মৌপিয়া নন্দী, সাংবাদিক ও নিউজ অ্যাঙ্কার, ২৪ ঘন্টা
মৌপিয়া নন্দী, সংবাদ পরিবেশন জগতে এক উল্লেখযোগ্য নাম। মৌপিয়া অ্যাঙ্কার হিসাবে সফল তো বটেই সাংবাদিক হিসাবেও নিজের মুন্সিয়ানা প্রমাণ করেছে বারবার। অশান্ত পাহাড়ে হোক বা মাও অধ্যুষিত দান্তে-ওয়াড়ায় মৌপিয়াকে বলিষ্ঠভাবে সাংবাদিকতা করতে দেখেছি বারবার। নিজে সাংবাদিক বলেই সংবাদ পরিবেশণ করাটা অত্যন্ত সহজ ও প্রাঞ্জল ভাবে করতে পারে মৌপিয়া। নিজেকে সিঙ্গল উইমেন বলে। মেয়েদের বেঁচে থাকার জন্য পুরুষ নামক একটি আশ্রয় বা ছাদ যে অবশ্য প্রয়োজনীয় তা ভুল প্রমাণ করে দিয়েছে মৌপিয়া। সাফল্যের সঙ্গে একার লড়াই লড়ে এগিয়ে চলেছে।
খুব স্বাভাবিকভাবেই মার্গারেট থ্যাচারের এই কোটেশনটি মৌপিয়ার ক্ষেত্রে যেন প্রযোজ্য, if you want something said, ask a man. If you want something done, ask a women. ৮ই মার্চ বিশ্বনারী দিবস কি সমর্থন করে মৌপিয়া, প্রশ্ন রেখেছিলাম আমরা। ক্লারা জেটকিন ও রোজা লুক্সেমবার্গ-এর যে লড়াইকে স্যালুট জানায় মৌপিয়া। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় ‘নারীকে আপন ভাগ্য জয় করিবার কেন নাহি দিবে অধিকার’ অথবা নজরুলের ভাষায় ‘বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর’। কিন্তু তা সত্ত্বেও এই অর্ধেক আকাশ অত্যাচারের অন্ধকারে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মুখ কালো করে ঘোরে। মৌপিয়ার স্পষ্ট বক্তব্য তোমার আমার ক্ষমতায়নের জন্য নারীদিবস পালনের একটা মাহাত্ম্য আছে। তার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট লড়াই-এর। সমানাধিকার, সমবেতন, ভোটদানের অধিকার ইত্যাদি বিভিন্ন দাবিতে দেশে-বিদেশে নারীরা আন্দোলন করেছে। অবশেষে নির্দিষ্ট একটি দিন ঠিক হয়েছে ৮ই মার্চ, বিশ্বনারী দিবস। মৌপিয়ার চোখা প্রশ্ন, যেকোনো কোম্পানীতে বসের পদে, ম্যানেজমেন্ট লেবেলে এখনো মেয়েদের দূরে সরিয়ে রাখা হয়। এখনও কোনো প্রতিষ্ঠানের মাথায় কোনো মহিলা থাকলে সেটা খবর হয় অর্থাৎ তাকে ব্যতিক্রম বলে ধরা হয়। কারণ দর্শানো হয়, মেয়েদের মেটারনিটি লিভ নিতে হয়, সন্তান পালন করতে হয় তাই তারা নাকি বড় প্রতিষ্ঠানের গুরুদায়িত্ব পালন করতে পারবে না। কিন্তু আমরা ভুলে যাই অন্যদেশের কথা বাদ দিই, এদেশেই আমাদের জন্মেরও আগে একজন মহিলা প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী কৃতিত্বের সাথে দেশ শাসন করেছেন। তাঁরই বক্তব্যের সুর ধরে বলি, যে হাত দোলনা দোলায়, সেই হাত দিয়ে দেশ শাসনও করা যায়।
মৌপিয়া বলেন, আসলে নারীর ক্ষমতায়ন অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ছাড়া অধরা থেকে যায়। আমাদের মেয়েরা বলে আমাকে আমার হাজব্যান্ড স্বাধীনতা দেয়। কতটা লজ্জাজনক ভাবুন কথাটা। স্বাধীনতা তো তার জন্মগত অধিকার। স্বাধীন দেশের নাগরিক সে। আবার নতুন করে স্বাধীনতা দেবে সেটা বলার কি আছে। আসলে অত্যাচারিত, নিষ্পেষিত, অবহেলিত হতে হতে মাথা উঁচু করার, মেরুদন্ড সোজা করার কথাই যেন তারা ভুলতে বসেছে।
এর উপর আছে পুরুষের দম্ভ। প্রতি হিংসা পরায়ণতা, জিঘাংসা এবং ক্ষমতার দম্ভ। এখান থেকেই সমাজে বাড়ে ধর্ষণ, শ্লীলতাহানি। এই মানসিকতার পরিবর্তন যতদিন না হয় ততদিন লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। সমাজ যখন মনে করবে পুরুষ প্রকৃতি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলবে তবেই ঋদ্ধ হবে আমাদের সমাজ, সেই দিনের অপেক্ষায় আছি আমরা। আমাদের সমাজে যারা সিঙ্গল উইমেন তাদের লড়াই আরো বেশি। তথাকথিত সমাজ তাকে বাঁকা চোখে দেখে। তার সাফল্যকেও নিক্তিরে বিচার করে। তাই ৮ই মার্চ একদিন না হয় পালন করা গেল। বাস্তবিক সমাজকে সাবালক হতে হবে।
ছবিঃ সংগৃহীত
Be the first to comment