দীপক আঢ্যঃ
মুখ ভার করে বসে আছে ব্রতীন। ব্রতীন বন্দ্যোপাধ্যায়। মফঃস্বল কলেজের সমাজ বিদ্যার অধ্যাপক। সামনের সপ্তাহে জামাই ষষ্ঠী। শ্বশুর বাড়ি থেকে ইতি মধ্যে বার কয়েক ফোন এসেছে নিমন্ত্রনের বার্তা নিয়ে।গত সপ্তাহে শ্বশুর মশায়ও হঠাৎ এসে একবার বলেও গেছেন। হ্যাঁ, না কিছু বলেনি ব্রতীন। সৌমী কে অনেক বার বলেছে, ‘একাই যাও না , মেয়েটাকে নিয়ে। আমি তো আর বাধা দিচ্ছি না। নিজে তো দেখতেই পাচ্ছ কত কাজ পেণ্ডিং আছে। এর মধ্যে একটা দিন নষ্ট করা মানে…’। নিশ্চুপ সৌমী। অবাক হয় ব্রতীন। এই সময় তার চোখের ভাষা , এগিয়ে দেয়া চায়ের কাপের শব্দ আর চাল-চলনের মধ্যে তো ঝড়ের ইঙ্গিত থাকার কোথা অথচ আজ তা কেমন অনুপস্থিত।
রাত এগারটা তিরিশ । বেড শিট টা গায়ের উপর টেনে শুতে শুতে সৌমী জিজ্ঞাসা করল, ‘তুমি কি সত্যিই কাজের চাপে যাবে না, না কি যখন থেকে জেনেছ বাবার ওষুধের দোকানের আড়ালে নিষিদ্ধ ওষুধের ব্যাবসা আছে? …
‘সৌমী!’ ব্রতীনের গলার আওয়াজ অনেক টা আর্তনাদের মতো শোনাল। ভালো লাগেনা এসব কথা শূনতে। হাজার হলেও উনি তোমার বাবা। আমাদের নিজের লোক!
-দশ বছর বিয়ে হয়েছে আমাদের। তোমাকে আমি তোমার নিজের থেকেও ভালো করে চিনি। বল, নৈতিকতায় আটকাচ্ছে।
ব্রতীন বিস্মিত হয়। সৌমীর সিক্সথ সেন্স যে ভীষণ তীব্র তা সে জানে। তবুও…
-হঠাত তোমার এরকম ভাবনার কারন কী জানতে পারি?
-হুঁ। গম্ভীর হয়ে উত্তর দেয় সৌমী। সত্যিই আমি এই ভাবে ভাবতাম না যদি না আজ তোমার লেখাটা পড়তাম।
– কোন লেখাটা?
-ওই যে এবছর লন্ডনের সাউথ বাঙ্কে জয়পুর লিটারেরী ফেস্টিভ্যাল নিয়ে লেখা টা।
– হ্যাঁ, কিন্তু সে তো কোথাও বের হয়নি। এখনও আনফিনিশড্ ।
-আজ তুমি কলেজে গেলে ম্যানুস্ক্রিপ্ট টা পড়ছিলাম। কিভাবে ‘বেদান্ত’ দের ‘ব্লাড মানি’র সাহায্যে পৃথিবী কে লুঠ করে – ইকোলজি কে ধ্বংস করে নীতি- নৈতিকতা কে বিসর্জন দিয়ে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ লেখক, ক্রিটিক দের নিয়ে ফেস্টিভ্যাল করছে বছর বছর। তোমার লেখাটা সত্যিই অনবদ্য।
-হ্যাঁ, সত্যিই আমিতো ওদের মতো অত বড় কেউ নই। তবুও মনে হয়েছে এটা সত্যিই- বেদান্ত দের পয়সায় লিটারেরী ফেস্টিভ্যাল আমাদের লিটারেচার কে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে না- বরং আমাদেরকে-আমাদের পৃথিবীকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ধ্বংসের দিকে।
‘হ্যাঁ, অনেক টা আমার বাবার ব্যাবসার মতো। তাই না?’ বলতে বলতে গলা ধরে আসে সৌমীর।
Be the first to comment