মাস্টারদা সূর্য সেন
জন্ম: ২২ মার্চ, ১৮৯৪ – মৃত্যু: ১২ জানুয়ারি, ১৯৩৪
তিনি মাস্টারদা নামে সমধিক পরিচিত। ভারতবর্ষের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নেতা হিসেবে পরিচিত ব্যক্তিত্ব। পূর্ববঙ্গে জন্ম নেওয়া এই বাঙালি বিপ্লবী তৎকালীন ব্রিটিশ বিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন এবং নিজ জীবন বলিদান করেন। সূর্যসেনের বাহিনী কয়েকদিনের জন্যে ব্রিটিশ শাসনকে চট্টগ্রাম এলাকা থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিল।
তিনি ১৯১২ সালে চট্টগ্রামের নন্দনকাননে অবস্থিত হরিশদত্তের ন্যাশনাল স্কুল থেকে প্রবেশিকা (এন্ট্রান্স) পাশ করে চট্টগ্রাম কলেজে এফ. এ.-তে ভর্তি হন। সে সময় আই.এ বা বর্তমানের উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষার পরিবর্তে ফার্স্ট আর্টস বা এফ. এ. পরীক্ষার নিয়ম ছিল। চট্টগ্রাম কলেজ থেকে এফ. এ. পরীক্ষায় সাফল্যের সাথে পাশ করে তিনি একই কলেজে বি.এ-তে ভর্তি হয়েছিলেন।
১৯১৬ সালে তিনি বহররমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজের ছাত্র থাকাকালীন সময়ে সরাসরি রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত হন। বিপ্লবীদের গোপন ঘাঁটি এই কলেজ়ে তিনি অধ্যাপক সতীশচন্দ্র চক্রবর্তীর সান্নিধ্যে আসেন। তিনি যুগান্তর দলের সাথে যুক্ত ছিলেন। সূর্য সেনকে তিনি বিপ্লবের মন্ত্রে দীক্ষা দেন। তিনি ১৯১৮ সালে শিক্ষাজীবন শেষ করে চট্টগ্রামে এসে গোপনে বিপ্লবী দলে যোগ দেন।
১৫ জুন ১৯৩৩ এ শুরু হওয়া এ মামলায় কঠোর গোপনীয়তা অবলম্বন করা হয়। আগ্নেয়াস্ত্র বহন করা ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগের প্রত্যক্ষ প্রমান উপস্থাপন করা যায়নি। ১৪ আগষ্ট ১৯৩৩ সালে এই মামলার রায় ঘোষনা করা হয়। পরদিন আনন্দবাজার পত্রিকার খবর ছিলঃ “চট্টগ্রাম ১৪ই আগষ্ট—অদ্য দ্বিপ্রহর ১২ ঘটিকার সময় স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল হইতে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠনের মামলার রায় প্রদত্ত হয়। ট্রাইব্যুনাল সূর্য সেনকে ১২১ ধারা অনুসারে দোষী সাব্যস্ত করিয়া প্রাণদন্ডে দন্ডিত করেন। ওই একই ধারায় তারকেশ্বর দস্তিদারের প্রতিও প্রাণদন্ডের আদেশ প্রদত্ত হয়।
১৯৩৪ সালের ১২ই জানুয়ারি মধ্যরাতে সূর্য সেন ও তারকেশ্বর দস্তিদারের ফাঁসী কার্যকর হবার কথা উল্লেখ করা হয়। সূর্য সেন এবং তারকেশ্বর দস্তিদারকে ব্রিটিশ সেনারা নির্মম ভাবে অত্যাচার করে। ব্রিটিশরা হাতুড়ী দিয়ে তাঁর দাঁত ভেঙ্গে দেয় এবং তাঁর হাড় ও ভেঙ্গে দেয়। হাতুড়ী দিয়ে নির্মম ভাবে পিটিয়ে অত্যাচার করা হয়। এরপর তিনি অজ্ঞান হয়ে যান। নিষ্ঠুরভাবে তাদের অর্ধমৃতদেহ দুটি ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। সূর্য সেন ও তারকেশ্বর দস্তিদারের লাশ আত্মীয়দের হাতে হস্তান্তর করা হয়নি এবং হিন্দু সংস্কার অনুযায়ী পোড়ানো হয়নি। ফাঁসীর পর লাশদুটো জেলখানা থেকে ট্রাকে করে ৪ নম্বর স্টীমার ঘাটে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর মৃতদেহ দুটোকে ব্রিটিশ ক্রুজার “The Renown” এ তুলে নিয়ে বুকে লোহার টুকরা বেঁধে বঙ্গোপসাগর আর ভারত মহাসাগরের সংলগ্ন একটা জায়গায় ফেলে দেয়া হয়।
রোজদিনের পক্ষ থেকে এই মহান দেশপ্রেমিকের জন্মদিবসে তাঁর প্রতি জানাই শ্রদ্ধাঞ্জলি।
তথ্য সংগ্রহে – মাসানুর রহমান
Be the first to comment