শর্মিলা সিং ফ্লোরা, রূপ বিশেষজ্ঞ
শর্মিলা সিং ফ্লোরা, কয়েক দশক ধরে রূপচর্চা জগতের এক পরিচিত নাম। দক্ষিণ কলকাতায় পুরুষ-মহিলা উভয়ের জন্যই আছে তাঁর বিউটি পার্লার। বেশ কিছু প্রোডাক্টও তিনি তৈরী করেন যা ব্যবহারকারীদের মধ্যে জনপ্রিয়। শর্মিলা সুন্দরী। অত্যন্ত অর্থবান পরিবারের স্ত্রী। কিন্তু বিলাস ব্যাসনে নিজের জীবনটাকে কাটিয়ে না দিয়ে বিউটি পার্লার শুধু করেছেন তাই নয় প্রতিমুহুর্তে রূপচর্চার বিভিন্ন পদ্ধতি নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করেন। পড়েন নানা জার্নাল। তিনি মনে করেন মানুষের অন্তর্নিহিত সৌন্দর্য্যের বহিঃপ্রকাশই হল রূপ। তার কাছে অনেক মেয়ে আসে যাদের রঙ কালো, ফর্সা হতে চায় তারা। শর্মিলা বলেন ওই রংটাই তোমার সৌন্দর্য্য। তোমার মৌলিকত্ব, তোমার প্রকাশ। তাকে বেশি চুন-কালি মাখিয়ে সাদা করার দরকার নেই।
৮ই মার্চ প্রসঙ্গে শর্মিলা বললেন, এর মাধ্যমে মেয়েদের ছোট করা হয়। যদিও নারী দিবস উপলক্ষে সর্বত্র নানা অনুষ্ঠান করা হয়, কিন্তু তার বিপরীত চিত্র এই অনুষ্ঠানগুলিকে পরিহাস করে। আজও পনপ্রথার বলি হয় বহু নিরূপমা। প্রতিদিন ধর্ষিতা হচ্ছে একাধিক নির্ভয়া। ছোট শিশুকেও এরা ছাড়েনা। হিংস্র পাশবিক এই মানুষগুলো ফুলের কুঁড়ির মতো ছোট ছোট প্রাণগুলিকেও দলে মুচড়ে শেষ করে দেয়। তার শৈশব প্রশ্নচিহ্নের মুখে দাঁড়ায়। তাকে শিখতে হয় গুড টাচ কি আর ব্যাড টাচ কি। যখন তার রূপকথার গল্পে মশগুল হওয়ার বয়স, তখন তাকে শিখতে হয় কিভাবে এই ধর্ষকদের কাছ থেকে নিজেকে রক্ষা করবে। পাশ্চাত্য দেশে তো বটেই আমাদের এখানেও ঘটছে তা। আমরা এ কোন সমাজে বাস করছি! এই সমাজে বসে ৮ই মার্চ পালন করবো। যদি ৮ই মার্চ পালন করতেই হয় তবে পুরুষ দিবসও পালন করতে হবে। ওরাও তো মানবিকতার দিক থেকে কতটা পিছিয়ে আছে।
আমাদের সমাজে মেয়েরা শৈশবের বাবার, যৌবনে স্বামীর এবং বার্ধক্যে পুত্রের অধীনে থাকে। কি ভীষণ পুরুষতান্ত্রিকতা ভেবে দেখুন। তার নিজের কোনো স্বতন্ত্র অস্ত্বিত্ব নেই।
নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত সব সমাজেই নারীকে শোষণ করা হয়। আর চক্ষু লজ্জার ভয়ে আমরা এক ছাদের নিচে বসবাস করি। এই পরিপ্রেক্ষিতে অমিতাভ বচ্চনের এই লাইনগুলো একবার পড়ে দেখবেন, “Because you are women, people will force their thinking with you, their boundaries on you. They will tell you how to dress, how to behave, whom you can meet and where you can go. Don’t live in the shadows of people’s judgment. Make your own choices in the light of your own wisdom.”
তবে মেয়েদেরকেও মনে রাখতে হবে একা চলার মানসিকতা থাকা প্রয়োজন। সবসময় স্বামীদের কাছে হাত না পেতে উল্টোটাই করা উচিত। মনের জোর ও শিক্ষা তাকে এই জায়গায় পৌছে দেয়। আর পুরুষরা মনে রাখবেন ‘Respect a girl’s dignity, she is not an object’ আমাদের মেয়েদেরও ‘no’ বলা শিখতে হবে।
মেয়েরা যে কোনো কাজই করতে পারে। প্রশাসনের উচ্চপদে যেতে পারে। দেশ চালাতে পারে। প্লেন চালাতে পারে। পারে সংসার চালাতে। এই সবকিছুই আমাদের দেশের মেয়েরা করে দেখিয়েছেন। কিন্তু এটা কেবলমাত্র প্রদীপের আলো। মুষ্টিমেয় কেউ কেউ আলোকিত হয়েছেন। প্রদীপের নিচে কিন্তু ঘন অন্ধকার। আর অন্ধকারটাই বেশি। তাই বিবেকানন্দের ভাষায় বলি, “ওঠো, জাগো, নিজের প্রাপ্য বুঝে নাও।” কর্মক্ষেত্রে মেয়েরা কিছু না করে একটা চায়ের দোকানও খুলতে পারেন। সেলাই জানলে সেখান থেকে অর্থ উপার্জন করুন। কেউ সিঙারা বানাতে পারেন, কেউ পরোটা-আলুরদম-ঘুগনি বানাতে জানেন তিনি সেইসব জিনিসের দোকান দিন। এগুলো করতে বেশি পুঁজিরও দরকার পড়ে না। নিজের পায়ে দাঁড়ান, বলুন আমি আমার নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নিতে পারি। এটাইতো স্বাধীনতা। এই স্বাধীনতা যেদিন আসবে, সেদিন না হয় আমরা ‘নারী দিবস’ পালন করবো। যদিও আবার বলি, এই দিন পালনের আমার কাছে কোন যৌক্তিকতা নেই। মৃন্ময়ী মা কে পুজো আর চিন্ময়ী মা কে যারা অত্যাচার করে সে সমাজ কতটা এগিয়েছে তা বোঝাই যায়।
Be the first to comment