রোজদিন ডেস্ক :- সম্প্রীতির বাংলায় ভেদাভেদের কোনো জায়গা নেই বলে, আরও একবার সকলকে নিয়ে চলার বার্তা দিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বুধবার পোস্তা বাজারে ৫১তম জগদ্ধাত্রী পুজোর উদ্বোধনে এসে তিনি বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে রাজস্থান, বিহার, উত্তরপ্রদেশ থেকে প্রচুর মানুষ এসে বসবাস করেন। তাঁরা ব্যবসা করেন। কিন্তু তাঁদের কখনও কোনও অসুবিধে হয়নি। তাঁর কারণ আমরা কখনও কারও ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করি না। জাত, ধর্ম নিয়ে আমাদের কোনও মাথাব্যাথা নেই। আমরা সকলকে সঙ্গে নিয়ে চলি। সেজন্যই আমাদের বাংলা হল মিনি ইন্ডিয়া।’
এদিন মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “পুরসভা, বিধানসভা হোক বা লোকসভা – পোস্তা-সহ বড়বাজার এলাকায় ভোট পাই না আমরা। তবে প্রত্যেক বছর আমি এখানে আসি। ভোট চাইতে আসি না। আসি আপনাদের ভালোবাসার টানে। আমরা জাতি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে চলি। আপনারা যে ভাষায় কথা বলুন, যে ধর্মই পালন করুন, সকলে মিলে মিশে থাকুন। বাংলাকে নিজের ঘর ভাবুন।”
এদিন শুধুই বড়বাজারের পোস্তা নয়, এখান থেকেই চন্দননগর ও ভদ্রেশ্বরের বেশ কয়েকটি জগদ্ধাত্রী পুজোর ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। তারপরই বক্তব্য রাখতে উঠে একের পর এক বার্তা দিয়েছেন তিনি। এদিন মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে উঠে এসেছে বড় বাজারে বারবার আগুন লাগার প্রসঙ্গও। একইভাবে উঠে এসেছে কলকাতার দীর্ঘদিনের পুরনো বাড়ি নিয়ে সমস্যার কথা।
দোকান ও ব্যবসার সম্প্রসারণের কারণে ক্রমশই ঘিঞ্জি হয়ে উঠছে বড়বাজার এবং সংলগ্ন এলাকা। প্রায়শই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এদিন পুজো উদ্বোধনে গিয়ে ব্যবসায়ীদের এ নিয়ে সতর্কও করে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুজোর আয়োজক ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘বড়বাজার- জোড়াসাঁকো-পোস্তা এলাকায় কোনও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে আপনারা দমকলকে অহেতুক দোষ দেবেন না। কারণ আসার পথে দেখলাম আপনারা প্রচুর পরিমাণে প্লাস্টিক জমায়েত করে রেখেছেন। অনেক দাহ্য পদার্থ মজুত রয়েছে। ফলে দমকলের গাড়ি ঢুকতে অসুবিধা হয়। আপনাদের অনুরোধ করব, প্লাস্টিক রাখবেন না।’
এদিন বড়বাজারের আগুনের সমস্যা সমাধানে পুলিশকে পোস্তা বাজার মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করার কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ পুরনো বাড়ি নিয়েও এদিন একটি কমিটি করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। দীর্ঘদিন ধরে কলকাতার একটা বড় সমস্যা ভগ্নপ্রায় পুরনো বাড়িতে দিনের পর দিন নাগরিকদের বসবাস করা। এই বিষয়টা নিয়েও এদিন উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “অনেক ঘর পুরনো হয়ে গিয়েছে। আমরা পুরনোকে সম্মান করি। তাদের ছুড়ে ফেলে দিই না। যদি কোথাও পুরসভা নোটিশ দেয় যে, এই বাড়ি যে কোনও সময় ভেঙে পড়তে পারে, এতে জীবনহানির আশঙ্কা রয়েছে, সেই বাড়িতে থাকবেন না। আপনাদের বাড়ি কেউ নিয়ে নিতে পারবে না। নতুন বাড়ি তৈরি করুন। প্রয়োজনে পাঁচতলা বাড়ি তৈরি করে ব্যবসা করুন, আপনারাও থাকুন ।”
এদিন মুখ্যমন্ত্রী জানান, কলকাতা পোর্টের সঙ্গে আপনাদের যে সমস্যা ছিল তা সমাধানের চেষ্টা হয়েছে। টাস্ক ফোর্সেও আপনাদের রাখা হয়েছে। আগে এখানে কেউ কেউ ভয় দেখালেও এখন ভয়ের পরিবেশ নেই। তবুও বলছি, কেউ যদি আপনাদের ভয় দেখায়, সরাসরি পুলিশে অভিযোগ করুন। ব্যবসা আপনাদের অধিকার। এখানে কেউ হস্তক্ষেপ করতে পারে না।”
এদিনের পূজা উদ্বোধনের মঞ্চ থেকে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বদের কটাক্ষ করে মমতা বলেন, “৩৬৫ দিন কাকের মতো আমরা আপনাদের সঙ্গে থাকি। কোকিল আসে কুহু কুহু করে চলে যায়। কিন্তু কাক সারা বছর আপনাদের চোখের সামনে থাকে। তার ডাক আপনাদের পছন্দ নাও হতে পারে। কিন্তু সে তো সারা বছর ধরে আপনাদের সঙ্গে থাকে। প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে তাকে আপনারা গালিও দেন।” মমতার কথায়, “আমি ভোটের জন্য এখানে আসিনি। একমাত্র ৪২ নম্বর ওয়ার্ডে আমার একজন কাউন্সিলর জিতেছে। কিন্তু এখানে পুরসভার তিনটি আসনেই বিজেপিই জেতে। এমনকি লোকসভার নির্বাচনে আপনাদের সমর্থন আমরা পাইনি। আমি ভোটের কথা বলতে এখানে আসিনি। সেটা আপনাদের দেখতে হবে কাকে দেবেন। কিন্তু বাস্তব যাচাই করে দেখবেন, যখন প্রয়োজন হয় তখন কাউকে পাওয়া যায় না।
Be the first to comment