অগস্ট এফআইআরও করেছে সিবিআই। সূত্রের খবর, সেই এফআইআরের ভিত্তিতেই সন্দীপের বাড়িতে পৌঁছেছিল সিবিআইয়ের দল। তার মাঝে আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে সন্দীপ-সহ মোট সাত জনের পলিগ্রাফ পরীক্ষাও করেছিল সিবিআই।
মহিলা চিকিৎসকের দেহ উদ্ধারের পর থেকে আরজি করে যে আন্দোলন শুরু হয়, তাতে আবাসিক চিকিৎসক থেকে পড়ুয়া, সকলেরই অন্যতম দাবি ছিল সন্দীপের অপসারণ কিংবা পদত্যাগ। আন্দোলনের চাপে পড়ে ১২ অগস্ট পদত্যাগ করেন সন্দীপ। স্বাস্থ্য দফতরে গিয়ে নিজের পদত্যাগপত্র জমাও দেন। কিন্তু তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সন্দীপকে কলকাতার অন্য একটি সরকারি হাসপাতালের অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ করে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর। সেখান থেকেও তাঁর অপসারণের দাবিতে শুরু হয় আন্দোলন। এর মাঝে মঙ্গলবার কলকাতা হাই কোর্ট নির্দেশ দেয় সন্দীপকে ছুটিতে যেতে। সেই থেকে ছুটিতেই ছিলেন সন্দীপ। পরে অবশ্য আন্দোলনের চাপে তাঁকে সেই পদ থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয়।
অন্যদিকে এই আবহের মধ্যেই আরজি করের প্রাক্তন ডেপুটি সুপার আখতার আলি সন্দীপের বিরুদ্ধে চিকিৎসার জৈব বর্জ্য দুর্নীতি, সরকারি টাকা নয়ছয়, নির্মাণের জন্য আইন ভেঙে ঠিকাদার নিয়োগ-সহ একাধিক আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ এনেছেন। ইতিমধ্যে সিবিআই একাধিকবার আরজি করে দল পাঠিয়েছে। তাঁরা সেমিনার রুম থেকে শুরু করে মর্গ সহ অধ্যক্ষের দফতরও ভিজিট করে।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*