লালমাটিতে চরাম চরাম আর বাজবে না, ‘ভাই’ নুরুলকে নিয়েই পদত্যাগ করতে চলেছেন অনুব্রত

Spread the love

 

রোজদিন ডেস্ক :-

রাজ্য-রাজনীতির ময়দানে একদা বীরভূম জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের মুখ থেকে শোনা গিয়েছে ‘জ্বালিয়ে দেওয়া’ থেকে শুরু করে ‘পুলিশের উপরে বোম’ মারা ও বিরোধীদের ‘পাঁচন’ দাওয়াই দেওয়ার কথা। রাজ্যে যখন তৃণমূল কংগ্রেসের শাসন-জামানা শুরু হয়নি, অনুব্রত মণ্ডলের ওইসব চোখা চোখা শব্দ তৎকালীন শাসকদের হৃৎকম্পন ধরিয়ে দিয়েছিলো। জেলা তো বটেই রাজ্য-রাজনীতি ছাড়িয়ে অনুব্রত মণ্ডলের সেইসব চোখা চোখা কথাবার্তা বা ‘ডায়লগ’ একটা ভিন্ন মাত্রা এনেছিলো। ২০০০ সালের ২৭ জুলাই নানুরের সূচপুরে যখন ১১ জন ক্ষেতমজুর দিনের আলোয় খুন হয়, তখন তার প্রতিবাদে প্রথম রুখে দাঁড়ান অনুব্রত মণ্ডল। তৎকালীন কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চলে এসেছিলেন নানুরে। শাসকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের আগুন জ্বলেছিলো তখন, সিঙ্গুর, নন্দীগ্রামেরও আগে। আর তখন থেকেই তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনুব্রত মণ্ডল বা তাঁর প্রিয় ভাই কেষ্টর উপরে জেলার সমস্ত দায়িত্ব দিয়ে নিশ্চিন্তে থেকেছেন। কেষ্টও বিমুখ করেননি দিদিকে। এহেন অনুব্রত মণ্ডল গোরুপাচার মামলায় সিবিআইয়ের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে দিল্লির তিহাড় জেলে গেলেও, তাঁর হাতে গড়া সংগঠনের হাল ধরে সমস্ত নির্বাচনেই জিতেছে তৃণমূল কংগ্রেস। তিহাড় জেল থেকে ছাড়া পেয়ে ২৩ সেপ্টেম্বর অনুব্রত তাঁর বোলপুরের বাড়িতে ফিরে আসতেই, মুখ্যমন্ত্রী তড়িঘড়ি বোলপুরে প্রশাসনিক বৈঠক করতে এসে এই ইঙ্গিত দিয়ে দেন যে, তিনি কেষ্টর পাশেই রয়েছেন। কেষ্টর অনুপস্থিতিতে তিনি জেলা সভাপতির পদে অনুব্রত মণ্ডলকে রেখে দল পরিচালনার জন্য কোর কমিটি গঠন করে দেন। অনুব্রত জেলায় ফেরার পর থেকেই তাঁর বাড়িতে দলীয় কার্যালয়ে কর্মী-সমর্থকদের ঢল নামছিলো। সকলেই চাইছিলেন, কেষ্টদা এবার তাঁর পুরনো মেজাজে ময়দানে নামুন। কিন্তু অনুব্রত মণ্ডল জানেন, তিনি জামিন পেয়েছেন। একাধিক মামলা থেকে মুক্তি পাননি। জামিনের সঙ্গে বেশকিছু শর্তও রয়েছে। যা স্মরণে রেখেই চলতে হচ্ছে তাঁকে। এজন্য তাঁর মুখ থেকে কোনও আলটপকা মন্তব্য বের হয়নি। ইতিমধ্যে অনুব্রত মণ্ডল তাঁর রাজনৈতিক কাজ শুরু করে দিয়েছেন। আর তিনি যেখানেই সভা করছেন, সেখানেই উপচে পড়ছে ভীড়। তাঁর কাছে সিউড়ি-২ ব্লকের পুরন্দরপুর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অতীতে যে কোনও নির্বাচনের সময় অনুব্রত মণ্ডল তাঁর জনসভা এখান থেকেই শুরু করতেন। সিউড়ি- ২ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি নুরুল ইসলাম এখানকারই মানুষ। অনুব্রত এবং নুরুল ইসলাম তৃণমূল কংগ্রেস করতে শুরু করেছিলেন একসঙ্গে। তাই সোমবার ২১ অক্টোবর অনুব্রত মণ্ডল যখন নুরুলকে সঙ্গে নিয়ে যখন পুরন্দরপুরে সভা করেন তখন দলীয় কর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস ছিলো চোখে পড়ার মতো। এদিন অনুব্রত আবেগতাড়িত না হয়ে নুরুল ইসলামকে মঞ্চে ‘ভাই’ সম্বোধন করে বলেন, ‘আমরা চতুর্থবারের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাই। তারপরই দু’জনেই দলীয় পদ থেকে সরে দাঁড়াবো’। দলের অভ্যন্তরে যে চোরাস্রোত তোলার চেষ্টা হচ্ছে, সেদিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, আমরা সবাইকে নিয়ে চলতে চাই। জেলায় নতুন করে আলোড়ন সৃষ্টি করতে চাই। আমাদের আর কিছু পাওয়ার নেই। আমরা মানুষের সেবা করবো। জেলাকে সাজিয়ে তুলবো। অতীতের অবস্থান থেকে সরে এসে এদিন অনুব্রত মণ্ডল বলেন, আমি ভুল করলে আপনারা ধরিয়ে দেবেন। সেইসাথে তিনি এই বার্তাটাও দিয়ে দেন যে, আমি কোনও অন্যায় করবো না। কাউকে করতেও দেবো না। অন্যায় করলে কোনওকিছু ভালো হয় না। অনুব্রত মণ্ডলের আজকের এইসব মন্তব্য নিয়ে ইতিমধ্যেই নানা জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*