রিপোর্টার- রফিকুল জামাদার
লড়াইয়ের অপর নাম হতে পারে আয়েশা নুর। লড়াইটা শুরু হয়েছিল ছোট থেকেই। বাবাকে হারিয়ে সেই লড়াই আজও চালিয়ে যাচ্ছে আয়েশা। লড়াইটা দারিদ্র্যর বাধাকে হার মানানোর। লড়াইটা সব বাধা পেরিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে তোলা। সেই লড়াইয়ের স্বপ্ন পূরনের অনেকটা কাছে পৌঁছে গেছে সে। কেমন সেই লড়াইয়ের কাহিনী, শুনতে হলে ফিরে তাকাতেই হবে আয়েশার ফ্ল্যাশব্যাকে।
দ্রারিদ্রতার বাধা পেরিয়ে সোনালি ভবিষ্যতে পথ চলা শুরু আয়েশার। ইচ্ছে ছিল নিজের স্বপ্ন পূরণ করে পরিবারের মুখে হাসি ফোটানোর। অনেক বাধা বিপত্তির পরও আশা ছাড়েনি আয়েশা। পার্কসার্কাসের মফিদুল ইসলাম লেনের বাসিন্দা সে। তবে যে বাড়িতে থাকে আয়েশা, সেই বাড়িটাও নিজেদের নয়। পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ।নানান প্রতিকুলতার মধ্যে নিজেকে জয় করে নেওয়ার বাস্তব উদাহরণ আয়েশা। আর্থিক অনটন যাকে ঘিরে ধরে রেখেছে। সেই ঘেরাটোপের মধ্যে থেকে নিজের সঙ্গে লড়াই করে, বলা যায় সমাজের সঙ্গে লড়াই করে নিজেকে বের করেছে এই আয়েশা। আয়েশার যখন বয়স ১১। তখন তার বাবা মারা যান। আয়েশারা ৪ ভাইবোন। বাবা মারা যাওয়ার পর আয়েশার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছিল। বাবাহারা মেয়েটি শুধু একটাই কথা ভেবেছিল, কি হবে তাদের, কে দেখবে তাদের ভবিষ্যৎ। এক রাশ চোখের জল নিয়ে আয়েশা ভেবেছিল তার স্বপ্নটা মনে হয় আর সফল হবে না। কিন্তু না শেষ লড়াইটা এখনও লড়ে যাচ্ছে সে। আয়েশা ছোট থেকে অসুস্থ। জন্মগত অসুস্থতা। কিন্তু তাতে কি, আয়েশা মনের দিক থেকে ১০০ শতাংশ সুস্থ। আয়েশার পরিবারের আয় বলতে গেলে, আয়েশার মা লোকের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে পুরানো জামা কাপড় নিয়ে এসে সেলাই করে। তাতে যেটুকু আয় হয় তাই দিয়ে নিজেদের জীবন জীবিকা।
আয়েশা ছোট থেকে শরীর চর্চার উপর খুব জোর দিত। নিজে অসুস্থ হলেও স্বপ্ন দেখেছে সে বিশ্বের সেরা ক্যারেটে চ্যাম্পিয়ন হবে। শুধু স্বপ্ন নয় সত্যিও করেছে সে।
এখন যাওয়া যাক তার জয়ের কথায়-
১) ২০১৭- গভঃ অফ অ্যামেরিকার দ্য হিরো অফ জেন্ডার ইকিইউলিটি সম্মান পেয়েছে আয়েশা।
২) TTVS(USA) আয়েশাকে নিয়ে একটি তথ্যচিত্র তৈরি করেছে। তথ্যচিত্রের নাম টাইটেল গার্ল কানেক্টেড। এই তথ্যচিত্রটি বিশ্বজুড়ে দেখানো হচ্ছে।
৩) আয়েশা ভারতের হয়ে ক্যারেটেতে মোট তিনবার প্রতিনিধিত্ব করেছে। এবং ৩ বারই আয়েশা সোনা জয় করে ভারতকে উপহার দিয়েছে।
৪) ক্যারেটের জন্য বাইরে যাওয়ার খরচ যোগাতে কখনও আয়েশা নিজের বাড়ির গবাদিপশু কিংবা কখনও আয়েশার মায়ের যেটুকু গহনা ছিল তা বিক্রি করতে হয়েছে।
৫) আয়েশার এই লড়ায়ের জয়ে কেন্দ্রীয়মন্ত্রী মেনকা গাঁধি টুইট করে বলেছিলেন, আয়েশা কোটি কোটি মেয়েদের প্রেরণা।
গতবছর আয়েশার লন্ডন যাওয়ার কথা ছিল। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে যোগ দেওয়ার কিথা ছিল। কিন্তু আয়েশা অর্থের অভাবে যেতে পারেনি। আয়েশা তাই বলে ভেঙে পড়েনি, আজও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
বর্তমানে আয়েশা মেয়েদের শুধু আত্মরক্ষা নয়, ক্যারেটে থেকে শুরু করে শরীরচর্চাও করায়। প্রায় ৩০০ জন বাচ্চাকে পড়ায় আয়েশা। আয়েশার একটাই স্বপ্ন ও একদিন পৃথিবীর সেরা হবেই হবে।
এখানে বলা ভাল আয়েশার এই লড়াইয়ে কখনও আয়েশা পাশে পায়নি কোনও সরকারকে। সে রাজ্য সরকার হোক কিংবা কেন্দ্র সরকার। সবাই প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আয়েশার সব দায়িত্ব নেবে সরকার। কিন্তু প্রতিশ্রুতিই সার। বাস্তবে তেমন কিছুই হয়নি। তবে আয়েশার পাশে প্রথম থেকেই ছিলেন তার কোচ এম.এ.আলি। এম.এ আলি রোজদিনকে বলেন, বাংলার ঘরে ঘরে যেন আয়েশা জন্ম নেয়। “মেয়েরা যে আজ পিছিয়ে নেই, নিজেরাই লড়াই করতে পারে তার জ্বলন্ত উদাহরণ আয়েশা।”
তাই আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে আয়েশার এই স্বপ্ন পূরণে রোজদিনের ফুল টিম পাশে আছে,আগামীদিনেও থাকবে। সেলাম আয়েশা। সেলাম জানাই তোমার এই কঠিন লড়াইকে।
Be the first to comment