টানা ৩২ বছর নিজেই ক্রুশবিদ্ধ হন

Spread the love

তপন মল্লিক চৌধুরী

গুড ফ্রাইডে দিনটিকে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ দিন হিসেবে মানেন এবং পালন করে আসছেন। এর যথেষ্ট কারণ রয়েছে। প্রথমত, ওই দিন যিশুকে ক্রুশ বিদ্ধ করা হয়েছিল। দিনটিকে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা ‘হোলি ফ্রাইডে’, ‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’ কিংবা ‘গ্রেট ফ্রাইডে’ হিসেবেও উল্লেখ করে থাকেন। দিনটি কোনোভাবেই খ্রিস্টধর্মাবলম্বীদের কাছে উৎসব পালন কিংবা আনন্দ উপভোগের দিন নয়। সারা বিশ্বের খ্রিস্টানরা এই দিনটিতে চার্চে গিয়ে অথবা নিজেদের মতো ইশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে কাটিয়ে দেন।

ফিলিপাইনের নাগরিক রুবেন এনাজে কিন্তু দিনটিকে পালন করেন অন্যভাবে। সব নিয়মনীতিকে ছাপিয়ে নিজেই এদিন হয়ে ওঠেন যিশু। রাজধানী ম্যানিলা থেকে মাত্র ৭৬ কিলোমিটার দূরে কুটুড নামক গ্রামের ৫৮ বছর বয়সী এনাজে ওইদিন নিজেকেই ক্রুশ বিদ্ধ করেন। অবিশ্বাস্য মনে হলেও কিন্তু এটাই ঘটনা। আর এমনটা যে তিনি এক-দুবার ঘটিয়েছেন তা তো নয় বত্রিশ বছর এক টানা। প্রথমবার; তখন তাঁর বয়স ছিল ছাব্বিশ। তারপর থেকে আর বিরতি দেন নি। জীবনের সবরকম ওঠানামাকে উপেক্ষা করে রুবেন এনাজে গুড ফ্রাইডের দিনটিকে পালন করে চলেছেন আরেক যিশুকে ক্রুশবিদ্ধ করে। এ বছরও যার অন্যথা হয়নি।

যিশুকে ভালোবেসে দীর্ঘ ৩২ বছর ধরে গুড ফ্রাইডের দিনে রুবেন এনাজে যিশুর মতোই নিজেকে ক্রুশ বিদ্ধ করেন। যিশুর মতোই নিজের দুই হাতে এবং পায়ে দু’ইঞ্চি দীর্ঘ পেরেক গাঁথেন। এরপর কাঠের ক্রুশের সঙ্গে নিজেকে ঝুলিয়ে দেন। ঠিক যেমনটা করা হয়েছিল যিশুকে। এই কাজে অবশ্য তিনি অনেকের সহযোগিতা পেয়ে আসছেন। অনেকে রুবেন এনাজের এই কাজকে পাগলামি বলেই মনে করে, কেউ কেউ এই ধরনের কাজকে ধর্মীয় অন্ধত্ব বলেও ব্যাখ্যা করেন, অনেকে এই কাজকে নিষ্ঠুরতা বলেও সমালোচনা করেছেন। কিন্তু কোনোকিছুতেই যে কিছু যায় আসেনি তা বলাই বাহুল্য।

মাঠের মাঝখানে ক্রুশবিদ্ধ অবস্থান রুবেন এনাজে অবশ্য একা থাকেন না। প্রতিবছরই তার দু’পাশে থাকেন আরও দুই গ্রামবাসী। চলতি বছর এক নারীকেও এমন ক্রুশবিদ্ধ অবস্থায় দেখা যায়। ব্রিটিশ একটি সংবাদমাধ্যম এক প্রতিবেদনে জানায়, গত ৭ বছর ধরে তিনিও এই কাজ করছেন। ফিলিপাইনের ক্যাথলিক চার্চ অবশ্য এমন কাজের ঘোর বিরোধী। চার্চের মতে, ভক্তদের এমন কাণ্ড সাধারণ ক্যাথলিকদের মধ্যে ভুল ব্যাখ্যা দেবে। তবে সাধারণ জনগণের এমন কাণ্ডে কখনোই তারা বাধা দেননি।

ফিলিপাইনের প্রায় ৮০ ভাগ মানুষই ক্যাথলিক। তাদের কাছে বড়দিন যেমন খুশির, তেমনই গুড ফ্রাইডে অত্যন্ত দুঃখের একটি দিন। তাদের বিশ্বাস এই দিন জীবনের সব পাপ আর কলঙ্ক মুছে ফেলার সুযোগের দিন। এদিনের প্রার্থনা আর সাধনায় শরীর ও মনের সব পাপ মার্জনা হবে। শরীর হবে শুদ্ধ আর পূরণ হবে মনের সব বাসনা।

 

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*