রেখা
জন্মদিন : ১০ অক্টোবর ১৯৫৪, স্থান- চেন্নাই
৬৩ বছরে পা রাখলেন বলিউডের সোনালী যুগের তারকা অভিনেত্রী ভানুরেখা গণেশন। রেখা নামেই যাঁকে চেনেন দেশ-বিদেশের মানুষ। তাঁর চলচ্চিত্র জীবন শুরু হয় ১৯৬৬ সালের ‘রঙ্গোলা রত্নম’ নামে একটি তেলুগু ছবির মাধ্যমে। বলিউডে যাত্রা শুরু করেন ১৯৭০ সালে। ছবির নাম ‘শাওন ভাদো’। তারপর থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি রেখাকে। বিভিন্ন ভূমিকায় তাঁর দক্ষ অভিনয় এনে দিয়েছে আকাশছোঁয়া সাফল্য। দো অনজানে ছবিতে অমিতাভ বচ্চনের সাথে অভিনয় করে দর্শকের মনে আজও চিরস্থায়ী জায়গা করে নিয়েছেন রেখা। ছবিটি বাণিজ্যিকভাবেও সাফল্য পায়। উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে রয়েছে মুকাদ্দর কা সিকন্দর, কাহানি কিসমত কি, সিলসিলা, ঘর, খুবসুরত, উমরাও জান, এক হি ভুল, জীবনধারা, মুঝে ইনসাফ চাহিয়ে, কলিযুগ, ইজাজত, উৎসব, খুন ভরি মাঙ ইত্যাদি। তাঁর অর্ধ শতকের ফিল্মি জীবনে ১৮০টির বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। ২০১৫ সালে সমিতাভ ছবিতে সর্বশেষ দেখা গিয়েছিল এই পদ্মশ্রী প্রাপ্ত অভিনেত্রীকে। অভিনয়ের পাশাপাশি রাজ্যসভার সাংসদও হয়েছেন রেখা। আজ তাঁর জন্মদিনে চিরসবুজ রেখাকে রোজদিন জানায় শুভেচ্ছা।
আর কে নারায়ন
জন্মদিন : ১০ অক্টোবর ১৯০৬, স্থান- চেন্নাই
রাসিপুরম কৃষ্ণস্বামী আইয়ার নারায়ণস্বামী ওরফে আর কে নারায়ন ইংরেজি ভাষায় ভারতীয় লেখকদের মধ্যে অত্যন্ত বলিষ্ঠ লেখনীর অধিকারী ছিলেন। এ রকমও বলা হয় যে, ভারতীয় সাহিত্যে ইংরেজি ভাষায় প্রথম যুগের তিন জন পুরোধা ব্যক্তিত্বের অন্যতম ছিলেন আর কে নারায়ণ। কাল্পনিক দক্ষিণ ভারতীয় শহর ‘মালগুড়ি’-র পটভূমিকায় লেখা তাঁর রচনাগুলির জন্য তিনি অমর হয়ে আছেন। আজও আমাদের কানে বাজে, ‘তা না না না না না’ দূরদর্শনে হওয়া মালগুড়ি ডেজ-এর মনতাজ। দিদিমার দেওয়া নাম কুঞ্জাপ্পা তাঁকে ডাকতেন পরিবারের সবাই। এই দিদিমার কাছেই পাটিগণিত, পুরাণ, ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীত, সংস্কৃত ভাষা শিক্ষা পেয়েছিলেন তিনি। একাধিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। এর মধ্যে লুথারান মিশন স্কুল, সিআরসি হাই স্কুল ও খ্রিস্টান কলেজ হাই স্কুল। প্রথম জীবনে তিনি চার্লস ডিকেন্স, উড হাউস, আর্থার কোনান ডয়েল ও টমাস হার্ডির রচনা থেকে অনুপ্রেরণা লাভ করেছেন। ১৯২৬ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি মহারাজা কলেজ অব মাইসোর-এ যোগদান করেন। কিন্তু মন চাইত অন্য কিছু। তাই চাকরি ছেড়েদিলেন তিনি। বাড়িতে বসে উপন্যাস রচনা করতে শুরু করলেন। যদিও তিনি প্রথম যে বইটি লেখেন তার বিষয়বস্তু ছিল একটি বই-এর সমালোচনা। এরপর বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় গল্প লিখতেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস হলো ‘স্বামী অ্যান্ড ফ্রেন্ডেস’। প্রথমদিকে প্রকাশকরা এই লেখা ছাপতে চাননি। এখানেই তিনি মালগুড়ি নামে একটি শহরের বর্ণনা করেছিলেন। পরবর্তীতে এই বইটি সমালোচকদের উচ্চ প্রশংসা পায়। কিন্তু বইটির বিক্রি তেমন হয়নি। তাঁর অন্যান্য লেখার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— ‘দ্য ব্যাচেলার অব আর্টস’, ‘দ্য ডার্ক রুম’, ‘দ্য ইংলিশ টিচার’, ‘মিস্টার সম্পত’, ‘ওয়েটিং ফর দ্য মহাত্মা’ প্রভৃতি। অবশ্য তাঁর গুরুত্বপূর্ণ সংকলন ‘মালগুড়ি ডেজ’-এর নাম না করলে তাঁর সৃষ্টির কথা লেখা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় ছিল তাঁর অবাধ বিচরণ। লক্ষ্মণ ছিলেন তাঁর ভাই। ২০০১ সালে ১৩ মে ৯৪ বছর বয়সে প্রয়াত হন আর কে নারায়ন। জন্মদিনে রোজদিনের শুভেচ্ছা।
হ্যারল্ড ওয়ালডেন
জন্মদিন : ১০ অক্টোবর ১৮৮৭, স্থান- আম্বালা, ভারত
হ্যারল্ড আদ্রিয়ান ওয়ালডেন ১৯২১ সালে ‘সামার অলিম্পিকে’ সোনা জয়ী দলের সদস্য। ওয়ালডেন হ্যালিফ্যাক্স টাউন, ব্র্যাডবড সিটি এবং আর্সেনাল ক্লাবের হয়ে ফুটবল খেলেছেন। এ ছাড়াও তিনি গ্রেট ব্রিটেন ফুটবল টিমে খেলেছেন। একজন সেন্টার ফরওয়ার্ড ফুটবলারই শুধু নন, তিনি একজন গায়কও। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, চিন ও ভারতে তিনি গানের অনুষ্ঠান করেছেন। ১৯৫৫ সালের ২ ডিসেম্বর লিডস রেলস্টেশনের কাছে হঠাৎ হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর জন্মদিনে রোজদিনের শ্রদ্ধা।
অশোককুমার সেন
জন্মদিন : ১০ অক্টোবর ১৯১৩ স্থান- বাংলাদেশ
অশোককুমার সেন ছিলেন একজন ব্যারিস্টার, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। ভারতীয় গণতন্ত্রে যে সমস্ত সাংসদ তাঁদের দক্ষতার জন্য উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছেন তার মধ্যে অশোককুমার সেন-এর নাম অবশ্যই করতে হবে। পেশায় তিনি ছিলেন আইনজীবী। তাঁর বাবা ছিলেন ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট। বড়ো ভাই সুকুমার সেন ছিলেন আইসিএস। এইরকমই এক শিক্ষিত পরিবারে সুযোগ্য উত্তরাধিকারী ছিলেন অশোককুমার সেন। প্রথম জীবন ওড়িশার সম্বলপুর হাই স্কুলের ছাত্র ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে ইংল্যান্ডে শিক্ষালাভ করেন। লন্ডন স্কুল অব ইকনমিক্স-এ শিক্ষাগ্রহণ তাঁর জীবনকে এক আলাদা মাত্রা দেয়। যদিও আইন ছিল পছন্দের বিষয়। তাই বিদেশে থাকাকালীনই তিনি সম্মানীয় গ্রেজ ইন থেকে আইন বিষয়ে শিক্ষালাভ করেন। ব্যারিস্টার হয়ে দেশে ফিরে তিনি সিটি কলেজে ল-এর শিক্ষকতার কাজে আত্মনিয়োগ করেন। পরবর্তীতে কলকাতা হাইকোর্টে ল প্র্যাকটিস করা শুরু করেন। মাত্র ২৬ বছর বয়সে কমার্শিয়াল ল নিয়ে তিনি একটি বই লেখেন। ১৯৪৩ সালে ভারতের চিফ জাস্টিস সুধীররঞ্জন দাসের কন্যা অঞ্জনা দাসের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। এ তো গেল ব্যক্তিগত জীবন। তাঁর পেশাগত জীবনের সাফল্যও রীতিমতো ঈর্ষণীয়। নেহেরু মন্ত্রিসভার তিনি ছিলেন আইনমন্ত্রী। আইনমন্ত্রী হিসেবে তাঁর খ্যাতি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। এর পাশাপাশি কমিউনিকেশন, মাইন ও ইস্পাত দফতরেরও মন্ত্রী ছিলেন তিনি। বহু বছর তিনি ইউনাইটেড নেশন এবং বিদেশে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তিনি রাজীব গান্ধীর মন্ত্রিসভাতেও আইনমন্ত্রী ছিলেন। নিজের লোকসভা সর্বোচ্চ জেতার রেকর্ড ছিল তাঁর। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসেবেও তিনি রেকর্ড তৈরি করেন। সাত জন প্রধানমন্ত্রীর অধীনে তিনি মন্ত্রিত্ব করেন। সুপ্রিম কোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি। আইএফএ-এর সভাপতি হয়েছিলেন তিনি। এ ছাড়াও তিনি পশ্চিমবঙ্গ সেবা সমিতি নামে একটি চ্যারিটেবল অর্গানাজেশন চালাতেন। কলকাতা ল জার্নালের এডিটর ছিলেন তিনি। তাঁর তৈরি ল লাইব্রেরি বিশ্ব বিখ্যাত, কারণ সারা বিশ্বে আইন বিষয়ক এরকম লাইব্রেরি দ্বিতীয়টি নেই। ২১ সেপ্টেম্বর ১৯৯৬ নতুন দিল্লিতে ৮২ বছর বয়সে প্রয়াত হন তিনি। রোজদিন-এর পক্ষ থেকে তাঁর জন্মদিনে শ্রদ্ধা।
শ্রীপাদ অমৃত ডাঙ্গে
জন্মদিন : ১০ অক্টোবর ১৮৯৯, স্থান- বোম্বে
কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়ার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন শ্রীপাদ অমৃত ডাঙ্গে। ভারতীয় ট্রেড ইউনিয়নেরও পথিকৃৎ ছিলেন তিনি। ব্রিটিশ শাসনকালে তিনি গ্রেফতার হন এবং তাঁর ১৩ বছরের জেল হয়। ভারতবর্ষের স্বাধীনতা লাভের পর তিনি মুক্ত হন। কমিউনিস্ট পার্টি ভাগ হয়ে যাওয়ার পরও তিনি সিপিআই-তেই ছিলেন। ১৯৭৮ পর্যন্ত সিপিআই-এর জাতীয় চেয়ারম্যান ছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে দলের বেশিরভাগ সদস্য ডাঙ্গের পার্টি লাইনের বিরুদ্ধে চলে যান। কারণ তিনি কংগ্রেস এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে সমর্থন করেছিলেন। ১৯৮১ সালে সিপিআই থেকে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়। তখন তিনি অল ইন্ডিয়া কমিউনিস্ট পার্টি (এআইসিপি)-তে যোগদান করেন। পরবর্তীতে ইউনাইটেড কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়ার সদস্য হন। শুধুই যে একজন কমিউনিস্ট নেতা বা ট্রেড ইউনিয়ন লিডার ছিলেন তাই নয়, তিনি ছিলেন একজন বিশিষ্ট লেখক। সোশ্যালিস্ট পত্রিকার সূচনা তাঁর হাত ধরেই হয়। এটি ছিল ভারতের প্রথম সোশ্যালিস্ট সাপ্তাহিক পত্রিকা। মহারাষ্ট্র রাজ্যের তৈরি হওয়াতে ডাঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি বোম্বে সেন্ট্রাল সাউথ কেন্দ্র থেকে সাংসদও হয়েছিলেন। তাঁর স্ত্রী উষা থাই ডাঙ্গে। ২১ মে ১৯৯১ তিনি প্রয়াত হন। রোজদিন-এর পক্ষ থেকে তাঁর জন্মদিনে শ্রদ্ধা।
তথ্য সংগ্রহ : মাসানুর রহমান
Be the first to comment