প্রয়াত সীতারাম, ১৪ তারিখ AIIMS এ হবে দেহদান..

Spread the love

 

রোজদিন ডেস্ক:-

২৫ দিনের যুদ্ধ শেষ। ৭২ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন সিপিএমের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি।
গত ১৯ অগস্ট শ্বাসযন্ত্রে গুরুতর সংক্রমণ ধরা পড়ার পর সীতারাম ইয়েচুরিকে ভর্তি করানো হয়েছিল দিল্লির এইমসে। প্রথম থেকেই আইসিইউয়ে রাখা হয়েছিল তাঁকে। গত ৯ সেপ্টেম্বর রাতে অবস্থার অবনতি হয়। কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্রের সাহায্য নিতে হয় চিকিৎসকদের। বৃহস্পতিবার দুপুরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন তিনি। সিপিএম পলিটব্যুরোর সদস্য নীলোৎপল বসু জানিয়েছেন, সীতারাম আর নেই। দুপুর ৩টে ৩ মিনিটে প্রয়াত হন সীতারাম।
প্রসঙ্গত, গত ৮ আগস্ট যেদিন প্রয়াত হন পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ওই দিনই দিল্লিতে ইয়েচুরির চোখে ছানির অস্ত্রোপচার হয়েছিল। তাই শারীরিক কারণেই পরের দিন কলকাতায় বুদ্ধবাবুর শেষযাত্রায় ইয়েচুরি আসতে পারেননি। ২২ অগস্ট নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে বুদ্ধবাবুর স্মরণসভাতেও থাকতে পারেননি। তার দু’দিন আগে ফুসফুসে সংক্রমণ নিয়ে তাঁকে ভর্তি হতে হয়েছিল এইমসে।
উল্লেখ্য, ১৯৫২ সালের ১২ অগস্ট ইয়েচুরির জন্ম মাদ্রাজে। পৈতৃক বাড়ি অন্ধ্রপ্রদেশের হায়দরাবাদে। স্কুলশিক্ষা প্রথমে সেখানেই। ১৯৬৯ সালে দিল্লির প্রেসিডেন্ট এস্টেট স্কুলে ভর্তি হন। সেখান থেকেই সিবিএসই দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় দেশের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেন তিনি। অর্থনীতিতে স্নাতক হন দিল্লির সেন্ট স্টিফেন্স কলেজ থেকে। তার পর স্নাতকোত্তর কোর্সে ভর্তি হন জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় (জেএনইউ)-এ। জেএনইউয়েই ইয়েচুরির বামপন্থী ছাত্র রাজনীতিতে যোগ। সেখানে পড়াকালীনই সিপিএমের সদস্যপদ গ্রহণ করেন এবং পুরো সময়ের রাজনীতি করার সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৭৮ সালে ভারতের ছাত্র ফেডারেশন (এসএফআই)-এর সর্বভারতীয় যুগ্ম সম্পাদক হন। ১৯৮৪ সালে এসএফআই-এর সর্বভারতীয় সভাপতি। সিপিএমের অন্ধ্রপ্রদেশ (তখন অবিভক্ত) রাজ্য কমিটিতে ছিলেন। ১৯৮৫ সালে পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটিতে নির্বাচিত হন। ১৯৯২ সাল থেকে পলিটব্যুরোর সদস্য। ২০১৫ সালে কোঝিকোড় পার্টি কংগ্রেসে তিনি সিপিএমের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন। ২০০৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বাংলা থেকে নির্বাচিত হয়ে রাজ্যসভার সাংসদ ছিলেন ইয়েচুরি। ঘটনাচক্রে, বাংলা ভাষাতেও সড়গড় ছিলেন ইয়েচুরি। বলতে পারতেন দিব্যি।

সিপিএম সাধারণ সম্পাদকের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন তৃণমূলনেত্রী তথা বাংলার মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সীতারামের মতো রাজনীতিকের মৃত্যু জাতীয় রাজনীতিতে বড় ক্ষতি বলে উল্লেখ করেছেন মমতা। তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সীতারামের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘প্রবীণ সিপিএম নেতার সংসদীয় রাজনীতির বিষয়ে গভীর ধারণা ছিল’

রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুও ইয়েচুরির মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন। তিনি বলছেন, “ছাত্র রাজনীতি থেকে শুরু করে জাতীয় স্তরে প্রভাবশালী কন্ঠ হিসাবে উঠে এসেছিলেন। একটি নির্দিষ্ট মতাদর্শে বিশ্বাসী হলেও সেই মতাদর্শের বাইরেও বহু বন্ধু ছিল তাঁর। আমি হৃদয় থেকে পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা জানাই।”

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইয়েচুরির রাজনৈতিক প্রজ্ঞাকে শ্রদ্ধা জানালেন। তাঁর ভাষায়, “বামপন্থীদের আলোর দিশারী ছিলেন ইয়েচুরি। ভিন্ন মতাদর্শের রাজনীতিবিদদের সঙ্গেও ভালো সমন্বয় সাধন করতে পারতেন তিনি। সাংসদ হিসাবেও নজর কেড়েছেন। ওঁর পরিবারের প্রতি আমি শ্রদ্ধা জানাই।”

লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী ইয়েচুরির ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। ইয়েচুরির প্রয়াণে শোকবিহ্বল রাহুল গান্ধীও। তিনি বলছেন, “সীতারাম ইয়েচুরি আমার বন্ধুস্থানীয়। ভারত নামক ধারণার রক্ষাকর্তা। যার এই দেশ সম্পর্কে সম্যক ধারণা ছিল।” মল্লিকার্জুন খাড়গেও শোকপ্রকাশ করেছেন। তাঁর কথায়, “ইয়েচুরি একজন অনবদ্য সাংসদ। আদর্শ এবং প্রাণবন্ততার সঙ্গে দেশের সেবা করেছেন তিনি।”

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*