৭৫ দিনে অভিষেকের ‘সেবাশ্রয়’ থেকে ১২ লক্ষ ৩৫ হাজারের বেশি মানুষ চিকিৎসা পরিষেবা পেল

Spread the love

রোজদিন ডেস্ক, কলকাতা:– ফুটেছে মা-বাবার মুখে হাঁসি, দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেয়েছে বয়স্করা, নতুন করে জীবন পেয়েছে অনেকেই, আবার ভিন রাজ্য থেকে বাংলায় এসে চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে গেছেন অনেকেই। ৭৫ দিনের ‘সেবাশ্রয়’ বাংলার স্বাস্থ্য পরিষেবার নতুন দিশা। তৃণমূল সাংসদ তথা সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মস্তিষ্ক প্রসূত এই মেগা স্বাস্থ্য শিবিরের বৃহস্পতিবার ছিল শেষ দিন। নিজের লোকসভা কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবারের প্রতিটি বিধানসভা ধরে ধরে এই ৭৫ দিন ধরে সাধারণ মানুষের কাছে বিনামূল্যে পৌঁছে দিল চিকিৎসা পরিষেবা। এই ৭৫ দিন ধরে ১২ লক্ষের বেশি মানুষ এই শিবির থেকে চিকিৎসা পরিষেবা পেয়েছেন। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহায়তায় হয়েছে একাধিক বড় বড় অস্ত্রোপচার।

চলতি বছরের ২ জানুয়ারি ‘সেবাশ্রয়’ শিবির চালু করেছিলেন সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ৭৫ দিনে – যার মধ্যে ৭০ দিনের ক্যাম্প এবং ৫ দিনের মেগা ক্যাম্প অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই ৭৫ দিনে পরিষেবা পেয়েছেন মোট ১২ লক্ষ ৩৫ হাজার ৭৭৩ জন। এই শিবির থেকে বিনামূল্যে চিকিৎসা, বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছে এই উদ্যোগের মাধ্যমে। সেবাশ্রয় বহু সংখ্যক শিবিরের মাধ্যমে কেবল বিনামূল্যে ওষুধ নয়, সেই সঙ্গে নিখরচায় ব্যয়বহুল স্বাস্থ্য পরীক্ষা, ইমেজিং পরিষেবা এবং ছানি অপারেশন ও শ্রবণযন্ত্র প্রদানের মতো চিকিৎসা পরিষেবা সুযোগও নিশ্চিত করা হয়েছে। অসহায় ও প্রান্তিক মানুষের বাড়ির দোরগোড়ায় স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দিয়ে, সেবাশ্রয় মাত্র ৭৫ দিনের মধ্যেই সুলভ ও সার্বিক চিকিৎসায় এক আদর্শ মডেল হিসেবে এই শিবির প্রমাণ করেছে।
এই ‘সেবাশ্রয়’ শিবির থেকে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য পরিষেবার কথা জানানো হয় অভিষেকের দফতর থেকে। তাঁর মধ্যে ৯ বছর বয়সী আলতাফের বিশেষ হার্ট সার্জারি সম্পন্ন হয় ১৮ জানুয়ারি, জেআইএমএস হাসপাতালে, সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে। ২০-২৫ জন বিশেষজ্ঞের একটি দল এই অপারেশনে যুক্ত ছিলেন এবং সেবাশ্রয়ের স্বেচ্ছাসেবকরা পরিবারটিকে সম্পূর্ণ সহায়তা করেছেন। এছাড়াও বছর ২১-এর শেখ হাসিবুল কলকাতার অ্যাপোলো হাসপাতালে ১০ ফেব্রুয়ারি একটি জটিল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে স্পাইনাল টিউমার থেকে মুক্তি পান। স্পাইনাল টিউমারের কারণে তাঁর বাম পা অবশ হয়ে পড়েছিল এবং তিনি হুইলচেয়ারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিলেন। পাশাপাশি, তিন বছর বয়সী নেহা মাঝি, যিনি মোটর নিউরন রোগে আক্রান্ত, তাঁর চিকিৎসার তাগিদে সেবাশ্রয় হয়ে উঠেছিল একমাত্র আশার আলো। সাংসদের সহায়তায় পরিবারটি বেঙ্গালুরুর এনআইএমএইচএএনএস
(NIMHANS)-এ শিশু স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শের সুযোগ পান। নেহার নিয়মিত ফিজিওথেরাপি, যাতায়াত ও চিকিৎসার যাবতীয় ব্যবস্থা এই শিবির থেকে করা হয়। একইভাবে, দুই বছর বয়সী আলমিশা খাতুন, যিনি জটিল স্নায়ু রোগে আক্রান্ত ছিলেন, তিনিও NIMHANS-এ শীর্ষস্থানীয় চিকিৎসকদের পরামর্শ পেয়েছেন।
এছাড়াও কৃতি মান্না নামে এক তরুণী, যার শরীরের ডান পাশে অস্বাভাবিক লাম্পস ছিল, তাঁকে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হয় এবং সেখানে বিশেষ ইনজেকশনের মাধ্যমে তাঁর চিকিৎসা শুরু হয়। পরবর্তী সমস্ত চিকিৎসা সেবাশ্রয়ের মাধ্যমে পরিচালিত হয়।
স্তন ক্যান্সারের মত রোগেরও চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হয়েছে বিনামূল্যে। জয়ী মামুদা বিবি মোল্লাকে প্রতি মাসে প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অভিষেক।
সেবাশ্রয়-এর উদ্যোগে দু’জন রোগীর জন্য জীবন বদলে দেওয়া ককলিয়ার ইমপ্ল্যান্ট সার্জারির ব্যবস্থা করা হয়েছে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে সেবাশ্রয়ে ৫০ জন রোগীকে কাস্টমাইজড হিয়ারিং এইড দিয়েছে। বিশেষভাবে তৈরি সিলিকন ইয়ারমোল্ড যুক্ত এই যন্ত্রগুলি শ্রবণ শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি আরামদায়ক ব্যবহারের নিশ্চয়তা দেয়। সেবাশ্রয়ের মাধ্যমে বহু বয়স্ক মানুষকে বিনামূল্যে ছানি অপারেশনের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি যাঁরা চশমা কেনার সামর্থ্য রাখতেন না, তাঁদের দেওয়া হয়েছে বিনামূল্যে চশমা।
শিবিরের শুরুতেই বহু রোগীর নিখরচায় মুখগহ্বরের ক্যান্সার স্ক্রিনিং করানো হয় এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ প্রদান করা হয়।
সাধারণত বেসরকারি ক্লিনিকে প্রায় ২০০০ টাকা খরচ সাপেক্ষ বোন মিনারেল ডেনসিটি টেস্ট সেবাশ্রয় শিবিরে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে করা হয়েছে। এছাড়াও ইউএসজি, ইসিজি ও এক্স-রে-র মতো গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার সুবিধাও এই শিবিরগুলিতে উপলব্ধ ছিল।
ডায়মণ্ড হারবারের বাসুলডাঙার এক সাত বছরের শিশু আচমকাই কয়েন গিলে ফেলে। সেবাশ্রয়ের তৎপরতায় সফলভাবে তা বের করা হয় এবং শিশুটির প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হয়।
পাশাপাশি রাজস্থানের বাসিন্দা আশা দেবী (৫৮) গঙ্গাসাগর মেলায় আসার সময় সেবাশ্রয় শিবির থেকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সহায়তা পেয়েছেন। বাংলায় কর্মরত উত্তরপ্রদেশের এক পরিযায়ী শ্রমিকও এই শিবির থেকে চিকিৎসা করিয়েছেন।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*