পেলে
জন্ম – ২৩ অক্টোবর ১৯৪০
তিনি ব্রাজিলের বিখ্যাত ফুটবল খেলোয়াড়। তাঁর পূর্ণ নাম এদসোঁ আরাঁচ দু নাসিমেঁতু (Edson Arantes do Nascimento)। ব্রাজিলের হয়ে তিনি ১৯৫৮, ১৯৬২, ১৯৬৬ ও ১৯৭০ সালের বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। তিনি ব্রাজিলের জাতীয় দলের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা ও তিনবার বিশ্বকাপজয়ী একমাত্র ফুটবলার। তিনি প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেন ১৯৫৭ সালের ৭ জুলাই মারাকানায়, আর্জেন্টিনার বিপক্ষে। ২-১ ব্যবধানে হারা সেই ম্যাচে ১৬ বছর ৯ মাস বয়সে ব্রাজিলের পক্ষে প্রথম গোল করে পেলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতার স্থান দখল করেন।
১৯৫৮ ফিফা বিশ্বকাপ সম্পাদনা
সোভিয়েত ইউনিয়নের বিপক্ষে পেলে তাঁর প্রথম বিশ্বকাপ ম্যাচ খেলেন। ১৯৫৮ সালের ফিফা বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডের সেই ম্যাচটা ছিল প্রতিযোগিতার তৃতীয় খেলা। সেই বিশ্বকাপের সর্বকনিষ্ঠ (এবং তখন পর্যন্ত যেকোন বিশ্বকাপ খেলায় সর্বকনিষ্ঠ) খেলোয়াড় পেলের সতীর্থ ছিলেন গ্যারিঞ্চা, যিতো এবং ভাভা। ওয়েলসের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে করা গোলটি ছিল প্রতিযোগিতায় পেলের প্রথম এবং সেই ম্যাচের একমাত্র গোল, যার সাহায্যে ব্রাজিল সেমিফাইনালে উত্তীর্ণ হয়। ম্যাচের সময় পেলের বয়স ছিল ১৭ বছর ২৩৯ দিন, বিশ্বকাপের গোলদাতাদের মধ্যে সবচেয়ে কম।
১৯৬৬ ফিফা বিশ্বকাপ সম্পাদনা
১৯৬৬ সালের ফিফা বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্যায়ের ১ম খেলায় বুলগেরিয়ার বিরুদ্ধে জয়ী হলেও হাঙ্গেরীর বিরুদ্ধে ২য় খেলায় ব্রাজিল হেরে যায়।
এর পূর্বে বুলগেরিয়ার বিরুদ্ধে জয়ী হলেও তিনি গুরুতর আঘাত পান। তারপরও কোচ ভিসেন্তে ফিওলা সকলকে আশ্চর্যান্বিত করে গ্রুপের শেষ খেলায় পর্তুগালের বিপক্ষে পেলেকে মাঠে নামান। তিনি পুরো রক্ষণভাগ পরিবর্তন করে ফেলেন। এমনকি গোলরক্ষকও বাদ পড়েননি। আক্রমণভাগে তিনি জায়ারজিনহো এবং পরিবর্তিত দু’জন খেলোয়াড়কে দেন। মধ্যমাঠে তিনি প্রথম খেলার ন্যায় সাজান। যদিও তিনি জানতেন যে, পেলে তখনো তাঁর মারাত্মক জখমকে কাটিয়ে উঠতে পারেনি।
১৯৭০ ফিফা বিশ্বকাপ সম্পাদনা
১৯৭০ সালের আগের বিশ্বকাপের ব্যর্থতা মুছে ফেলে আবারও শিরোপা জিতে নেয় ব্রাজিল। টানা চারটি টুর্নামেন্টের তিনটিরই ট্রফি ওঠে তাদেরই হাতে। পেলে খেলেন তাঁর চতুর্থ বিশ্বকাপের শেষটি। প্রতিটা ম্যাচে গোল করেন জেয়ারজিনহো। ফাইনালে ইতালিকে ৪-১ গোলে গুঁড়িয়ে দেয় ‘ক্যাপ্টেন’ কার্লোস আলবার্তো। দল তিনবার শিরোপা জেতায় জুলে রিমে ট্রফিটা একেবারেই দিয়ে দেওয়া হয় ব্রাজিলকে। সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন পেলে। ১৯৭০ সালের বিশ্বকাপের পর নিজেকে সর্বকালের সেরা ফুটবল খেলোয়াড় হিসেবে প্রমাণ করেন পেলে।
প্রভাস রাজু উপ্পলাতি
জন্ম: অক্টোবর ২৩, ১৯৭৯
তিনি তেলুগু সিনেমায় একচেটিয়াভাবে অভিনয় করা ভারতীয় চলচ্চিত্র অভিনেতা। মূলত তামিল এবং তেলুগু ভাষার ছবিগুলোতে তিনি অভিনয় করেন। তিনি তেলুগু অভিনেতা উপ্পালাতি কৃষ্নাম রাজুর ভাগ্নে। তিনি ২০০২ সালে এশওয়ার ছবি দিয়ে চলচ্চিত্র জগতে আত্মপ্রকাশ করেন। তিনি এরপর আরো বেশকিছু ছবি যেমন ভরসাম (২০০৪), ছত্রপতি (২০০৫), চক্রাম (২০০৫), মুন্না (২০০৭), বিল্লা (২০০৯), মিঃ পারফেক্ট (২০১১) ও মির্চি (২০১৩) তে অভিনয় করেন। ২০১৪ সালে তিনি প্রভু দেবা পরিচালিত বলিউডের একটি ছবি অ্যাকশন জ্যাকসন এ একটি আইটেম গানে অভিনয়ের মাধ্যমে হিন্দি ছবিতে হাজির হন। তাঁর অভিনিত বাহুবলী: দ্য বিগিনিং ছবিটি ছিল গ্লোবাল ভারতীয় চলচ্চিত্রের সর্বকালের সর্বোচ্চ ও ভারতের সর্বোচ্চ ব্যবসা সফল ছবি।
তেলুগু অভিনেতা উপ্পলাপতি কৃষ্ণাম রাজুর ভাগ্নে।প্রভাস ২০০২ সালে এশওয়ার (বাংলাঃঈশ্বর) ছবি দিয়ে অভিনয় জীবন শুরু করেন। ২০০৩ সালে তিনি রাঘবেন্দ্র ছবিতে মূল চরিেত্র অভিনয় করেন। ২০০৪ সালে তাঁকে ভরসাম ছবিতে দেখা যায়। তিনি আদাভি রামুদু এবং চক্রাম ছবি দিয়ে তার অভিনয়জীবন অব্যাহত রাখেন। ২০০৫ সালে তিনি এস এস রাজামৌলি পরিচালিত ছত্রপতি ছবিতে অভিনয় করেন।এই ছবিতে তাকে সন্ত্রাসী বাহিনী কর্তৃক শোষিত একজন শরনার্থীর চরিেত্র দেখা যায়।প্রায় ৫৪টি কেন্দ্রে ছবিটি ১০০ দিন চালানো হয়েছিল। পরে তিনি আরো বেশকিছু ছবি যেমন পৌরণামী, যোগী ও মুন্না ছবিতেও অভিনয় করেন। ২০০৭ সালে তিনি একটি একশন-ড্রামা ছবি করেন এবং এর ঠিক পরপরই তাঁর একশন কমেডি ধর্মী বুজ্জিগাডু ছবিটি আসে ২০০৮ সালে। ২০০৯ সালে তাঁর আরো দুটি ছবি বিল্লা ও এক নিরাঞ্জন আসে।
২০১০ সালে তিনি রোমান্টিকধর্মী কমেডি ছবি ডার্লিং করেন এবং ২০১১ সালে হাজির হন মিঃ পারফেক্ট ছবি নিয়ে। ২০১২ সালে প্রভাস রাঘব লরেন্স দ্বারা পরিচালিত অ্যাকশনধর্মী ছবি র্যাবেল-এ অভিনয় করেন।এ সময়ে তিনি দেনিকাইনা রেডি ছবিতে তাঁর কন্ঠও প্রদান করেন।
ডগলাস রবার্ট জারদিন
জন্ম: ২৩ অক্টোবর, ১৯০০
ব্রিটিশ ভারতের বোম্বে প্রেসিডেন্সির মালাবর হিলে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ইংরেজ ক্রিকেটার ছিলেন। ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য হিসেবে তিনি মূলতঃ শীর্ষসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে মাঠে নামতেন। ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, সারে ও মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাবের প্রতিনিধিত্ব করেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে লেগ ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন তিনি। ১৯৩১ থেকে ১৯৩৪ সালের মধ্যে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অধিনায়ক ছিলেন তিনি। ১৯৩২-৩৩ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া সফরে দল পরিচালনা করে অধিক পরিচিত হয়ে আছেন ডগলাস জারদিন।
বিদ্যালয় জীবনেই অত্যন্ত প্রতিশ্রুতিশীল ব্যাটসম্যান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন নিজেকে। উইনচেস্টার কলেজের পক্ষে ক্রিকেট খেলেন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবস্থায় দলে সংশ্লিষ্ট হন ও শৌখিন ক্রিকেটার হিসেবে সারে কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাবে অংশগ্রহণ করেন।
২৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো টেস্ট খেলার জন্য তাঁকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সফরকারী দলে বেশকিছুসংখ্যক উদীয়মান বোলার ছিল ও সফরে সফলতা পেয়েছিল। কিন্তু জারদিন আত্মবিশ্বাসের সাথে টেস্ট সিরিজ খেলেন। অভিষেক টেস্টে ২২ রান তোলেন। কিন্তু দ্বিতীয় টেস্টে কার্যকর ৮৩ রান সংগ্রহ করেন। ২৬ রানের সময় রান নেয়ার উদ্দেশ্যে উইকেটে আঘাত করলেও তিনি অপরাজিত থাকেন। ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান লিয়ারি কনস্ট্যান্টাইনের বলে এ ঘটনার পূর্বেই ব্যাটসম্যান আম্পায়ারকে জানালে তিনি এ সুবিধা পান। পরবর্তীতে অবশ্য মরিস টেটের কারণে রান আউটে প্যাভিলিয়নে ফেরত যান। ঐ সময়ে টেটের সাথে তাঁর সুসম্পর্ক ছিল না।
১৯২৮-২৯ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া সফরে টেস্ট সিরিজে কিছুটা সফলতা পান। ১৯৩১ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে তাঁকে অধিনায়ক মনোনীত করা হয়। একই সালে ১৯৩২-৩৩ মৌসুমে অনুষ্ঠিতব্য সিরিজের কথা মনে রেখে দল নির্বাচকমণ্ডলী জারদিনকে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক মনোনীত করেন। ১৫ টেস্টে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে নয়টিতে জয় ও একটিতে পরাজয়বরণ করে তাঁর দল। বাদ-বাকী পাঁচ টেস্ট ড্রয়ে পরিণত হয়। ১৯৩৩-৩৪ মৌসুমে ভারত সফরে বডিলাইন সিরিজের সদস্য হিসেবে শুধুমাত্র ভেরিটি তাঁর সাথে যান। পূর্ণশক্তির দল না হওয়া স্বত্ত্বেও ইংল্যান্ড ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে। ১৯৩৪ সালে ভারত সফরের পর প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট থেকে অবসর নেন তিনি।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
(৭ সেপ্টেম্বর ১৯৩৪ – ২৩ অক্টোবর ২০১২)
বিংশ শতকের শেষার্ধে আবিভূর্ত একজন প্রথিতযশা বাঙালি সাহিত্যিক। ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুর পূর্ববর্তী চার দশক তিনি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা-ব্যক্তিত্ব হিসাবে সর্ববৈশ্বিক বাংলা ভাষা-ভাষী জনগোষ্ঠীর কাছে ব্যাপকভাবে পরিচিত ছিলেন। বাঙলাভাষী এই ভারতীয় সাহিত্যিক একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, সম্পাদক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট হিসাবে অজস্র স্মরণীয় রচনা উপহার দিয়েছেন। তিনি আধুনিক বাংলা কবিতার জীবনানন্দ-পরবর্তী পর্যায়ের অন্যতম প্রধান কবি। একই সঙ্গে তিনি আধুনিক ও রোমান্টিক। তাঁর কবিতার বহু পংক্তি সাধারণ মানুষের মুখস্থ। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় “নীললোহিত”, “সনাতন পাঠক” ও “নীল উপাধ্যায়” ইত্যাদি ছদ্মনাম ব্যবহার করেছেন।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্ম অধুনা বাংলাদেশের মদারিপুরে। মাত্র চার বছর বয়সে তিনি কলকাতায় চলে আসেন। ১৯৫৩ সাল থেকে তিনি কৃত্তিবাস নামে একটি কবিতা পত্রিকা সম্পাদনা শুরু করেন। ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ একা এবং কয়েকজন এবং ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম উপন্যাস আত্মপ্রকাশ প্রকাশিত হয়। তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বই হল আমি কী রকম ভাবে বেঁচে আছি, যুগলবন্দী (শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে), হঠাৎ নীরার জন্য, রাত্রির রঁদেভূ, শ্যামবাজারের মোড়ের আড্ডা, অর্ধেক জীবন, অরণ্যের দিনরাত্রি, অর্জুন, প্রথম আলো, সেই সময়, পূর্ব পশ্চিম, ভানু ও রাণু, মনের মানুষ ইত্যাদি। শিশুসাহিত্যে তিনি “কাকাবাবু-সন্তু” নামে এক জনপ্রিয় গোয়েন্দা সিরিজের রচয়িতা। মৃত্যুর পূর্বপর্যন্ত তিনি ভারতের জাতীয় সাহিত্য প্রতিষ্ঠান সাহিত্য অকাদেমি ও পশ্চিমবঙ্গ শিশুকিশোর আকাদেমির সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বেশ কিছু গল্প-উপন্যাসের কাহিনী চলচিত্রে রূপায়ণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সত্যজিৎ রায় পরিচালিত অরণ্যের দিনরাত্রি এবং প্রতিদ্বন্দ্বী উল্লেখযোগ্য। এছাড়া কাকাবাবু চরিত্রের চারটি কাহিনী সবুজ দ্বীপের রাজা, কাকাবাবু হেরে গেলেন?, মিশর রহস্য এবং ইয়েতি অভিযান চলচ্চিত্রায়িত হয়েছে। হঠাৎ নীরার জন্য উনার লিখিত আরেকটি ছবি।
২০০২ সালে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কলকাতা শহরের শেরিফ নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৭২ ও ১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দে আনন্দ পুরস্কার এবং ১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি।
২৩ অক্টোবর ২০১২ তারিখে হৃদযন্ত্রজনিত অসুস্থতার কারণে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দে ৪ এপ্রিল সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কলকাতার ‘গণদর্পণ’কে সস্ত্রীক মরণোত্তর দেহ দান করে যান। কিন্তু সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের একমাত্র পুত্রসন্তান সৌভিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ইচ্ছেতে তাঁর দেহ দাহ করা হয়। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ব্যবস্থাপনায় ২৫ অক্টোবর ২০১২ তাঁর শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয়।
Be the first to comment