(ছবি সৌজন্যে- এএনআই)
৮ বছরের নাবালিকা আসিফাকে টানা সাতদিন আটকে রেখে লাগাতার গণধর্ষণ। তারপর খুন। পুলিশের চার্জশিট পেশের পর দীর্ঘ ৩ মাস আগের জম্মুর ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই দেশজুড়ে শুরু হয়েছে তোলপাড়। এদিকে চাপের মুখে ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে ঘটনাটির বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি।
আট বছরের ছোট্ট আসিফা আদরের ঘোড়াটির সঙ্গে চলে গিয়েছিল বাড়ির থেকে কিছুটা দূরে বনের ধারে। তারপর থেকে দীর্ঘ ৭ দিন কোনও খোঁজ নেই নাবালিকার। সাতদিন পর বনের পথেই উদ্ধার হল তাঁর ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ। ১৭ জানুয়ারি দেহ উদ্ধারের পর কেটে গেলো দীর্ঘ ৩ মাস। তারপর আদালতে চার্জশিট পেশ করে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘুমের ওষুধ খাইয়ে নাবালিটিকে সাতদিন ধরে ধর্ষণ করে ৬ জন। এদের মধ্যে আবার দুজন পুলিশকর্মীও রয়েছেন।
এমনকি মীরাট থেকেও ডেকে নিয়ে যাওয়া হয় ঘটনার মূলচক্রী দেবস্থানের কেয়ারটেকারকে। খুনের আগেও নাবালিকাকে রেয়াত করা হয়নি বলে জানা গিয়েছে। গলায় ফাঁস দিয়ে মারার আগেও তাকে শেষবারের মতো ধর্ষণ করে এক পুলিশ কর্মী। তারপর মুখ ও মাথা পাথর দিয়ে থেঁতলে মারা হয় আসিফাকে। পরে রক্তাক্ত দেহটি ফেলে দেওয়া হয় বনের পথে। ঘটনায় দেবস্থানের কেয়ারটেকার সহ ৮ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতদের মধ্যে কেয়ারটেকারের ছেলে এবং নাবালক ভাইপোও রয়েছে। ঘটনা ধামাচাপা দিতেই স্থানীয় দুই পুলিশ অফিসারকে ৪ লক্ষ টাকা ঘুষও দিয়েছিল ওই কেয়ারটেকার।
ধৃতদের সমর্থনে মুখ খুলেছেন রাজ্যের দুই বিজেপি মন্ত্রী। ইতিমধ্যেই পুলিশের তদন্ত, চার্জশিটের বিরোধিতায় সড়ক, রেল অবরোধও হয়েছে। অশান্ত হয়ে উঠেছে উপত্যকা।
আর অন্যদিকে, উত্তরপ্রদেশের উন্নাওতেও ধরা পড়েছে একই ছবি। জানা গিয়েছে, স্থানীয় বিজেপি বিধায়ক ও তার সঙ্গীরা এক মহিলাকে গণধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। তবে ধর্ষণকারীরা গেরুয়া শিবিরের সদস্য হওয়ায় নির্যাতিতা ও তাঁর পরিবার প্রশাসনের কাছে বারবার নালিশ জানালেও তা কানে তোলেন নি কেউই। অবশেষে নির্যাতিতা তাঁর পরিবারকে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের বাড়ির বাইরে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করে। মহিলাকে আটকাবার পরে জানা যায় নিজের ওপর হয়ে যাওয়া অন্যায়ের উপযুক্ত শাস্তি যাতে অভিযুক্তরা পায় সেই জন্যই মহিলার এই পদক্ষেপ। আর ঘটনার কথা জানাজানি হতেই প্রবল চাপে পড়ে যায় শাসক দল। বিরোধীদের একের পর এক আক্রমণে কোণঠাসা হয়ে পড়ে তারা। শেষমেশ বিজেপি বিধায়ক ও তার সঙ্গীদের গ্রেফতার করে পুলিশ।
দুটি নিন্দনীয় ঘটনার পরই সোচ্চার হয় সব মহল। এমন নির্মম অত্যাচারের প্রতিবাদে সোশ্যাল মিডিয়ায় কার্যত বিস্ফোরণ শুরু হয়। জাভেদ আখতার, ফারহান আখতার, রেণুকা সাহানে, রীতেশ দেশমুখ, অভিষেক বচ্চন, সোনম কাপুর, সিমি গেরওয়াল, সানিয়া মির্জা, গৌতম গম্ভীরের মতো সেলিব্রিটিরা নিন্দায় সরব হন। উন্নাও এবং কাঠুয়ার গণধর্ষণের প্রতিবাদে গর্জে ওঠার আহ্বান জানান তাঁরা। প্রতিবাদে সরব হয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীও। কাঠুয়ার ৮ বছরের মেয়ের ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় ক্ষোভ উগরে দিয়ে তিনি বলেন, এমন নৃশংসতা কল্পনাও করা যায় না। ট্যুইট করে নাবালিকার ওপর বর্বরোচিত যৌন নিগ্রহকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক তরজারও তীব্র বিরোধিতা করেছেন কংগ্রেস সভাপতি। পাশাপাশি মেয়েটির ওপর ঘটে যাওয়া অত্যাচারকে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ বলে আখ্যা দেন তিনি। রাহুল বলেন, এমন নৃশংস আচরণ করা অপরাধীদের কী করে আড়াল করতে পারে কেউ। এর শাস্তি হবে না, এটা মানা যায় না। রাহুল আরও বলেন, আমরা যদি একটা নিষ্পাপ শিশুর ওপর এমন অকল্পনীয় নৃশংসতা ঘটতে দিই, আর তা নিয়ে রাজনীতি চলে, তবে আমরা কী হয়ে উঠেছি?
এদিকে জম্মু ও কাশ্মীরের কাঠুয়া এবং উত্তরপ্রদেশের উন্নাওয়ে নৃশংস গণধর্ষণের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে দিল্লির ইন্ডিয়া গেটে মোমবাতি মিছিলে সামিল হন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী ও কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী। এদিন তাঁর সঙ্গে মিছিলে দেখা যায় প্রিয়ঙ্কা ভদরা ও তাঁর স্বামী রবার্ট ভদরাকেও। এদিন মিছিলে অংশ নিয়ে রাহুল গান্ধী বলেন, আমরা নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও অপরাধের বিরুদ্ধে কাজ করতে চাই। এটি একটি জাতীয় সমস্যা, একটি রাজনৈতিক বিষয় নয়। বিভিন্ন দলের মানুষ আজ এখানে জড়ো হয়েছেন। কমপক্ষে মহিলাদের নিরাপদে রাখতে হবে।
জম্মু কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি বলেন, রাজ্য সরকার এবার এমন এক আইন আনবে যেখানে নাবালিকা ধর্ষণকারীদের সাজা হবে সোজাসুজি মৃত্যুদন্ড।
প্রিয়ঙ্কা ভদরা বলেন, কেউ কাউকে জোর করেনি। কী কারনে এখানে আসা তার প্রকৃত কারন জানতে হবে। আর যদি ঠিকমতো ব্যবহার করতে না পারেন বাড়ি চলে যান। এখন সবাই নিঃশব্দে হেঁটে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।
এছাড়া কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদ মোমবাতি মিছিলে উপস্থিত হয়ে বলেন, সরকার এখন ঘুমোচ্ছে আর কংগ্রেস তাদের জাগিয়ে তুলছে। তিনি আরও বলেন, নরেন্দ্র মোদীর স্লোগান ‘বেটি পড়াও, বেটি বাঁচাও’ কিন্তু তিনি কী দেখতে পাচ্ছেন না তাঁর শাসনকালেই মেয়েদের এমনভাবে নির্যাতিত হতে হচ্ছে। উপস্থিত ছিলেন অম্বিকা সোনি, সলমান খুরশিদের মতো একাধিক শীর্ষ স্থানীয় কংগ্রেস নেতারা। এদিন শয়ে শয়ে কর্মী সমর্থকরা ঘটনার প্রতিবাদে দিল্লির জনপথে নামেন।
কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা বলেন, বারবার মহিলাদের উপর হামলা ও বিজেপি সরকারের ক্রমাগত দোষীদের আশ্রয় দেওয়ার ঘটনায় এই দেশ বিরক্ত। সরকার কাজ না কলে এবার তাদের ছুঁড়ে ফেলা হবে।
এই মিছিলে যোগ দেওয়ার জন্য মানুষকে আহ্বান জানিয়ে রাহুল ট্যুইট করে বলেন, কোটি কোটি ভারতীয়র মতো আজ রাতে আমার হৃদয়ও ভারাক্রান্ত। ভারত মেয়েদের সঙ্গে এই ধরনের আচরণ করতে পারে না। এই হিংসার প্রতিবাদ এবং বিচারের দাবিতে আজ মধ্যরাতে ইন্ডিয়া গেটে আমার সঙ্গে নীরব, শান্তিপূর্ণ মোমবাতি মিছিলে যোগ দিন।
Be the first to comment