মৌসুমী প্রামাণিক(মৌসান)-
অনিরুদ্ধ ও পারমিতার মধ্যবিত্ত সংসারে কড়া অনুশাসনের মধ্যে বড়ো হচ্ছিল অনুমিতা। এমনকি দোলের দিন রঙ খেলতে যাবার কোন অনুমতি ছিল না তার। তাই সে বড়ো মনমরা হয়েই বসে থাকতো ঐ দুটো দিন। ওদের পাড়ায় দুদিন ধরে রঙ খেলা চলতো। সামনের বস্তিতে কয়েকঘর বিহারী পরিবার বাস করতো; তাদের সৌজন্যে দোলের পরেরদিন ছোটা হোলি অনুষ্ঠিত হতো। দোলের আগের দিন সন্ধ্যেবেলায় বস্তির ছেলে গুলো কোথা থেকে শুকনো কাঠ, পাতা জড়ো করে তাদের দোতলা বাড়ির সামনেই লম্বা ম্যাড়াপ বেঁধে আগুন ধরিয়ে দিত। তারপর “হোলি হে” বলে চিৎকার করে রঙ বে রঙের আবির আকাশের দিকে ছুড়ে দিত। বাড়ি বাড়ি বাতাসা বিলি করে গুরুজনদের পায়ে গোলাপী আবির মাখিয়ে দিত। পারমিতাও ঘর নোংরা হবে বলে দোতলা থেকে নীচে নেমে আসতেন আবির ও বাতাসা নিতে। তারপর ছেলেগুলো খুশি খুশি নিজ নিজ ঘরে ফিরে যেত।
পরেরদিন একটু দেরীতেই জাগতো পাড়াটা। ছুটির দিন বলে কথা। সকাল ন’টা থেকে এ বাড়ি সেবাড়িতে রং খেলা শুরু হয়ে যেত। অনুমিতা ঘরে বসে থাকতো মনমরা হয়ে। যেই হৈ হৈ রৈ রৈ কলরব উঠতো সে ছুটে যেত দোতলার ব্যালকনিতে। দেখত আট ফিট চওড়া রাস্তায় তার বয়সী ছলেমেয়েরা, তাদের বাড়ীর বৌদিরা কত মজা করে রঙ খেলছে। নিমেষের মধ্যে একটার পর একটা রঙীন বালতির জল একে অন্যের মাথায় ঢেলে দিচ্ছে। বাধা দিয়েও কেউ পার পেত না। ছয় সাত বছরের বাচ্চাগুলো হাতে পিচকারী আর রঙীন জল ভর্তি বেলুন একে অন্যের গায়ে ছুড়ে মারত। দেখতে দেখতে একা একাই খিলখিল করে হেসে ফেলত অনুমিতা। নীচ থেকে একটি বাচ্চা মেয়ে বলতো, “অনুদিদি…এসো…রঙ খেলবে না?” ঘরের ভিতর থেকে পারমিতা ধমকে উঠতেন, “ অনু ভিতরে চলে আয়…রঙ বেলুন ছুঁড়ে দেবে কিন্তু…” মাথা নেড়ে ব্যাজার মুখ করে অনুমিতা ঘরের ভিতর ঢুকে আসতো।
পাশের বাড়ির ভাড়াটে পরিবারগুলিতে তার বয়সী তিনজন মেয়ে ছিল। কৃষ্ণা, যুথিকা ও মিষ্টি। কৃষ্ণার দাদার বন্ধুরা ঐ দিন ওদের বাড়িতে আসতো রঙ খেলতে। কাপড় তুলতে গিয়ে বেশ কয়েকবার কৃষ্ণাকে তার দাদার একজন বন্ধুর সঙ্গে ছাদে ফিসফিস করে কথা বলতে দেখেছে। মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী অনুমিতা এটুকু বুঝতে পেরেছিল যে ওরা প্রেম করে। দোলের দিন ঠাকুর ঘরের জানালা দিয়ে নীচে, ওদের বাড়ির গলিতে উঁকিঝুঁকি মেরে ও দেখতো সকলকে মজা করতে আর দীর্ঘশ্বাস ফেলত। নিজেকে তার বন্দিনী মনে হত; তবে সে কখনো এই নিয়ে কোন প্রতিবাদ করেনি। মেনে নিয়েছিল যে তার বাবা-মা যা করছেন, তার ভালোর জন্যেই করছেন। তবে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় দুর্দান্ত রেজাল্ট করে কলেজে ভর্তি হবার পর তার বন্দী দশা থেকে মুক্তি ঘটলো। সে বছর অনুমিতা দোল খেলার পারমিশান পেল। কৃষ্ণা তার কলেজেই পড়ে, পাশ কোর্সে। সে আগের থেকেই ওদের বলে রেখেছিল। সেইমত সেদিন সে বাড়ির নীচের চার ফুট চওড়া গলিটাতে নেমে এসেছিল। এত বছরের অপেক্ষার অবসান। কৃষ্ণা, যুথিকা ও মিষ্টি ওকে প্রাণ মন ভরে রঙ, আবির মাখালো। এমনকি কৃষ্ণার দাদা ও লাভারও রঙ ভরা বালতি বালতি জল তার মাথায় ঢেলে দিল। অনিরুদ্ধও সেদিন মিষ্টির হাঁড়ি নিয়ে নীচে নেমে এসেছিলেন। তাঁকেও ছেলেমেয়ে গুলো ছাড়লো না। “কাকু” কাকু” বলে আহ্লাদে আটখানা হয়ে মিষ্টি তো খেলোই; নিজেদের বাবাদের ডেকে আনলো রঙ খেলার জন্যে। পারমিতা মোটেই রঙ খেলতে পছন্দ করেন না। তিনি গেলেন তাঁর স্বামীর উপর ক্ষেপে।
“হ্যাগো, তোমার কি কোন আক্কেল জ্ঞান নেই? তুমি শিং ভেঙে বাছুরের দলে গিয়ে ভিড়েছো?” বকাঝকা খেয়ে অনিরুদ্ধ ওপরে চলে গেলেন। “ অনু চল…মা রাগ করছে, আর নয়…”
“ আর একটু থাকি না বাবা, ভাল লাগছে…”
“কিন্তু বেশিক্ষন নয়…”
অনুমিতা আজ যেন খাঁচাছাড়া পাখি। রঙীন ডানার ওপর ভর করে নীল আকাশে উড়তে চাইছে। প্রতিবেশী বান্ধবীদের সঙ্গে পাড়ার আরো কয়েকটা বাড়ি গিয়ে রঙ খেলে এল সে। বারোটা নাগাদ ওদের বিদায় জানিয়ে নিজের বাড়ির ছোট্ট গেটটা খুলে যেই না ঢুকেছে; কোথা থেকে দশ বারো জনের একটা গ্রুপ বাইক নিয়ে তাদের বাড়ির সামনের রাস্তায় এসে দাঁড়ালো। এরা কারা? এদের তো কখনো পাড়ায় দেখেনি? তাদের মুখ, চুল হাতের চেটো সোনালী, রূপালী, বাঁদর রঙে ভর্তি; কাউকে আলাদা করে চেনাও খুব মুশ্কিল। কিন্তু বলা নেই, কওয়া নেই, তারা লোহার গেট ঠেলে ওদের বাড়ির গলিতে ঢুকে এল। অনুমিতা পায়ে পায়ে পিছু হটতে থাকলো। ভাল করে কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওরা ওকে ঘিরে ধরে “বুরা না মানো হোলি হ্যায়” বলেত্যালতেলে রূপালী রঙ ওর মুখে, মাথায় মাখাতে থাকল। সে বাধা দেবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হল। রঙ মাখানোর তীব্রতায় তার দুচোখ বন্ধ হয়ে গেছিল। সে হঠাৎ অনুভব করল যে দুটি হাতের আঙ্গুল তার অনুন্নত স্তনের বোঁটা ধরে টান মারছে; কিরকম চিমটি কাটার মতো অনুভতি। অনুমিতার রোগাটে গড়ন; এখনো তার দুই বক্ষ পরিপূর্ণ ভাবে গঠিত হয় নি; মাঝে মাঝেই সে তার স্তনে যন্ত্রনা অনুভব করে এখনো। আজকে যেন সেইরকম একটা যন্ত্রনা অনুভব করে কঁকিয়ে উঠল সে। তারপরেই সেই গ্রুপটা বাইকে চেপে উধাও। দশ মিনিটের মধ্যে কি যে সব হয়ে গেল, বুঝতে পারল না কলেজ গোয়িং, কিন্তু নাবালিকা মনের মেয়েটা। মা বলেছিল রঙ মেখে উপরে না আসতে, তাই সে চটপট নীচের বাথরুমে স্নান করতে ঢুকে পড়ল। শাওয়ার খুলে গায়ের মাথার রঙ ধুয়ে ফেলার অদম্য প্রচেষ্টা চালাতে লাগল। স্নানরত অবস্থায় তার খেয়াল হল যে তার সঙ্গে আজ একটা অন্যায় হয়েছে। তার অনুমতি না নিয়ে তার গায়ে ঐ ছেলেগুলো কি করে রঙ মাখাতে পারল? কিভাবে তাকে যৌন হেনস্থা করতে পারল তারা? কোন পুরুষ এর আগে তাকে স্পর্শ না করলেও তার মন বলে দিচ্ছিল যে ঐ ছেলেগুলো যেভাবে তার স্তন স্পর্শ করেছিল, তাতে অশ্লীলতা আছে। শরীর ও মনে একটা জ্বলন অনুভব করতে লাগল সে। কি শয়তান, অসভ্য ঐ ছেলেগুলো?! তার চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছিল। সে বাথরুমের মধ্যেই মুখ গুঁজে বসে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল। কেন যে সে তার মায়ের অবাধ্য হল আর কেনোই বা রঙ খেলতে নীচে নামল? কিন্তু এখন ও কি করবে? এই লজ্জার কথা কাকে বলবে? কাকে নালিশ করবে? কার বিরুদ্ধেই বা নালিশ করবে? মা-বাবা জানতে পারলে তাকে আস্ত রাখবেন না। বন্ধুদের কাউকে বলতে গেলে সে মরমে মরে যাবে। সেদিন প্রথমবারের জন্যে মেয়ে হবার অসহায়তা তাকে ঘিরে ধরল। এর পরে আর কোনদিন সে রঙ খেলতে চায় নি। এমনকি কলেজে ছেলে বন্ধুদের পাশে বসা তো দূরের কথা, কথা বলতেও পছন্দ করতো না। সায়েন্স কলেজে পড়ার সময়ও সে তার প্রজেক্টের জন্যে মহিলা লেকচারারকেই বেছে নিয়েছিল। পুরুষদের বিষয়ে কথা উঠলেই সে কেমন যেন একটা অস্বস্তি অনুভব করত।
তাই নিজের বিয়ের দিনেও অনুমিতার মুখে এতটুকু হাসি কেউ দেখতে পেল না। অনিরুদ্ধ, পারমিতা ভাবলেন যে বাবা-মাকে ছেড়ে চলে যেতে হবে বলেই হয়তো তাঁদের মেয়ে এতখানি মনমরা। কিন্তু তা নয়। সে তার বর নীলাদ্রির চরিত্র নিয়ে সাতপাঁচ ভেবেই চলেছে। এমনিতে অনুমিতা বাবা-মাবের খুব বাধ্য, তাই তাঁদের পছন্দ করা ছেলেকেই যে সে বিয়ে করবে, সেই বিষয়ে কোন দ্বিমত ছিল না। বিয়ের আগে নীলাদ্রিও যে খুব বেশিবার মীট করেছে ওকে তাও নয়। ওদের বাড়িতে বার চারেক মত এসেছিল। তাও কখনো খুড়তুতো ভাইকে নিয়ে, কখনো বন্ধুর সঙ্গে। ওদের মধ্যে কিছু আবশ্যিক কথা বার্তাই হয়েছিল। অনুমিতা মুখ তুলে তার বরকে ভাল করে দেখেও নি। মালাবদলের সময়ে সে দেখল যে তার বরটা যথেষ্ট সুন্দর দেখতে, সৌমকান্তি চেহারা তার। ফুলশয্যার দিন নীলাদ্রি বন্ধ ঘরের মধ্যে তার নব পরিণীতা বধুর গোল, ফর্সা মুখটা তার দুহাতের তালুর মধ্যে তুলে নিয়েছিল। কিন্তু অনুমিতা তার স্বামীর দিকে তাকাতেও ভয় পেল। উপরন্তু যথেষ্ট আড়ষ্ট হয়ে কাঠেরমতো বসেছিল সে। শীতের রাতেও তার ঠোঁটের উপরে , নাকের নীচে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছিল।
ইতিহাসের প্রফেসার নীলাদ্রি। ক্লাশে, কোচিং’এ তার ছাত্রীদের রকমসকমের সঙ্গে সে ভালমতন অভ্যস্ত। তাই মেয়েদের মন বুঝতে তার এতটুকুও অসুবিধা হয়না। জিন্স, টপ পরে মোবাইল নিয়ে ঘাঁটতে থাকা মেয়ে তার বরাবর না পসন্দ ছিল। সে নিজেও যথেষ্ট অর্থোডক্স ফ্যামিলির ছেলে এবং প্রেম, বিয়ে ইত্যাদি বিষয়ে তার চিন্তাধারা আজকালকার হুজুগে ছেলেমেয়েদের মত নয়। সে মনে করে লজ্জাই নারীর ভূষন। তাই অনুমিতাকে প্রথমবার দেখেই তার পছন্দ হয়ে গেছিল। ফুলশয্যার রাতে কিছু গল্প গুজব করে বিছানায় যথেষ্ট পরিমানে দূরত্ব বজায় রেখে সে ঘুমিয়ে পড়েছিল। এমনকি খাজুরাহে হানিমুন করতে এসেও সে অনুমিতাকে মোটেই বিরক্ত করে নি। বরং তার সঙ্গে বন্ধুর মতো মিশে তাকে সহজ হতে সাহায্য করছিল। খাজুরাহের মন্দিরের ঐতিহাসিক ভ্যালু বোঝাতেই ব্যস্ত ছিল বেশি।
এদিকে অনুমিতার এই মানুষটিকে একটু একটু করে ভাল লাগছিল। বাবার সঙ্গে প্রচুর মিল আছে নীলাদ্রির। পুরুষ মানুষ হলেও নিরাপত্তার কোন অভাব অনুভব করছিল না সে। তাই খাজুরাহের মন্দিরে সঙ্গমরত পুরুষ মহিলার মূর্তি গুলো দেখেও সে লজ্জায় মাথা নীচু করে নি। লাঞ্চ, ডিনারের সময় নীলাদ্রি তাকে যথেষ্ট প্যামপার্ড করত। সেও বাচ্চা মেয়ের মত শপিং করতে গিয়ে এটা কিনবো, সেটা কিনবো বলে বায়না করতে থাকল। যাই হোক পনেরো দিনের পাঁচমারি, খাজুরাহো ট্রিপটা তার ভালোই কেটেছিল, নিরাপদে কেটেছিল।
আবার একটা দোল ফিরে এল। দোল এলেই আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে অনুমিতা। এবারও তার ব্যতিক্রম হলো না। অন্যদিকে নীলাদ্রির বাড়িতে মহা সমারোহে দোল খেলা হয়। সকালবেলা গোপালকে সিন্নি প্রসাদ ও আবির দিয়ে বাড়ির সবচাইতে বয়স্কা মহিলা সুধারানী দেবী সকলের কপালে আবিরের টিপ এঁকে দেন। তারপর সব সদস্যরা রঙ খেলতে চলে যায় যে যার মত। এবছর বিয়ের পর প্রথম দোল; তাই নীলাদ্রির বন্ধু আর ভাই- বোন ও তাদের বন্ধুরা সকলেই হাজির হয়েছিল লাহা বাড়ির উঠানে। অনুমিতা কিন্তু নিজেকে বেডরুমে আবদ্ধ করে রেখেছিল। নীলাদ্রি বুঝেছিল যে কিছু একটা বিষয় তো আছে, যেই কারণে অনুমিতা বাড়ি ভর্তি লোকের সামনে বেরোতেই চাইছে না। বোনেদের হাত থেকে যদিও বা আবির নিল, ভাই যখন আবির দিতে গেল, সে প্রায় কেঁদেই ফেলল। নীলাদ্রি বুঝলো যে আবহাওয়াটা সহজ করা দরকার। ওর বন্ধুরা ছাদে মাংস সহযোগে বীয়ার পান করছিল। নীলাদ্রি অনুমিতাকে নিয়ে ছাদের ঘরে চলে এল। শুধুমাত্র বন্ধুদের অনুরোধে বিয়ার পার্টিতে রাজী হয়েছিল সে। বাড়ির বড়োরা জানলে কেলেঙ্কারির একশেষ হবে। তাই সে ছাদের দরজায় তালা লাগিয়ে দিল। ছাদের উপর ছাদ-বাগান দিয়ে ঘেরা দশ বাই দশ ঘরটা নীলাদ্রির স্টাডি রুম; খুব পছন্দের জায়গা। অবসর সময়ে সে এই ঘরটায় থাকতে যে খুব ভালবাসে, সেটা পরিবারের সকলেই জানতো। এ ক’দিনে অনুমিতাও জেনে গিয়েছিল।
বন্ধুদের সঙ্গে খানিকটা ঠাণ্ডা বীয়ার সেও গলায় ঢাললো। সকলের অলক্ষ্যে অনুমিতাকে ঘরের ভিতর নিয়ে গিয়ে লাল আবির মাখিয়ে দেয় সে। অনুমিতা অভিমানী দৃষ্টি দিয়ে তার স্বামীর দিকে তাকিয়ে থাকে। তবে এই মানুষটির থেকে যে তার কোন বিপদ নেই সেটা সে এই ক’দিনে বুঝে গেছিল। তাই কোন বাধা দেয় নি। আর সেই সুযোগে নীলাদ্রি তার ঠোঁট দুটো দিয়ে অনুমিতার ঠোঁট চেপে ধরল। লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠল নীলাদ্রির নতুন বৌ। আবিরের লাল রঙ, আর লজ্জার লাল রঙ মিলে মিশে একাকার হয়ে গেল। দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর ছাদের ঘরেই অনুমিতাকে নিয়ে চলে এল সে। কারণ সে চায়নি যে পরিবারের লোকেরা জেনে যাক যে প্রথম চুম্বনের স্বাদ পাবার খুশিতে সে আজ চার বোতল বীয়ার গলধিকরণ করেছে। দরজা জানালা বন্ধ করে এসিটা চালিয়ে দিল। অনুমিতাকে দুবাহুর ভিতর ধরে বিছানার উপর ফেলল সে। সবার আগে ওর কপালে চুমু খেল। তারপর ঠোঁটে আলতো করে, তারপর গলায়, নাভিতে। একে একে সব জামাকাপড় গায়ের থেকে খুলে ফেলে আদর করতে থাকে তার নব পরিণীতাকে। অনুমিতা চোখ বন্ধ করে আদর খেতে থাকে। কারণ সে বুঝতে পারছিল যে তার স্বামীর আদরে কোন অশ্লীলতা নেই। চুম্বন গুলোর মধ্যে এতটুকু কোন নোংরামি নেই। ভালবাসা ও প্রেমের মাধুর্য্য ছিল তাতে। এমনিতেই তার শরীরের সব লাল রঙ স্নান করার পরও উঠে যায় নি। তার উপর লজ্জা, শিহরণ রাশি রাশি গোলাপী আবির যেন ঢেলে দিয়ে যাচ্ছিল তার ফর্সা শরীরে। মাঝে মধ্যেই তার বস্ত্রহীন শরীরটা ঢেউ তরঙ্গের মতো কেঁপে কেঁপে উঠছিল। তবে যখন নীলাদ্রি তার স্তন স্পর্শ করলো, তখন একটু হলেও শঙ্কিত হয়েছিল তার মন। কিন্তু নীলাদ্রির হাতের চাপ, বোঁটায় মুখ দেওয়া ইত্যাদি সবকিছুই আদরের অংশ ছিল, ভালবাসার অংশ ছিল। তাতে এতটুকু অশ্লীলতা ছিল না। আজও সে যন্ত্রনায় কাতর হল তার ভ্যাজাইনার মেমব্রেন ছিঁড়ে যাওয়ার কারণবশত। কিন্তু সে যন্ত্রনার মধ্যেও একটা পরিতৃপ্তি ছিল। সঙ্গমের পর ক্লান্ত নীলাদ্রি যখন চিৎ হয়ে শুয়েছিল, অণুমিতা তার মাথাটা স্বামীর বুকের ওপর রাখল।
“কি? খুব ব্যাথা করছে?” নীলাদ্রি তার লম্বা বাহু দিয়ে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞাসা করল।
“না তো!” বলেই সে শক্ত করে তার স্বামীর গলা জড়িয়ে ধরে ঝরঝর করে কেঁদে ফেলল। নীলাদ্রি তার স্ত্রীর কান্নাকে প্রশ্রয় দিতে থাকল। একবারও জানতে চাইল না যে কেন অনুমিতা কাঁদছে। ‘হয়তো অতীতের কোন ঘটনা তাকে বিরক্ত করছিল এতদিন, হয়তো আজ তার থেকে মুক্তি ঘটল।’ এইসবই ভাবতে ভাবতে লম্বা লম্বা আঙ্গুল গুলো অনুমিতার ঘন কালো চুলের মুধ্যে ঢুকিয়ে আদর করতে লাগল নীলাদ্রি। অনুমিতার শরীর ও মনে এক অদ্ভূত রকম দোলন অনুভূত হতে থাকলো।
Be the first to comment