আর্যতীর্থ –
অগ্রগণ্য আপনি রাজা, অমিত প্রতাপশালী,
আমরা ঠুনকো খাগড়া প্রজা, তুতলিয়ে যাই খালি
উচিৎ ছিলো জল উঁচুতে মিলিয়ে দেওয়া গলা,
উচ্চে কত উঠছে পানি সমস্বরে বলা,
কিন্তু আমরা তোতলা মানুষ, বলতে হোঁচট খাই,
সেইটুকুতেই রাজার লোকের লেগেছে খটকাই,
তোতলামি কি ইচ্ছে করে করা বেয়াদপি?
হুজুর মা বাপ, রাতুলপায়ে এই নিবেদন সঁপি..
ছোটোবেলায়, জানেন হুজুর, জিভটা ছিলো ঠিক,
সেই যে ছেলে, ন্যাংটো রাজা দেখেই হাসে ফিক,
আমরা ওরই সাথী ছিলাম, পড়া এবং খেলায়,
আমরাও তো একই দলে গিয়েছিলাম মেলায়,
যেই মেলাতেই রাজা এলেন( তখন ছিলেন যিনি)
মুকুট ছিলো, পরনেতে আর কিছু দেখিনি।
রাজা এমন আদুল নাকি? আমাদের ফিসফাস..
কাকা খুড়োর মুখে আঙুল, ‘ শুনলে সর্বনাশ!’
রাজা বলেন নতুন পোশাক কেমন ,জনগণ?
সমস্বরে সবাই চেঁচায়, আহা, অসাধারণ!
সভাসদরা জয়তু দেন , নকীব পাড়ে হাঁক,
সবাই দেখোওওও..রাজার গায়ে আশ্চর্য পোশাক!
ধন্য ধন্য চারিদিকে, তখন কে আর জানতো,
আমাদের ওই বন্ধু হঠাৎ চেঁচিয়ে দেবে ‘ ন্যাংটো!’
তারপরে সব ভেস্তে গেলো, হুলুস্থুলু ব্যাপার,
পরে যা সব ঘটলো রাজা, সেটাই বলি এবার।
পরের দিনই রাজপেয়াদা এলো সাথীর ঘরে,
পুরো পাড়া মুহূর্তে দেয় ঝেঁটিয়ে সাফ করে।
সাথীকে কি করলো সেটা কেউ দেখেনি চোখে,
শুনেছিলাম রাজপ্রাসাদে নিয়ে গেছে ওকে।
কানাঘুঁষো শুনেছিলাম ( সূত্র গোপনীয়)
হাড়গুলো তার আস্ত নাকি ছিলো না একটিও।
প্রচন্ড মারধোরে যখন আধমরা বাচ্চাটা,
ঠিক তখনই..নিপুণ হাতে জিভ গেছিলো কাটা।
যাহোক এসব শোনা কথা, অন্যদিকে চলি,
আমরা যারা বন্ধু ছিলাম, তাদের কথা বলি।
রাজার লোকে লিস্টি ধরে ধরলো সকলকে,
কাউকে দিলো প্রবল পেটাই, কাউকে দিলো কড়কে।
আবার যাতে কেউ না চেঁচায়, সেটাও হলো দেখা,
রাজামশাই একে একে জিভে দিলেন ছ্যাঁকা।
এখন যদি ব্যথায় হাঁকি ‘ গেলাম , মরে গেলাম!’
রাজার কানে শোনায় সেটা ‘ সেলাম রাজা সেলাম’
বশংবদ তোতলা জিভে আমরা বেঁচে আছি,
চাইলে রাজা মারেনধরেন, চাইলে তিনি বাঁচি।
তবু আজও ‘ জল উঁচু’ তে জিভে ধরে কাঁপ,
শিখে যাবো রাজামশাই, এবার করো মাফ।
Be the first to comment