ধাঁধার প্যাঁচে কলকাতার রূপ দর্শন

Spread the love

দেবযানী লাহা ঘোষ,

আলি নগরের গোলকধাঁধা। নামের মধ্যে দিয়েই ইতিহাস রহস্য রোমাঞ্চের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। আসলে বাঙালী ইতিহাস বিস্মৃত একটি জাতি। যারা শুধু ছিলো কে ভর করে বেঁচে থাকতে ভালবাসে। তাকে এগিয়ে নিয়ে যাবার তাগিদ তাদের খুবই কম। ইতিহাস যাদের খুব প্রিয় বিষয় নয় এই ছবি দেখতে দেখতে তারাও এই ইতিহাস ভিত্তিক ছবির প্রেমে পড়ে যাবেন এমন কথা হলফ করে বলা যেতেই পারে। বিশেষ করে কলকাতায় বাস করলেও এই শহরের সব ইতিহাস জানা সম্ভব নয়। এই শহরের কত অজানা ইতিহাস ফুটে উঠেছে এই ছবির মধ্যে।

হুতুমের ৫১টা টিকির ইতিহাস। ওয়ারেন হেস্টিংসের চক্রান্তে মহারাজা নন্দকুমারকে ফাঁসিতে ঝোলানোর ইতিহাস। সারা বিশ্বকে বোকা বানিয়ে কালিকটের সঙ্গে কলকাতাকে গুলিয়ে ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানির চালাকির ব্যবসা। বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজদ্দৌলার ইতিহাস। নেটিভ জমিদার মারাঠা ডিচ, বর্গি আক্রমণ, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়, লাল বাজার, কর্ণওয়ালিশ স্ট্রীট, ঠনঠনিয়া কালীবাড়ির ইতিহাস এই সবই ধরা পড়েছে ছবিটিতে। ধাঁধার প্যাঁচে হেঁয়ালি মাখা উত্তরের সমাধান করতে গিয়ে একটির পর একটি ঘটনার উন্মোচন হয়। ধাঁধা, রহস্য, খুন, ইতিহাস চুরি সব নিয়ে জমজমাট ছবি। যা সবার ভালো লাগবে।

ইতিহাসকে ভালোবেসে এমন সুন্দর পরিবেশনের মধ্যে তাকে প্রেজেন্ট করার যে মুন্সিয়ানা পরিচালক সায়ন্তন ঘোষাল দেখিয়েছেন তা অভাবনীয়। তবে সৌগত বসুর গবেষণা ও চিত্রনাট্য এ ছবির মূল সম্পদ। ইতিহাসের ছাত্র সোহমের চরিত্রে অনির্বাণ ও তাঁর বান্ধবী বৃষ্টির চরিত্রে পার্নো মিত্রের জুটি যেন একে অপরের পরিপূরক। খুব সাবলীল তাদের অভিনয়। এছাড়াও পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, কৌশিক সেন, পূজারিণী ঘোষ, গৌতম হালদার যথেষ্ট প্রশংসার দাবি রাখেন। তবে কৌশিক করের অভিনয় ভালো হলেও বনেদী বাড়ির ছেলে হিসেবে একটু বেমানান। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত টান টান উত্তেজনায় ভরপুর এই ছবি। গল্প বলার স্টাইলটা খুব সুন্দর, দর্শক একটুও বোর হবেন না। তবে সম্পাদনায় আরও একটু কাট হলে ভালো হতো।

 

সায়ন্তন ঘোষালের প্রথম ছবি ‘যকের ধন’। এটা দ্বিতীয় ছবি। অল্পবয়সী নতুন পরিচালক বুঝিয়ে দিয়েছেন যে তিনি অনেক লম্বা দৌড়ের ঘোড়া। সঙ্গীত পরিচালক মিমোর কাজও খারাপ লাগেনি। এই শহরের আনাচে কানাচে কত ইতিহাস লুকিয়ে আছে। ইতিহাসকে অস্বীকার করে কোন জাতি তার ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারবে না। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শহরের  চেহারা বদলালেও আধুনিকতার ছোঁয়ায় হেরিটেজকে তাদেরই বহন করে নিয়ে যেতে হবে। চলচ্চিত্রের সঙ্গে সঙ্গে এই ইতিহাসের রোমহর্ষক গল্প বইয়ের পাতায় পড়তেও কিন্তু মন্দ লাগবে না।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*