তপন মল্লিক চৌধুরী
রবিনহুডের কথা নিশ্চয় আমাদের সবার মনে আছে! বিখ্যাত সেই তিরন্দাজ, যিনি ধনীদের টাকা-পয়সা-সোনাদানা লুট করে গরিবদের মধ্যে বিলিয়ে দিতেন। আর এইকাজ করেই জনপ্রিয় হয়েছিলেন। ২০১০ সালে ব্যতিক্রমী স্বভাবের সেই চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন অভিনেতা রাসেল ক্রো। তাঁর অভিনীত জনপ্রিয় সিনেমার মধ্যে রয়েছে ‘গ্লাডিয়েটর’, ‘আ বিউটিফুল মাইন্ড’, ‘সুপারম্যান-ম্যান অব স্টিল’, ‘দ্য মামি’ ইত্যাদি। বাস্তব জীবনেও তিনি অনেকটা ব্যতিক্রমী। রবিনহুডের মতো লুটতরাজ না করলেও নিজের সিনেমায় ব্যবহৃত স্মরণীয় বিভিন্ন সামগ্রী সংগ্রহ করার শখ এই অভিনেতার। তাঁর জনপ্রিয় ‘গ্লাডিয়েটর’ সিনেমায় ব্যবহার করা রথ থেকে শুরু করে ‘প্রুফ’ সিনেমায় তাঁর পরা টি-শার্টটিও সংগ্রহে রেখেছেন তাঁর সংগ্রহশালায়। বিশাল একটি জায়গা নিয়ে তার ব্যক্তিগত সংগ্রহশালা।
মাত্র কয়েদিন আগেই ছিল গুণী এই অভিনেতার ৫৪তম জন্মদিন। মনে মনে হয়ত ঠিক করে রেখেছিলেন যে এবারের জন্মদিনে তিনি একটা সারপ্রাইজ দেবেন। তাই নিজের ৫৪তম জন্মদিনে সবাইকে অবাক করে দিয়ে নিজের সংগ্রহশালাকে নিলামে তোলেন রাসেল। যদিও সেখানে রাসেলের প্রথম বিবাহবিচ্ছেদের আগের জিনিসগুলোই নিলামে তোলা হয়। তাই তো এ নিলাম অনুষ্ঠানের শিরোনাম ছিল ‘দ্য আর্ট অব ডিভোর্স’। সিডনির মাল্টি আর্টস সেন্টার ক্যারেজওয়ার্কসে শনিবার রাতে এ নিলামের আয়োজন করেন তিনি।
আয়োজনে সবচেয়ে দামি যে জিনিসটি নিলামে উঠেছিল, সেটি ১৮৯০ সালে লিওন্ড্রো বিসিয়াচের তৈরি একটি বেহালা। ২০০৩ সালে নির্মিত রাসেল অভিনীত চলচ্চিত্র ‘মাস্টার অ্যান্ড কমান্ডার’ সিনেমায় ব্যবহারের জন্য বেহালাটি কেনা হয়। নিলামে এর দাম ওঠে ১ লাখ ৩৫ হাজার অস্ট্রেলীয় ডলার। অনুষ্ঠানে ওই বেহালা বিক্রির আগে বেহালা বাজিয়েই রাসেলকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান অস্ট্রেলিয়ার জনপ্রিয় তরুণ বেহালাবাদক ব্রিজেট ও’ডোনেল। এরপর ‘গ্লাডিয়েটর’ সিনেমায় ব্যবহৃত সামগ্রীর নিলাম শুরু হয়। গোটা নিলামে সবাইকে এই সব সামগ্রীর জন্যই উৎসুক হয়ে থাকতে দেখা যায়। সিনেমায় রাসেলের পরা ধাতবের তৈরি পোশাকটি ৯০ হাজার অস্ট্রেলীয় ডলারে বিক্রি হয়। সিনেমায় ধোঁকাবাজ সেনাপতির চরিত্রে ব্যবহৃত পোশাকের একাংশ বিক্রি হয় ৩২ হাজার অস্ট্রেলীয় ডলারে এবং একটি ধাতুর তলোয়ার বিক্রি হয় ৭০ হাজার ডলারে। একই তলোয়ারের মতো একটি কাঠের প্রশিক্ষণ দেওয়ার তলোয়ার বিক্রি হয় ২০ হাজার ডলারে। নিলামে আকর্ষণ কাড়ে একই সিনেমার রোমান রথটি, যা একের পর এক হাঁকডাক শেষে ৬৫ হাজার ডলারে বিক্রি হয়।
নিলামে রাসেলের বাস্তব জীবনের বিয়ের গাড়ি, গয়না, ঘড়ি ও আরও বেশ কিছু সামগ্রীও বিক্রি করা হয়। নিলাম শুরু এক ঘণ্টার মধ্যেই নিলাম শেষ হয়ে যায়।
নিলাম নিয়ে রাসেল ক্রো বলেন, ‘তরুণদের হাতে ইতিহাস তুলে দিতে এমন নিলামের প্রথা রয়েছে। কে জানে, তারা এসবের ভিন্ন ব্যবহার শুরু করতে পারে।’ নিলামের আমন্ত্রণপত্রে তিনি লেখেন, ‘এখানে আমার জিনিস আছে। যা আমি কিনেছি, উপভোগ করেছি, পছন্দ করেছি, ভালোবেসেছি, যা আমাকে হাসি-কান্না-সুখ-দুঃখ দিয়েছে—এমন সব জিনিসই আছে এখানে।’ এখন তাঁর সংগ্রহশালা প্রায় ফাকাই বলা যায় তবে যিনি এরকম একজন সংগ্রাহক তাঁর সংগ্রহশালা আবার নতুন সংগ্রহে ভরে উঠবে বলেও এক সাক্ষাৎকারে জানান তিনি।
Be the first to comment