চিরন্তন ব্যানার্জি :- গল্পে ইঁদুর জাল কেটে সিংঘকে বাঁচিয়েছিলো। কিন্তু বাস্তবে ইঁদুরেই কাটা তারে বিপদে পড়ল মনুষ্য সমাজ। ভাবছেন সামান্য ছোটো একটা জীব মনুষ্য সমাজকে কিভাবে বিপদে ফেলল? আসুন শুনে নিই ছোট্টো এক ইঁদুরের জন্য কিভাবে জেরবার হয়ে পড়ল উত্তর কলকাতার একাংশ মানুষ।
শ্মশানঘাটও ইঁদুরের দৌরাত্ম্য থেকে রেহাই পেল না। যার কারণে ব্যাহত কলকাতা পুরনিগমের কাশীপুর মহাশ্মশানে সৎকারের কাজ৷
জানা গিয়েছে, ইঁদুরে বৈদ্যুতিক চুল্লির কন্ট্রোল প্যানেলের তার কেটে দেওয়ায় বিপত্তি। দূষণ নিয়ন্ত্রক মেশিনও কাজ না-করায় চারটি বৈদ্যুতিন চুল্লির পাশাপাশি দু’টি কাঠের চুল্লি সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে ৷ এর জেরে উত্তর কলকাতার একাংশ ও উত্তরের শহরতলি লাগোয়া বরানগর, ডানলপ এলাকার মানুষজন মৃতদেহ দাহ করাতে এসে বিপাকে পড়েছেন৷ পরিষেবা বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তির মুখে পড়তে হচ্ছে মানুষজনকে। সকাল থেকে একের পর এক মরদেহ ফেরত যাচ্ছে। ফলে নিকটবর্তী শ্মাশানগুলিতে বাড়ছে চাপ।
কাশীপুর মহাশ্মশান সূত্রে জানা যাচ্ছে, বুধবার সকাল ৭টা নাগাদ একটি বিকট শব্দ হয়৷ তারপরেই সমস্ত বিদ্যুৎ পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায়৷ খবর দেওয়া হয় কলকাতা পুরনিগমের বৈদ্যুতিন বিভাগ ও সিইএসসি-কে৷ কর্মীরা এসে দেখেন কন্ট্রোল প্যানেলের একাধিক তার ইঁদুরে কেটে দিয়েছে৷ আর শুধু কাটেনি, কোনওভাবে টানাটানির জেরে একটি তার অপরটির সঙ্গে জুড়ে যাওয়ায় শট সার্কিট হয়ে গিয়েই এই বিপত্তি ঘটে৷ সেই কারণে কন্ট্রোল প্যানেল ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাশাপাশি, হাইভোল্টেজ লাইনের সঙ্গে যুক্ত থাকা অন্যান্য যন্ত্রাংশও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরপরই, জরুরি ভিত্তিতে মেরামতির কাজ শুরু হয়েছে৷ তবে, পুরোপুরি ঠিক হয়ে পরিষেবা স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে৷ কলকাতা পুরনিগম সূত্রে খবর, পরিষেবা স্বাভাবিক হতে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হয়ে যেতে পারে৷ তবে, শুধু মেরামতি করলেই পরিষেবা চালু হবে তেমনটা নয়। কারণ, বৈদ্যুতিক চুল্লিগুলি গরম হতে কমপক্ষে ৩ ঘণ্টা সময় লাগবে৷ অর্থাৎ, ফার্নেস স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে গভীর রাত হয়ে যেতে পারে৷ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় দু’টি কাঠের চুল্লিও বন্ধ রাখা হয়েছে৷ কারণ, সেখানকার দূষণ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র বন্ধ আছে।
উল্লেখ্য, বেশ কয়েকবছর ধরে শহর কলকাতায় ইঁদুরের দৌরাত্ম্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রশাসনের কারণে৷ বিশেষত, শহরের বিভিন্ন ছোট-বড় সেতু ও উড়ালপুলগুলি ইঁদুরের গর্তের কারণে দুর্বল হয়ে পড়ছে৷ মাঝেমধ্যেই সেতুর নীচের অংশ বসে যাওয়া কিংবা রাস্তায় ধস নামার মতো ঘটনাও ঘটে। এই নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন খোদ কলকাতার মেয়রও। কিন্তু এবার এই ইঁদুরের জন্য বন্ধই হয়ে গেল কাশীপুর মহাশ্মশানের বৈদ্যুতিক চুল্লি, যার কারণে শেষকৃত্যের মতো জরুরি পরিষেবা থমকে গেল।
Be the first to comment