ছাতা ; উড়ে আসেনি

Spread the love

মাসানুর রহমানঃ-

সকালবেলা বাড়ি থেকে বেরিয়ে মাঝ রাস্তায় ব্যাগ হাঁতড়ে আপনি অনেকবার বলে উঠেছেন “যাহ ছাতাটাতো নিতে ভুলে গেলুম”, কখনও কখনও কারো প্রশ্নের উত্তরেও বলে উঠেছেন “আর বলবেননা মশাই আজ ছাতাটা আনতে একদম ভুলে গেছি”, আসলে এই ছাতা আমাদের জীবনে পুরুষ এবং নারী উভয়েরই নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস হয়ে উঠেছে। তবে এটা কি জানেন আদিতে এই ছাতা কেবলমাত্র মহিলারাই ব্যবহার করতেন? হ্যাঁ একদমই তাই আজ থেকে প্রায় চার হাজার বছর আগে ছাতা আবিষ্কার হলেও ষোড়শ শতকের প্রথম দিকে এসে ছাতা কিছুটা জনপ্রিয়তা লাভ করে উত্তর ইউরোপের বৃষ্টি প্রধান কিছু এলাকায়, বিশেষ করে লন্ডনে। তবে সেসময় শুধু মহিলারাই ছাতা ব্যবহার করতেন। পুরুষদের মাঝে ছাতার কোন ব্যবহারই ছিলনা। জানা যায় পারস্য পর্যটক ও লেখক জোনাস হ্যানওয়ে নাকি ছাতাকে জনপ্রিয় করতে ইংলান্ডের রাস্তায় একটানা ৩০ বছর ছাতা মাথায় দিয়ে চলতেন। মূলত তিনিই ইংল্যান্ডে পুরুষদের মাঝে ছাতার ব্যবহার জনপ্রিয় করে তোলেন। যে কারণে ইংরেজদের মাঝে ছাতার আরেক নাম ’হ্যানওয়ে’।

তবে এই ছাতা এলো কোত্থেকে? ইতিহাস খুঁড়ে জানা যায় আজ থেকে প্রায় ৪ হাজার বছর আগে ছাতা আবিষ্কার হয়। তবে কে বা কারা এর আবিষ্কারক তা নিয়ে বিস্তর মতভেদ রয়েছে। কারো কারো মতে মিশরীয়রা প্রথম ছাতা আবিস্কার করে আবার কারো মতে চাইনিজরা। তবে প্রাচীন মিশর, গ্রীস এবং চীন দেশের চিত্রকর্মে ছাতার নিদর্শন পাওয়া যায়। সূর্যের তাপ থেকে রক্ষা পাবার জন্য মহিলারাই প্রথম ছাতা ব্যবহার করত বলে জানা যায়। তবে বৃষ্টি প্রতিরোধ করার জন্য প্রথম ছাতার ব্যবহার শুরু করে চাইনিজরা। আরোও মজার ব্যাপার হল অষ্টাদশ শতক পর্যন্ত ছাতার আকৃতি ছিল অনেক বড় এবং ওজনও ছিল অনেক বেশী। তখন ছাতার রডগুলো ছিল কাঠের বা তিমি মাছের কাঁটার এবং হাতল ছিল প্রায় দেড় মিটার লম্বা ফলত ছাতার গড় ওজন ছিল প্রায় আনুমানিক ৪-৫কেজি।

তবে এই ইংরেজী শব্দ “UMBRELLA” একটি ল্যাটিন শব্দ। ছাতা শুধু মাথা ঢাকা দিতেই নয় তখন বেশ মাথা ব্যাথারও কারণ হয়ে উঠেছিল। কারণ এতো বড়ো ও ভারী ছাতা কাঁধে নিয়ে সর্বত্র যাওয়া আসা ছিল বেশ কষ্টকর। ১৭১৫ সালে মারিয়াস নামক এক পারস্যে নাগরিক প্রথম পকেট ছাতা আবিষ্কার করেন বলে দাবি জানায়। উনিশ শতকের দিকে ছাতাকে বিভিন্ন ডিজাইনের এবং সহজে বহনযোগ্য করা হয়। ১৯২০ সালে জার্মানির বার্লিনে হ্যানস হাপট নামক এক ব্যক্তি ছাতা তৈরীতে অভিনব পরিবর্তন আনেন । তিনি ছোট সাইজের সহজে পকেটে বহনযোগ্য ছাতা তৈরী করেন। ১৯৩৬ সালে লর্ড ও লেডী নামক এই ছাতা জার্মান জনগনের মাঝে নাকি ব্যাপকভাবে সাড়া ফেলেছিল। তবে ১৮৫২ সালে স্যামুয়েল ফক্স স্টিলের চিকন রড দিয়ে রাণী ভিক্টোরিয়ার জন্য একটি ছাতা তৈরী করেছিলেন। বিশ্বের প্রথম ছাতার দোকান ”জেমস স্মিথ এ্যান্ড সন্স” যা চালু হয় ১৮৩০ সালে এবং এই দোকান লন্ডনের ৫৩ নিউ অক্সফোর্ড ষ্ট্রীটে আজও চালু আছে।

বিংশ শতকের শেষের দিকে ছাতা তৈরীতে আর এক ধরনের পরিবর্তন আসে। এসময় ছাতার রং কালো থেকে ক্রমে বাহারী রঙ্গের তৈরী হতে থাকে। মানুষের মধ্যে এর ব্যবহারও বাড়তে থাকে। তবে ভারত তথা বাংলায় এই ছাতার ব্যবহার সম্পর্কে বলা যায় যে, শরিফ ছাতা, ইজতেমা ছাতা ও এটলাস ছাতা ছিল বাংলা ছাতার প্রধান তিনটি ব্র্যান্ড। বিখ্যাত ‘মহেন্দ্র দত্তের’ ছাতা এখন দুর্লভ। এককালে ভারতে মহেন্দ্র দত্তের বাংলা ছাতাই ছিল বর্ষাকালে বাঙালির বিশ্বস্ত সঙ্গী। বর্তমানে বহু কোম্পানি কে.সি.পাল থেকে শুরু করে অনেকেই ছাতা তৈরী করেন, আর তা নিয়েই রমরমিয়ে রকমারী ছাতায় মাথা ঢেকেছে মানুষজন।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*