তপন মল্লিক চৌধুরী
হরসুখ ভাই দোবারিয়া। বসবাস গুজরাট রাজ্যের জুনাগধ শহরে। পেশায় কৃষক এই মানুষটি খুব বেশি অর্থ বিত্তের মালিক না হলেও তার রয়েছে একটি মহৎ হৃদয়। যখন সভ্যতা, আধুনিকতা,পরিবেশ বিষিয়ে দিচ্ছে, নষ্ট হচ্ছে প্রাকৃতিক ভারসাম্য, এর ফলে বিপন্ন হচ্ছে পশু-পাখির জীবন তখন মহৎ হৃদয়ের এই মানুষটি কয়েক হাজার বন্য পাখির দেখভালের দায়িত্ব নিয়েছেন। তাদের প্রতিদিনের আহার থেকে শুরু করে বাসা বানিয়ে দেওয়ার কাজও করছেন নিজ হাতে। পাখিদের প্রতি এই ভালোবাসার ফলস্বরূপ তিনি পেয়েছেন ‘বার্ড ম্যান’ বা ‘পাখি মানব’-এর খ্যাতি।
ঘটনার শুরু ২০০০ সালে। এক দুর্ঘটনায় পা ভেঙে যায় হরসুখের। বাড়িতে শুয়ে বসে কাটছিল দিন। একদিন এক প্রতিবেশী তার কাছে পোষা টিয়া পাখিকে খাওয়ানোর জন্য মিলিট দানা (এক ধরনের শস্য) নিতে আসে। বুদ্ধি খেলে যায় হরসুখের মাথায়। নিজের ঘরের বারান্দায় একটি মিলিট ঝুলিয়ে দেন। কিছুক্ষণ পরে একটি টিয়া এসে খেয়ে যায় সেটি। পরদিন দুটি টিয়া আসে। এভাবে প্রতিদিন টিয়ার সংখ্যা বাড়তে থাকে। সাথে যোগ হয় চড়ুই। সেই থেকে শুরু। মাঝখানে কেটে গেছে সতের বছর। তবে দীর্ঘ এই সময়ে একদিনের জন্যও তার এই কাজ থেমে থাকেনি। পাখির সংখ্যা বাড়তে বাড়তে পৌঁছেছে তিন হাজারে। বিপুল সংখ্যক এই পাখির আহারের পুরো বন্দোবস্ত একা হাতে করে চলেছেন হরসুখ। পাখির প্রতি তীব্র ভালোবাসার কারণে নিজের বাসস্থান পর্যন্ত পরিবর্তন করেছেন তিনি। এক সময় তিনি থাকতেন শহরের মাঝখানে। বিপুল সংখ্যক পাখি আসার কারণে প্রতিবেশীরা প্রায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করত। প্রতিবেশীদের আভিযোগ আমল না দিয়ে তিনি ২০১২ সালে শহরের পাশে চার একর জায়গা নিয়ে তার স্বপ্নের পাখি আশ্রম গড়ে তুলেছেন। নিজের এই অদ্ভুত শখ সম্পর্কে তিনি বলেন, পাখিদের এই প্রতিপালন তাঁর জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। পাখিদের ডাকাডাকিতে অনেক বিরক্ত হলেও তিনি এটাকে তাঁর জীবনের অংশ হিসেবেই মনে করেন। তবে হরসুখ একা নন। তার পরিবারের সকলেই পাখিদের এই প্রতিপালন আনন্দের সঙ্গে করেন।
Be the first to comment