তপন মল্লিক চৌধুরী
লেনিনকে বিংশ শতকের অন্যতম প্রধান ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বব্যাপী লেনিন একজন বিতর্কীত ও প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে পরিগণিত। তাঁর সমর্থকেরা তাকে গণমানুষের অধিকার আদায়ে যোদ্ধা হিসেবে বিবেচনা করে। অপরদিকে তাঁর বিরুদ্ধবাদীরা তাকে স্বৈরাচারশাসন ব্যবস্থার প্রবর্তনকারী এবং গৃহযুদ্ধের প্রশ্রয়দাতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী হিসেবে বিবেচনা করে। তথাপি সোভিয়েত ইউনিয়নের জনক হিসেবে তিনি বিশ্বব্যাপী সুপরিচিত। এছাড়া মার্ক্সবাদ লেনিনবাদ তত্ত্বের প্রবক্তা হিসেবেও তিনি বিশ্বের রাজনৈতিক ইতিহাসে পরিচিত। লেনিন আন্তর্জাতিক সাম্যবাদী আন্দোলনের অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব।
১৮৮৬ সালে ভ্লাদিমির ইলিচ-এর পিতৃ বিয়োগ হলে তাঁর মায়ের উপর সংসারের যাবতীয় দায়িত্ব এসে পরে। সাম্মানিক স্নাতক ডিগ্রি লাভ করে ১৮৮৭ সালে লেনিন কাজান বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন। শীঘ্রই ছাত্রদের বিপ্লবী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে বহিস্কার করে। ১৮৮৯ সালে তিনি সামারা যান এবং স্থানীয় মার্ক্সবাদীদের নিয়ে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। ১৮৯১ সালে সেন্ট পিটার্সবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকেআইন পাস করে, সামারাতে আইন ব্যবসা শুরু করেন। এরপর তিনি সেন্ট পিটার্সবার্গ চলে আসেন এবং শীঘ্রই সেখানকার মার্কসবাদীদের অবিসংবাদী নেতা হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন।এখানেই লেনিন ক্রুপস্কায়া-র সাথে পরিচিত হন। ক্রুপস্কায়া শ্রমিক এবং কৃষকদের মধ্যে সাম্যবাদ এবং বিপ্লবী আদর্শের প্রচারে ব্রতী ছিলেন। ১৮৯৫ সালের ডিসেম্বরে লেনিন সমেত পার্টির বৃহৎ অংশই গ্রেফতারহয়।
“রাবো চেয়ে দেলো” (শ্রমিকআদর্শ) পত্রিকার প্রথম যে সংখ্যাটা লেনিন ও তার সহকর্মীরা প্রস্তুত করেছিলেন, তা হস্তগত করে পুলিস। ভ্লাদিমিরকে রাখা হয় পিটাসবুর্গ জেলে। একক কক্ষে কাটান ১৪ মাসেরও বেশি, কিন্তু জেলের গরাদের আড়ালে থেকে ও বিপ্লবী ক্রিয়াকলাপ তাঁর থামেনি। বাইরের মুক্ত কমরেডদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন, চিঠি, পুস্তিকা লিখে তা বাইরে পাঠাতেন। জেলে বসেই লিখে ফেলেন মার্কসবাদী পার্টির প্রথম খসড়া কর্মসূচী। বিপ্লবী দলিল পত্রে লেনিন লিখতেন বই ও পত্রপত্রিকার লাইনের ফাঁকে ফাঁকে দুধ দিয়ে। এমনিতে তা চোখে পড়তোনা। কিন্তু কাগজটা আগুনে গরম করলেই তা বেশ ফুটে উঠত। বিপ্লবীরা এই পদ্ধতিতে প্রায়ই পত্রালাপ চালাতেন। রুটি দিয়ে দোয়াত বানাতেন লেনিন, তাতে দুধ থাকত – কালির কাজ করত দুধ। পরিদর্শক এলেই সেটি তিনি সঙ্গে সঙ্গে গিলে ফেলতেন।
তাঁর একটি পত্রে লেনিন পরিহাস করে বলেছিলেন “ছয়টি দোয়াত আজ খাওয়া গেল”। ১৮৯৭ সালে তাঁকে পূর্ব সাইবেরিয়ার এক নির্জন স্থানে নির্বাসিত করা হয়। কিছুদিনের মধ্যে ক্রুপস্কায়াকেও সেখানে নির্বাসিত করা হয়। পরবর্তীকালে তাঁদের বিবাহ সম্পন্ন হয়। নির্বাসনে থাকাকালীন লেনিন ৩০টি পুস্তক রচনা করেছিলেন। যার মধ্যে অন্যতম ছিল রাশিয়ায় পুঁজিবাদের বিকাশ, যা মার্কসবাদী দর্শনের উপর ভিত্তি করে রাশিয়ার অর্থনীতি সম্বন্ধে বিচার বিশ্লেষন করেছিল। এই সময়েই তিনি রাশিয়ার শোষিত শ্রমিক এবং সর্বহারাগোষ্ঠীকে নিয়ে একটি দলগঠনে উদ্যোগী হন।
Be the first to comment