তফশিলি জাতি-উপজাতি সংরক্ষণ আইন শিথিল করার প্রতিবাদে সোমবার সকাল থেকেই উত্তর ও মধ্য ভারতে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি৷ সোমবার দলিতদের ডাকা ভারত বনধের জেরে কোথাও বন্ধ হয়ে গেল সিবিএসই-র পরীক্ষা, কোথাও সংঘর্ষে প্রাণ হারালেন সাধারণ মানুষ। এখনও অবধি ৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। আবার কোথাও রেল ও সড়ক অবরোধের জেরে নাকাল হতে হল বহু মানুষকে।
প্রসঙ্গত, গত ২০ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, সরকারি কর্মীদের বিরুদ্ধে তফশিলি জাতি ও উপজাতিদের উপর অত্যাচার বন্ধের আইনের যথেচ্ছ অপব্যবহার করা হচ্ছে। তাই এখন থেকে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া এই আইনে কোনও সরকারি কর্মীকে গ্রেফতার করা যাবে না। তফশিলি জাতি–উপজাতির উপর অত্যাচারের কোনও মামলা দায়ের করার আগেই সেই ঘটনা ডিএসপি পর্যায়ের কোনও আধিকারিককে দিয়ে তদন্ত করাতে হবে। এছাড়াও ঘটনায় অভিযুক্ত কোনও সরকারি আধিকারিককে গ্রেপ্তারের আগে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে। শীর্ষ আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধেই ২ এপ্রিল ভারত বনধের ডাক দিয়েছিল পিস্যান্টস অ্যান্ড ওয়ার্কার্স পার্টি, ভারিপ বহুজন মহাসঙ্ঘ, সিটু, জাতি অন্ত সংঘর্ষ সমিতি, রাষ্ট্রীয় সেবা দল, ন্যাশনাল দলিত মুভমেন্ট ফর জাস্টিস সহ বিভিন্ন সংগঠন। আর সেই বনধকেই পরে সমর্থন জানায় অল ইন্ডিয়া আদি ধর্ম মিশন এবং অল ইন্ডিয়া আদি ধর্ম সমাজ৷
বনধ সফল করতে সোমবার সকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পথে নামে দলিত সমাজ৷ বিহার ওড়িশাতেও রেল অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখানো হয়৷ বিক্ষোভের জেরে আটকে পড়ে বহু ট্রেন৷ দেরাদুন এক্সপ্রেস, রাঁচি রাজধানী এক্সপ্রেস, উৎকল এক্সপ্রেস, সপ্তক্রান্তি এক্সপ্রেস, কানপুর শতাব্দী এক্সপ্রেস সহ একাধিক ট্রেন দাঁড়িয়ে থাকে বিভিন্ন স্টেশনে৷ পাশাপাশি, রাজস্থানের জয়পুর, বারমের, দিল্লির মান্ডি হাউস, উত্তরপ্রদেশের মেরঠ, মধ্যপ্রদেশের বিভিন্ন জায়গায় শুরু হয় বিক্ষোভ। বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের বচসা, ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায়। এছাড়াও, বারমেরে বেশ কয়েকটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা। মেরঠে কয়েকটি গাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়। বিহারের পটনা সহ আশেপাশের বিভিন্ন জায়গায় টায়ার জ্বালিয়ে পথ অবরোধ করেন ভীম আর্মির সদস্যরা। জোর করে বহু দোকানও বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে তাঁদের বিরুদ্ধে।
এদিকে গোলমালের ভয়ে পাঞ্জাবে সিবিএসই-র দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়৷ আজ পাঞ্জাবের সমস্ত স্কুল-কলেজ, ব্যঙ্ক এবং যানবাহন পরিষেবা বন্ধ থাকে৷ পাঞ্জাবে গোলমাল বাড়ার আশঙ্কায় সেনাবাহিনীকেও তৈরি রাখা হয়েছে। এদিন পাঞ্জাবের ফিরোজপুরে তলোয়ার নিয়ে দলিতরা মিছিল করেন বলে অভিযোগ।
অন্যদিকে, মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিওরে বিক্ষোভ চলাকালীন প্রকাশ্যেই চলে গুলিবর্ষণ৷ গোয়ালিয়র ও মোরেনায় ৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে ৷ আহত হয়েছেন বহু মানুষ৷ এদের মধ্যে অনেকেরই অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে খবর৷ এলাকায় জারি হয়েছে ১৪৪ ধারা ৷ নামানো হয়েছে আধা সেনাও৷ রাজধানী শহরের কনাট প্লেসে সারাদিন বিক্ষোভ অবরোধ চলে৷ বিক্ষোভ মিছিল বেরোয় লখনউয়ের হজরতগঞ্জেও৷ উত্তরপ্রদেশ, ওড়িশা, বিহারের একাধিক জায়গায় গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে বলেও খবর আসে।
Be the first to comment