কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়
জন্মদিন : ১২ অক্টোবর ১৯২৪ স্থান- সোনামুখী, বাঁকুড়া
তিনি ছিলেন একজন স্বনামধন্য ভারতীয় বাঙালি রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী ও শিক্ষিকা, মোহর নামে তিনি বিশেষ পরিচিত ছিলেন। রবীন্দ্রসংগীত জগতের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ শিল্পীদের মধ্যে কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় অন্যতম। বিশেষত টপ্পা অঙ্গের রবীন্দ্রসংগীতে তিনি ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী এক গায়িকা। রবীন্দ্রসংগীত ছাড়া অতুলপ্রসাদের গানেও তিনি সমান পারদর্শী ছিলেন। জীবনের অধিকাংশ সময় শান্তিনিকেতনে অতিবাহিত করলেও তাঁর জনপ্রিয়তা পশ্চিমবঙ্গের সীমানা ছাড়িয়ে বাংলাদেশেও পরিব্যাপ্ত ছিল।
১৯৩৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রথম ও ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় রেকর্ড বের হয় তাঁর গানের, তারপর ১৯৪২ সালে এইচএমভি থেকে তাঁর প্রকাশিত রেকর্ডে ধৃত হয় ওগো তুমি পঞ্চদশী ও এসো শ্যামলসুন্দর গান দুটি। এই বছর থেকেই এইচএমভি-র নিয়মিত শিল্পী হন কণিকা। প্রায় ৫৫ বছর এইচএমভি থেকে তাঁর রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছিল। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা উপলক্ষে দেবব্রত বিশ্বাস, জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র, সুচিত্রা মিত্র ও সুপ্রীতি ঘোষের সঙ্গে তাঁর গানও প্রকাশিত হয়; ১৯৬২ থেকে ১৯৮৯ পর্যন্ত কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ৫৯টি রবীন্দ্রসংগীত রেকর্ড প্রকাশিত হয়। এগুলির মধ্যে ছিল— সিজনাল সংস অব টেগোর, বর্ষামঙ্গল, বসন্ত, যায় দিন শ্রাবণ দিন যায়, ভানুসিংহের পদাবলী, পথ ও পথিক (হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ও সুচিত্রা মিত্রের সঙ্গে), পূজা, প্রেম ও প্রকৃতি, প্রেমের মিলন দিনে, ও মোর দরদিয়া, কণ্ঠে নিলেম গান, আজি এ আনন্দসন্ধ্যা (সুচিত্রা মিত্রের সঙ্গে), নব নব রূপে, বাণী তব ধায়, একটি রক্তিম মরীচিকা, একলা চলো রে, বাজে করুণ সুরে, গান গেয়ে মোর কেটেছে দিন ইত্যাদি। ১৯৮০ পর এইচএমভি থেকে তাঁর ৪০টি ক্যাসেটও প্রকাশিত হয়। অদ্যাবধি তাঁর বেশ কয়েকটি কমপ্যাক্ট ডিস্কও প্রকাশিত হয়েছে— কণ্ঠে নিলেম গান (১৯৯৪), বিদায়বেলার মালাখানি (১৯৯৮), পূজা ও প্রেম (১৯৯৯), গোল্ডেন আওয়ার (২০০০), এ পরবাসে রবে কে (২০০০, রাগা মিউজিক থেকে), আছ অন্তরে চিরদিন (২০০২), অধরা মাধুরী (২০০৭) ইত্যাদি। এ ছাড়াও বিভিন্ন চলচ্চিত্রে রবীন্দ্রসংগীত ও অন্যন্য ধারার গানও তিনি গেয়েছেন। কলকাতা পৌরসংস্থা তাঁর সম্মানে কলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল ও রবীন্দ্র সদনের মধ্যবর্তী ময়দানের একাংশে একটি সুরম্য সুবৃহৎ উদ্যান উৎসর্গ করেছেন। ৫ এপ্রিল ২০০০ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
তাঁর সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন—
‘আমার নামের আখরে জড়ায়ে আশীর্ব্বচনখানি
তোমার খাতার পাতায় দিলাম আনি’
জন্মদিনে রোজদিন-এর শ্রদ্ধা।
কামিনী রায়
জন্মদিন : ১২ই অক্টোবর ১৮৬৪ স্থান- বাসণ্ডা বাকেরগঞ্জ, বরিশাল
তিনি একজন প্রথিতযশা বাঙালি কবি, সমাজকর্মী এবং নারীবাদী লেখিকা ছিলেন। তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের প্রথম মহিলা স্নাতক ডিগ্রীধারী ব্যক্তিত্ব। তিনি একসময় ‘জনৈক বঙ্গমহিলা’ ছদ্মনামে লিখতেন। ১৮৮৬ সালেই তিনি বেথুন কলেজের স্কুল বিভাগে শিক্ষয়িত্রীর পদে নিযুক্ত হন। পরবর্তীকালে ওই কলেজে অধ্যাপনাও করেছিলেন। তাঁর লেখা উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে— আলো ও ছায়া (১৮৮৯), নির্মাল্য (১৮৯১), পৌরাণিকী (১৮৯৭), মাল্য ও নির্মাল্য (১৯১৩), অশোক সঙ্গীত (সনেট সংগ্রহ, ১৯১৪), অম্বা (নাট্যকাব্য, ১৯১৫), দীপ ও ধূপ (১৯২৯), জীবন পথে (১৯৩০), একলব্য, দ্রোণ-ধৃষ্টদ্যুম্ন, শ্রাদ্ধিকী ইত্যাদি। ১৯২৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক কামিনী রায়কে ‘জগত্তারিণী স্বর্ণপদক’ প্রদান করে সম্মানিত করা হয়। ১৯৩০ সালে বঙ্গীয় লিটারারি কনফারেন্সের সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন এবং ১৯৩২-৩৩ সাল পর্যন্ত তিনি বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদেরও সহ-সভাপতি ছিলেন। জীবনের শেষ ভাগে তিনি হাজারীবাগে বাস করেছেন। ২৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৩৩ তাঁর জীবনাবসান ঘটে। জন্মদিনে রোজদিন-এর শ্রদ্ধা।
সুব্রত মিত্র
জন্মদিন : ১২ই অক্টোবর, ১৯৩০ স্থান- কলকাতা
অপু, ত্রয়ী-সহ সত্যজিৎ রায়ের বেশ কিছু চলচ্চিত্রে অসামান্য কাজের জন্য ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম ক্যামেরাশিল্পী বা চিত্রগ্রাহক সুব্রত মিত্র খ্যাতিলাভ করেন। সুব্রত মিত্র এক বাঙালি মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। বিদ্যালয়ে পড়ার সময়েই তিনি সহপাঠীদের সাথে কাছাকাছি সিনেমা হলে ব্রিটিশ এবং হলিউডের চলচ্চিত্র দেখতেন। কলেজে পড়ার সময়ে তিনি ঠিক করেন, তিনি একজন আর্কিটেক্ট বা চিত্রগ্রাহক হবেন। তিনি ক্যামেরা সহকারীর কোনও কাজ না পেয়ে বিজ্ঞানে ডিগ্রির জন্য পড়াশোনা করতে থাকেন। ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে বিখ্যাত ফরাসি চলচ্চিত্র পরিচালক জঁ রনোয়ার দ্য রিভার ছবি তুলতে কলকাতায় আসেন। সুব্রত মিত্র এই ছবিতে কাজ পাওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। কিন্তু তিনি তাঁর বাবার সাহায্যে শুটিং দেখবার অনুমতি লাভ করেন। সেই সময়ে তিনি শুটিং-এর বিশদ বিবরণ এবং ছবি আঁকেন যার মধ্যে আলো, ক্যামেরা এবং অভিনেতাদের নড়াচড়া সমস্ত কিছুর বর্ণনা ছিল। একদিন চিত্রগ্রাহক ক্লদ রনোয়ার শুটিং-এর ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য তাঁর বিবরণ দেখতে চান। এরপর তিনি চিত্রগ্রাহক ক্লদ রনোয়ারের সান্নিধ্যে আসেন। এ ছাড়াও তিনি এই ছবিতে কাজ করার সময়ে সত্যজিৎ রায়ের সাথে পরিচিত হন। যিনি এই ছবিতে পরিচালক জঁ রনোয়ারের সাহায্যকারী হিসাবে ছিলেন। ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে সত্যজিৎ রায়ের পথের পাঁচালী চলচ্চিত্রের চিত্রগ্রাহক হিসাবে মাত্র বাইশ বছর বয়সে তাঁর চলচ্চিত্র জীবনের সূচনা হয়। চলচ্চিত্রের ক্যামেরার ব্যবহার সম্পর্কে এর আগে তাঁর কোনও প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা ছিল না। দ্য রিভার ছবিতে পর্যবেক্ষক হিসাবে তাঁর অভিজ্ঞতা নিয়েই তিনি পথের পাঁচালীর চিত্রগ্রাহকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পথের পাঁচালী থেকে নায়ক—সত্যজিৎ রায়ের এই দশটি ছবি ছাড়াও তিনি অন্য অনেক পরিচালকের সঙ্গে বাংলা, ইংরেজি এবং হিন্দি ছবিতে কাজ করেছেন। বাংলা চলচ্চিত্রকে পরিণত এবং আন্তর্জাতিক করে তোলার ক্ষেত্রে অন্যতম পথিকৃৎ তিনি। ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহকের জাতীয় পুরস্কার এবং ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে সারাজীবনের কাজের স্বীকৃতি হিসাবে কোডাক পুরস্কার লাভ করেন। শেষজীবনে তিনি সত্যজিৎ রায় ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইন্সটিটিউটের সিনেমাটোগ্রাফির অধ্যাপক ছিলেন। ২০০১ সালের ৭ ডিসেম্বর ৭০ বছর বয়সে তিনি প্রয়াত হন। রোজদিন-এর পক্ষ থেকে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা।
প্রতিমা গোরী বেদী
জন্মদিন : ১২ অক্টোবর ১৯৪৮ স্থান- দিল্লি
প্রতিমা বেদীর বাবা লক্ষীচাঁদ গুপ্তা হরিয়ানার কার্নাল জেলার আগরওয়াল পরিবারের সাথে ব্যবসায় যুক্ত ছিলেন, তাঁর মা রেবা ছিলেন একজন বাঙালি। বাড়ির অমতে বিয়ে করায় তাঁর বাবাকে বাড়ি ছাড়তে হয়েছিল, তারপর তিনি কাজ শুরু করেন দিল্লিতে। ১৯৬০-এর পর তিনি একজন মডেল হিসাবে সুখ্যাতি লাভ করেন। ১৯৭৪ সালে মুম্বাইয়ে সিনেব্লিজ নামক বলিউড ম্যাগাজিনে তাঁকে দেখা যায়। মডেলিং জীবনেই তাঁর সাথে আলাপ হয় কবির বেদীর এবং পরে ১৯৭৯ সালে তাঁর সাথে কবির বেদীর বিয়ে হয়। কেবল মডেলিং নয় তিনি ছিলেন ভারতীয় ক্যাল্কিকাল নৃত্যেও বিশাল সুখ্যাতি অর্জন করেন। ১৯৯০ সালে বেঙ্গালুরুতে তিনি ‘নৃত্যগ্রাম’ নামে একটি বিশাল প্রতিষ্ঠান তৈরি করেন, এটি ছিল ভারতবর্ষে প্রথম নৃত্য গুরুকুল যেখানে বিনা খরচে ভারতীয় ক্লাসিকাল নৃত্য শেখানো হতো। ১৯৯৮ সালের ১৮ আগস্ট ভারতের মালপায় মাত্র ৪৯ বছর বয়সে তিনি প্রয়াত হন। রোজদিন-এর পক্ষ থেকে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা।
Be the first to comment