দীপক আঢ্য –
ইছামতীর পাড়ে অনিন্দ্যসুন্দরভাবে সেজে উঠেছে লিটিল ম্যাগাজিন ফেয়ার। একে নদীর ধার তার উপর অসাধারণ মেলাপ্রাঙ্গণ সাজিয়ে তোলা — সবকিছুকে ছাপিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে মূল মঞ্চসজ্জা। শিল্পী পল্লব মন্ডলের এই কাজকে অকুণ্ঠ প্রশংসা না করে যেন যাওয়ার উপায় নেই। ইদানিং পল্লব বেশ চর্চিত শিল্পী। তার কাজের পরিধিও বেশ বিস্তৃত। মেলাপ্রাঙ্গণের ডেকোরেশনের কাজ শেষ হতেই তার হাসিও ততোধিক প্রসারিত।
মঞ্চসজ্জা বলতে বিশেষ কিছুনা। মঞ্চের উপরটা ফাঁকা। পিছনের অংশ সম্পূর্ণ কালো। উপরের দিকটা বেশ বাঁকানো এবং তার উপরে তিন সারি আর্চ।অ্যান্টি কালার। একটা বিশেষ অ্যাঙ্গেল থেকে দেখলে দেখতে লাগে অনেকটা জাহাজের মতো।
সুভাসবাবু উঠতি কবি ও গল্পকার। মেলায় ঢুকে মঞ্চের কাছে গিয়ে কিছুক্ষণ থ মেরে রইলেন।তারপর আস্তে আস্তে পাশের সঙ্গীকে জিজ্ঞাসা করলেন, সামনে কোন মুসলিমদের পরব টরব আছে নাকি?
— কেন দাদা? সে রকম কিছু নেই তো।
— না। যে হারে কালো রঙের আধিক্য, তাই ভাবছিলাম।
— ওহ্! তাহলে তুমি বুঝতে পারোনি। এটা হলো একটা জাহাজের অংশ বিশেষ।
— হ্যাঁ, সে তো বুঝলাম। তা জাহাজের বেসমেন্ট এতো কালো হয় কই? নজরে পড়েনা তো। তার থেকে বল, ইঁট বওয়ার নৌকা। গায়ে আলকাতরা লাগানো। সেক্ষেত্রে আবার উপরের আর্চগুলো বড্ড বেমানান।
— সে তুমি যাই বলো, মঞ্চটা কিন্তু লাগছে হেব্বি।
— তা অবিশ্যি স্বীকার করলুম।
মেলা শেষ। পার্কে লোকজন প্রায় নেই বললেই চলে। আমি আর পল্লব সিগারেট টানছিলাম মৌজ করে। ঠিক সে সময় শান্তিদা সামনে। শান্তিদা ডেকরেটরের মালিক। হঠাৎ আমার সুভাসবাবুর আর তার সংগীর কথোপকথন মনে পড়তেই পল্লবকে বললাম, এতো কালো করেছো কেন মঞ্চ? উত্তর পল্লবকে দিতে হল না। শান্তিদা হাসতে হাসতে বলল, কী করবো? অর্ডার তো নিচ্ছিলামই না। ঘরে কাপড় বাড়ন্ত। শেষমেশ যা ছিল তাই দিয়েই পল্লবদা খুলে রাখা ছাতা মতো তৈরি করে দিল বেশ!
হঠাৎই পল্লবের মুখটা চুপসে গেল বলে মনে হ’ল। বলল, যাঃ! কী সব বলছো তোমরা? আসলে আমি বোঝাতে চাইছিলাম…দূর! যাকগে… তোমাদের মধ্যে আর্টিস্টিক ভিউ না থাকলে আমি কী করবো বলো?
আমিও ভ্যাবাচ্যাকা। পরিস্থিতি হালকা করতে বললাম, ওসব বাদ দাও তো। বরং এক কাপ চা হয়ে যাক!
Be the first to comment