মাসানুর রহমানঃ-
পেন্ডুলামে এক এক করে বয়ে চলা সময় ঝুলিয়ে দিলে অতীতেরা ক্রমশ ভারী হতে থাকে। যে ইতিহাসেদের কোথাও যাওয়ার নেই তারা রোজ কোনো না কোনো এক অচিন গাঁয়ের কালো মাটির মেঝেতে শীতল পাটির বুননের উপর কুজোর জল খেয়ে পরমশান্তিতে ঘুমিয়ে পড়ে; এক দীর্ঘকালীন সুখ এসে জড়ো হয় তখন, আর আমরা ভাবি গ্রীষ্ম এলো বোধহয়।
এসো আজ গল্প বুনি শীতল পাটির। গ্রীষ্মকালে শীতল পরশের জন্য বেড়ে যায় শীতলপাটির কদর। পাটির সঙ্গে এই ‘শীতল’ নামকরণের একটা বিশেষ মাহাত্ম্য আছে। এটি বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যগত কুটির শিল্প। মুর্তা বা পাটি বা বেত নামক গুল্মজাতীয় উদ্ভিদের ছাল থেকে এগুলো তৈরি হয়ে থাকে। হস্তশিল্প হিসাবে এগুলোর যথেষ্ট কদর রয়েছে। শহরে শো-পিস এবং গ্রামে এটি মাদুর ও চাদরের পরিবর্তে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। সাজসজ্জা দ্বারা সজ্জিত এই মাদুরকে নকশি বা নকশা পাটিও বলা হয়।
জানা যায় পূর্বে নবাবের আমলে ২০-২৫ টাকা হইতে ৮০-৯০ টাকা, এমন কি শত দ্বিশত টাকা পর্যন্ত মূল্যের পাটিও প্রস্তুত হত বলে জানা যায়। ২০-২১ হাত দীর্ঘ পাটিকে ‘সফ’ বলা হয়ে থাকে। ইট ও চোঁয়ালিশ পরগণাতেই সর্ব্বোৎকৃষ্ট শীতল পাটি প্রস্তুত হয়। পাটি প্রস্তুতকারকগণ ‘পাটিয়ারা দাস’ নামে খ্যাত। ১৮৭৬-৭৭ খৃষ্টাব্দে শ্রীহট্ট থেকে ৩৯২৭ টাকা মূল্যের পাটি রপ্তানি হইয়াছিল বলে জানা যায়। এছাড়াও নকশা পাটির ক্ষেত্রে কারিগর তাঁর স্মৃতি থেকে বাদামী বা প্রাকৃতিক রঙের বেতের সঙ্গে রঙ্গিন বেত মিশিয়ে নকশা তৈরী করে থাকেন।
শীতলপাটির বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে গরমে ঠান্ডা অনুভূত হয়।
শীতলতার পাশাপাশি নানান নকশা, রং ও বুননকৌশল মুগ্ধ করে সবাইকে। প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি হয় এই পাটি আর একেবারেই স্বাস্থ্যসম্মত। কোন কোন জায়গায় তৈরী হয় এই শীতল পাটি?? বাংলাদেশের সিলেটের বালাগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলা মূলত এ শিল্পের আদি স্থান। তবে সিলেটের চার জেলা ছাড়াও নোয়াখালী, সিরাজগঞ্জ, পাবনা ও চট্টগ্রামের কিছু এলাকায় শীতলপাটির কারিগরদের দেখা পাওয়া যায়। তবে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে পাটি তৈরি হলেও সিলেটেই বুননশিল্পীদের দেখা বেশি পাওয়া যায়।
বাংলাতেও কিছু কিছু জায়গায় আমরা এই পাটির খোঁজ পেয়ে থাকি। তবে তা ঐ বাংলাদেশের মতো না হলেও কতকটা সেই ধাঁচেই তৈরী।
Be the first to comment