রোজদিন ডেস্ক:- ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই বেআইনি নির্মাণ ভাঙতে গিয়ে পৌর প্রতিনিধির থেকেই শুনতে হল গালিগালাজ এবং হুমকি। ঘটনার নিন্দা করলেন মেয়রও।
ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মেনে বেআইনি নির্মাণ ভাঙতে গিয়েছিলেন কলকাতা পুরনিগমের ইঞ্জিনিয়াররা। কিন্তু, দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে শুনতে হল কাউন্সিলরের গালিগালাজ, সঙ্গে হুমকিও!
ঘটনাটি ঘটেছে মেটিয়াবুরুজ এলাকায় ১৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত মসজিদ তালাব লেনে। সেখানে একটি বেআইনি বহুতল ভাঙতে যান কলকাতা পুরনিগমের চার ইঞ্জিনিয়ার। সঙ্গে ছিল পুলিশ বাহিনীও৷ অভিযোগ, শুরুতেই ওই বেআইনি বহুতলের বাসিন্দারা বাধা দেওয়া হয়। তবে, পুলিশ দিয়ে তাঁদের আটকানো হয়। এই নিয়ে কলকাতা পুরনিগমের চেয়ারপার্সন এবং মেয়রের কাছে অভিযোগ করবেন বলে জানিয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার সংগঠনের সদস্যরা।
এ নিয়ে কলকাতার মেয়রকে প্রশ্ন করা হলে ইঞ্জিনিয়ারদের পক্ষেই কথা বলতে শোনা যায় তাঁর গলায়। তিনি বলেন, “ইঞ্জিনিয়াররা উঁচুতলার নির্দেশ পালন করেন৷ আমরা জনপ্রতিনিধিরা সুনাম অর্জন করি তাঁদের কাজে। তাঁরা কেবল নির্দেশ পালন করতে গিয়েছিলেন৷ এটা হয়ে থাকলে খুব খারাপ হয়েছে। কোনও জনপ্রতিনিধিই সরকারি কর্মীর সঙ্গে এমন আচরণ করতে পারেন না। আর আমরা চাই না, মেটিয়াবুরুজে আরেকটা বহুতল ভেঙে পড়ুক৷ তাই বেআইনি কাজ আটকানো আমাদের কাজ। আর প্রশাসনের উচিত তাতে সাহায্য করা।”
জানা যায়, শ্রমিকরা ভাঙার কাজ শুরু করার কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে হাজির হন ১৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর ওয়াসিম আনসারি৷ অভিযোগ, শাসকদলের কাউন্সিলর পুরসভার ইঞ্জিনিয়ারদের কাজে বাধা দেন৷ অশালীন ভাষায় তাঁদের গালিগালাজ করতে থাকেন তিনি৷ এরপর তাঁর দলবল নিয়ে সরকারি আধিকারিকদের মারধরের হুমকি দেন তিনি৷ এমনকি তাঁর ফোনে একটি ডকুমেন্ট দেখিয়ে, সেটিকে আদালতের স্থগিতাদেশ বলেও দাবি করেন কাউন্সিলর৷
একইভাবে কলকাতা পুরসভার কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় কংগ্রেস নেতা মোহাম্মদ মোক্তারের বিরুদ্ধেও৷ জানা যায়, পুর আইনের ৪০১ ধারায় ওই বেআইনি নির্মাণের কাজ বন্ধ করার নোটিশ দেওয়া হয়েছিল আগেই।
যদিও, কাউন্সিলর ওয়াসিম আনসারি দাবি, সেটি তাঁর পরিচিত ব্যক্তির বাড়ি ৷ তিনি গিয়েছিলেন বলতে যে, আদালত বাড়ি ভাঙার বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ দিয়েছে ৷ তারপরেও কেন ভাঙা হচ্ছিল! কিন্তু, তিনি কোনও প্রকার হুমকি বা গালিগালাজ করেননি বলে দাবি তৃণমূল কাউন্সিলরের ৷ এই কাউন্সিলর স্বয়ং মেয়র ফিরহাদ হাকিমের ঘনিষ্ঠ বলে জানা গিয়েছে ৷
অন্যদিকে, অভিযুক্ত কংগ্রেস নেতা মোহাম্মদ মোক্তার বলেন, “এর আগের কাউন্সিলর রহমত আনসারি সময় বেআইনি নির্মাণ হয়েছে। তখন ভাঙেনি৷ এখন বেআইনি বলে পুরসভা ভাঙতে এসেছে! যাঁরা থাকেন তাঁরা গরিব মানুষ৷ কোথায় যাবেন? ওরা কোনও কাগজ দেখাতে পারেনি৷”
এই প্রসঙ্গে কলকাতা পুরনিগমের ইঞ্জিনিয়ারদের সংগঠন কেএমসি ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড অ্যালায়েড সার্ভিসেস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মানস সিনহা বলেন, “ভিডিয়ো আমাদের কাছে এসেছে। জনপ্রতিনিধিরা আইন প্রণয়ন করেন, তাঁদের মুখে এই ভাষা। কলকাতার নাগরিকরা কাদের নির্বাচিত করে পাঠিয়েছেন! প্রশাসনের সঙ্গে নাগরিকদের যাঁরা লিয়াজো করবেন, তাঁরা এই ব্যবহার করছেন। আইনকে কার্যকর করতে গিয়ে পুর প্রতিনিধিদের দ্বারা নিগৃহীত হতে হচ্ছে কলকাতা পুরনিগমের ইঞ্জিনিয়ার ও কর্মীদের।”
এ নিয়ে তিনি আরও বলেন, “এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা৷ পুলিশ ছাড়া আমরা একটি বিল্ডিংও ভাঙতে যাই না। বিল্ডিং আইন সকলেই জানেন৷ সেই মতো কাজ করা হয়৷ যে নির্দেশ উচ্চতর কর্তৃপক্ষ পাঠায়, সেটাই বাস্তবায়ন করেন ইঞ্জিনিয়ার৷ এজেন্সি মারফত ভাঙার কাজ হয়৷ সেটা সুপারভাইস করেন ইঞ্জিনিয়াররা৷ আমরা পুর প্রতিনিধির এই আচরণ নিয়ে, মালা রায় কলকাতা পুরনিগমের চেয়ারপার্সন এবং মেয়র ফিরাদ হাকিমকে জানাব।”
Be the first to comment