স্বাস্থ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠকের পরও কাটল না জট, ১০ দফা দাবি নিয়ে কর্মবিরতিতেই অনড় সাগরদত্তের জুনিয়র ডাক্তারেরা

Spread the love

 

রোজদিন ডেস্ক:-

স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমের বৈঠকের পরও উঠল না সাগরদত্ত হাসপাতালে কর্মবিরতি। জুনিয়র ডাক্তারেরা জানিয়ে দিলেন, প্রতিশ্রুতিতে সন্তুষ্ট নন তাঁরা। হাসপাতালে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত জারি থাকবে কর্মবিরতি। শুক্রবার বিকেলে তাঁরা বলেন, “স্বাস্থ্যসচিব আমাদের কেবল প্রতিশ্রুতিই দিলেন। সিসিটিভি বসানো-সহ আরও বেশ কিছু প্রতিশ্রুতি দিলেন তিনি। কিন্তু এই প্রতিশ্রুতিগুলি আমরা গত এক মাস ধরে শুনে এসেছি। আমরা আর প্রতিশ্রুতিতে ভুলব না। যত ক্ষণ না নিরাপত্তা নিশ্চিত হচ্ছে, আন্দোলন চলবে।”
নিরাপত্তার বিষয়টি দেখভালের জন্য সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল লাগোয়া একটি পুলিশ ফাঁড়ি রয়েছে। কিন্তু শুক্রবার সন্ধ্যায় এই ঘটনার সময় পুলিশকর্মীরা কোথায় ছিলেন? কেন ১০-১৫ জন বহিরাগতকে (রোগীর পরিজন) পুলিশ সরাতে পারল না? সেই নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন সাগর দত্তের জুনিয়র ডাক্তারেরা। তাঁরা জানান, স্বাস্থ্যসচিব সিসিটিভির ব্যবস্থা করা হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন। নিরাপত্তার বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হবে বলেও আশ্বস্ত করেছেন তিনি। কিন্তু জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি, তাঁরা আর ‘প্রতিশ্রুতি’ চান না। চান ‘অ্যাকশন’। কর্মবিরতি জারি থাকবে কি না, সে বিষয়ে তাঁরা বলেন, “যত ক্ষণ না নিরাপত্তা নিশ্চিত হচ্ছে, আমরা কাজে ফেরার সাহস দেখাতে পারছি না।”
সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজে শনিবার দুপুরে কলেজ কাউন্সিল বৈঠকে বসেছিল। জুনিয়র চিকিৎসক কুণাল ধর জানান, তাঁদের নিরাপত্তার দাবিতে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ভাবে জানতে চাওয়া হয়েছিল। ঘটনার দায় কার, সে নিয়েও প্রশ্ন করা হয়। যা ঘটেছে তার নিন্দা করা হলেও কলেজ প্রশাসন বা নিরাপত্তার দায়িত্বে যাঁরা ছিলেন, কেউই ঘটনার দায় স্বীকার করতে চাননি বলে দাবি কুণালের।
বিকালে সাংবাদিক বৈঠকও করেন সাগর দত্তের জুনিয়র ডাক্তারেরা। শুক্রবারের ঘটনার বিবরণ দিতে তাঁরা বলেন, “ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তাকর্মী কোনও বাধা দেননি। মহিলা ডাক্তারদের উদ্দেশে কুকথা বলা হয়েছিল। তাঁদের হাত ধরে টানাটানি করা হয়েছিল। বলা হয়, ‘কিছু হলে আমরা আরজি কর করে দেব।’ কর্তব্যরত সিস্টারদের গায়ে হাত তোলা হয়েছিল।” চিকিৎসকদের খুনের হুমকি দেওয়া হয়েছিল বলেও দাবি জুনিয়র ডাক্তারদের। তাঁদের অভিযোগ, “পুলিশ ও নিরাপত্তাকর্মীরা দাঁড়িয়ে ছিলেন। কেউ কোনও ব্যবস্থা নেননি। এত জন পুলিশকর্মী মিলে ১৫-২০ জনকে সামলাতে পারেননি। ডাক্তারেরা অন্য কক্ষে চলে যাওয়ার পর সেখানেও ধাওয়া করা হয়।”
তাঁদের বক্তব্য, হাসপাতালে চিকিৎসকদের বিশ্রামকক্ষের বাইরে কোনও সিসি ক্যামেরা নেই। সেই কারণে ওই জায়গার ফুটেজ পাওয়া যায়নি। সিসিটিভির ফুটেজে নজর রাখার জন্যও কেউ ছিলেন না বলে অভিযোগ জুনিয়র ডাক্তারদের। সুপ্রিম কোর্ট যে ডাক্তারদের মনে আস্থা ফেরানোর বার্তা দিয়েছে, সে কথাও মনে করিয়ে দেন সাগর দত্তের জুনিয়র ডাক্তারেরা। তাঁরা বলেন, “পুলিশ ফাঁড়িতে অভিযোগ জানাতে গেলে বলা হয়, এখানে এফআইআর করা হয় না। থানায় যেতে বলা হয়। কলেজ কাউন্সিলের বৈঠকে তাঁরা (কর্তৃপক্ষ) স্বীকার করে নিয়েছেন ব্যর্থতার কথা। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোনও জবাব দিতে পারেনি।”
হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে এখনও আশ্বস্ত হতে পারছেন না জুনিয়র ডাক্তারেরা। তাঁদের বক্তব্য, “সুপ্রিম কোর্টে বলা হয়েছিল ১৪ দিনে সিসি ক্যামেরা বসে যাবে। কিন্তু ১২তম দিনে এসে কাজ শুরু হয়েছে। কথা ছিল ৩৬০টি সিসি ক্যামেরা বসানোর। এসেছে ৪০টি। বরাত ডাকা সংক্রান্ত সমস্যার কারণে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়নি।” শুধু তাই নয়, হাসপাতালে সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে ১১৫ জন নিরাপত্তাকর্মী প্রয়োজন বলে মনে করছেন তাঁরা। কিন্তু কর্তৃপক্ষের তরফে ৫৭ জন নিরাপত্তাকর্মীর কথা হয়েছে বলে দাবি আন্দোলনকারীদের।
জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি, সিসিটিভি ফুটেজে নজর রাখার জন্য একজন পুলিশকর্মী থাকার কথা। যাতে কোথাও কিছু ঘটছে কি না, সে দিকে তিনি নজর রাখতে পারেন। কিন্তু শুক্রবার ঘটনার সময় কন্ট্রোল রুমে কেউ ছিলেন না বলে অভিযোগ তাঁদের। তাঁরা বলেন, “হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানতেন না সিসিটিভিতে কে নজরদারি করেন। সেটি জানতেই কর্তৃপক্ষের ৪ ঘণ্টা লেগে গিয়েছিল।” এমনকি ঘটনার পর হাসপাতাল সুপারও প্রথমে আসেননি বলে অভিযোগ তাঁদের। ঘটনার পর জুনিয়র ডাক্তারদের তিনি নাকি জানিয়েছিলেন, রাতে তাঁর ডিউটি নয়। মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক-অধ্যাপকদের একাংশের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ জুনিয়র ডাক্তারদের। তাঁদের অভিযোগ, রোগীর পরিজনেরা হামলা চালানোর প্রায় ৫ ঘণ্টা পরে প্রথম চিকিৎসক-অধ্যাপক এসেছিলেন সেখানে। জুনিয়র ডাক্তারেরা বলেন, “বিকেল ৫টায় ঘটনাটি শুরু হয়েছিল। তাঁরা আসেন রাত ১০টা-সাড়ে ১০টা নাগাদ।”

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*