রোজদিন ডেস্ক,কলকাতা :- বছর তিনেকের বাঘিনী জিনতকে নিয়ে কার্যত নাকানিচোবানি খেতে হচ্ছে বন বিভাগকে। জিনতকে ধরতে ইতিমধ্যেই একাধিক ফাঁদ বা খাঁচা পাতা হয়েছে। তাতে ছাগল, মোষের টোপও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, সেসব এড়িয়ে জিনত ভরসা রেখেছে তার নিজের শিকারের দক্ষতায়! টোপের ছাগলকে পাত্তা না দিয়ে সে গ্রামবাসীর পোষ্য ছাগল মেরে খাচ্ছে বলে দাবি করা হচ্ছে। আর তার ফলে আতঙ্কে জুবুথুবু দশা হয়েছে পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের বাসিন্দাদের। শেষ পাওয়া খবর অনুসারে, গত কয়েক দিন ধরে এখানকার জঙ্গলেই ঘুরে বেড়াচ্ছে জিনত।
সমস্যা হল, জিনতের আগমনে স্থানীয় রাইকার জঙ্গল লাগোয়া আদিবাসী গ্রামগুলির বাসিন্দাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাহত হচ্ছে। ইতিমধ্যেই বাঘিনী জিনতের হাতে তাঁদের একাধিক ছাগল মরেছে বলে অভিযোগ। ফলত, জঙ্গলে আর গবাদি পশু চড়াতে যেতে পারছেন না বাসিন্দারা। উপরন্তু, জিনত গ্রাম লাগোয়া জঙ্গলের চারণভূমি থেকে পোষা ছাগল ধরে নিয়ে যাওয়ায় বাড়ির বাইরে বেরোতেই ভয় পাচ্ছেন তাঁরা।
এই অবস্থায় সুন্দরবনের ধাঁচে গ্রামের বাসিন্দাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রয়াস শুরু করে দিয়েছে বন দফতর। জিনতকে খাঁচায় ভরা যাচ্ছে না। তাই, জঙ্গল লাগোয়া গ্রামকেই মুড়ে ফেলা হয়েছে নিরাপত্তার ‘চাদরে’। সুন্দরবনে যেমন লোকালয়ে বাঘের হানা ঠেকাতে গ্রাম ঘিরে নাইলনের জাল লাগানো হয়, পুরুলিয়ার বান্দোয়ানেও সেটাই করা হয়েছে। একে বলা হয়, ‘নাইলন ফেন্সিং’। এই ব্যবস্থাপনা ইতিমধ্যেই সুন্দরবনে সফল হয়েছে।
জিনতের গলায় অনেক আগেই রেডিয়ো কলার পরানো হয়েছিল। তার ফলে জিপিএস ট্র্যাকিং সিস্টেমের মাধ্যমে তার গতিবিধি জানা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু, গ্রামবাসীর সুরক্ষার স্বার্থে এখন আর শুধুমাত্র জিপিএস নজরদারির উপর ভরসা করে বসে থাকতে চাইছেন না বনাধিকারিকরা। তাঁরা ইতিমধ্যেই বান্দোয়ানের ওই জঙ্গলে মোট ছ’টি স্মার্ট ক্যামেরা বসিয়েছেন।
এছাড়াও, গ্রামবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জঙ্গল লাগোয়া এলাকায় নাইট পেট্রলিং বা রাতের টহলদারি বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে, বাড়ি-বাড়ি ঘুরে প্রচার চালানো হচ্ছে বন দফতরের পক্ষ থেকে। যাতে সকলে সতর্ক থাকেন, সন্ধের পর কেউ বাড়ির বাইরে না বের হন এবং নিজেদের গবাদি পশুগুলি জঙ্গলে চড়াতে না যান। এছাড়াও, অভিজ্ঞ বনকর্মীদের বান্দোয়ানে আনা হয়েছে। যাতে তাঁদের নেতৃত্বেই নিরাপত্তার কাজগুলি চালানো যায়।
এরই মধ্যে বন বিভাগের তরফে সংবাদমাধ্যমকে জানানো হয়েছে, যে পথে জিনত পুরুলিয়ার বান্দোয়ানে পৌঁছেছিল, সেই পথেই সে আবার ফিরতে শুরু করেছে।
Be the first to comment