নারী দিবসের প্রয়োজনীয়তা আছে কি? কি বলছেন বিশিষ্ট মহিলারা

Spread the love

পর্ণা দত্ত, গৃহবধূ

পর্ণা দত্ত- আমরা যখন পর্ণাকে চিনতাম তখন পর্ণা ঘোষ ছিল উত্তর কলকাতার ঘোষ বাড়ির একমাত্র আদুরে কন্যা। আমাদের সঙ্গে ইউনিভার্সিটিতে জার্নালিজম পড়তো। বিয়ে হয়ে যায় তখনই। স্বামী ভাস্করের সাথে অনেকদিনের সম্পর্ক। মেধাবী ও কৃতি ভাস্কর দত্তের সঙ্গে বিয়ে করার জন্য পর্ণাকে পরিবারের সঙ্গে বিরাট লড়াই করতে হয়। আমরা যেকোনো লড়াইকে স্যালুট জানাই। তাই পর্ণার এই লড়াইকেও আমরা সম্মান জানাই। সাংবাদিকতায় এম এ পাশ করে স্বামী সন্তান নিয়ে সুখেই ঘর করে পর্ণা। একমাত্র ছেলে পূর্বোদয় এবারে আই এস সি পরীক্ষা দিচ্ছে। ভাস্কর কর্মসূত্রে থাকেন কলকাতার বাইরে। এখানে পর্ণাকেও একার লড়াই লড়তে হচ্ছে। গৃহবধূ শুধু এই তকমাতেই তাকে ছোট না করে তার লড়াইকে আমরা বড় করে দেখছি। নারীদিবস নিয়ে পর্ণার বক্তব্য সে নিজেই লিখেছে।

বাসের জানলা দিয়ে নারী দিবসের ফ্লেক্স, ফেসটুন ইত্যাদি দেখতে দেখতে নারী হিসেবে বেশ গর্বিত বোধ হচ্ছিল, হঠাৎ তাল কাটল একটি তিরস্কারে, এক সুসজ্জিতা আধুনিকা মহিলা বাসের লেডিস সিটে বসা একজন বৃদ্ধকে বিরক্তি ভরা গলায় বললেন সিটটা ছেড়ে দিন এটা লেডিস সিট।বৃদ্ধ একটু ইতস্তত একটু কষ্ট করে উঠে দাঁড়ালেন আর আধুনিকা যুদ্ধ জয়ের ভঙ্গিতে বসে পড়লেন সিটে প্রশ্ন এখানেই যে আমরা কিন্তু ছেলেদের আসনে বসলে কোন পুরুষকে তার আসন ছেড়ে দিই না কারন দেখাই ওটা নাকি জেনারেল আসন অর্থাৎ সবাই বসতে পারে। যদি তাই হয় তাহলে এই নারী পুরুষ সমান সমানের যুগে এই বিশেষ সুযোগের কি প্রয়োজন আছে? লেডিজ স্পেশাল ট্রেন, লেডিস আসন, লেডিজ সংরক্ষণ, লেডিস সাইন ইত্যাদির বিশেষ সু্যোগ নারীরাই কাজে লাগাতে খুব উৎসাহী। আগের যুগে প্রথম ডক্টর থেকে প্রথম মহিলা গ্র্যাজুয়েট রানী রাসমনি থেকে মাতঙ্গিনি সবাই পুরুষের সঙ্গে অসম লড়াই করে এগিয়ে ছিলেন তাহলে আজকের নারীরা কেন এই সু্যোগের জন্য অপেক্ষা করবো? যেখানে আমরা পারি ফাইটার প্লেন চালতে, ট্রেন চালাতে, ক্রিকেট খেলতে। শুধু নারী নয় আমরাও মানুষ এটা যেন ভুলে না যাই, পুরুষের সঙ্গে প্রতিযোগিতা নয় অবিশ্বাস নয় তাদের সঙ্গে সমান ভাবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নারীত্বের প্রাসঙ্গিকতা, সংসারে গুরু দায়িত্ব ভাগ করে নেওয়াই নারীত্ব। বর্তমানের সব আইন মহিলা কেন্দ্রিক বলে সর্বত্র সমস্তক্ষেত্রে আমিই সেরা কিংবা সামান্য মতপার্থক্যে পুরুষকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার (যা এখন সংবাদপত্র খুললেই দেখা যায়) মানসিকতা কিন্তু নারীত্ব নয়। নারীত্বের সবথেকে বড় অধিকার মাতৃত্ব। মাতৃত্বের মাধ্যমে সুসন্তান তৈরী করে, ছেলে মেয়ের মধ্যে ভেদাভেদ না করে নারীত্বের চরম প্রকাশ বলে আমি মনে করি। মা-ই সন্তানের প্রথম শিক্ষাগুরু তার কাছে ছেলে মেয়ে উভয়ই সমান, প্রত্যেককে মানুষ হিসাবে সন্মান করা এই শিক্ষা দিয়ে সন্তান পালন করতে পারলে নারীত্বের প্রকাশ ঘটবে আর সমাজের উন্নতি হবে বলে আমি মনে করি।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*