নোবেল প্রাইজের জাদুঘর

Spread the love

তপন মল্লিক চৌধুরী,

নোবেল পুরস্কার বিগত ১১৬ বছর ধরে বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক ও আলোচ্য পুরস্কার বলে বিবেচিত হয়ে আসছে । সুইডিশ বংশোদ্ভূত বিজ্ঞানী আলফ্রেড বার্নহার্ড নোবেলের উইল অনুযায়ী ডিনামাইট আবিষ্কার থেকে প্রাপ্ত বিপুল অর্থসম্পদ মানবকল্যাণে নতুন নতুন উদ্ভাবনার জন্য ১৯০১ সাল থেকে সাহিত্য, রসায়ন, পদার্থবিদ্যা, চিকিৎসা বিদ্যা ও শান্তিতে দেয়া হচ্ছে। পরবর্তীতে অর্থনীতি এর সঙ্গে যুক্ত হয় ১৯৬৯ সালে। নোবেল বিজয়ীদের নিয়ে যেমন সাধারণ মানুষের উৎসাহের ঘাটতি নেই, তেমনি ভবিষ্যতে নোবেল কে পেতে পারেন তা নিয়েও ফি বছর চলে দস্তুর গবেষণা। বিশ্বের এত আগ্রহ উদ্দীপনা থেকেই ২০০১ সালে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে উদ্বোধন হয় নোবেল প্রাইজ জাদুঘরের, যার মুখ্য উদ্দেশ্য আলফ্রেড নোবেলের জীবনের ওপর আলোকপাত ও সেই সঙ্গে নোবেল বিজয়ীদের তথ্য সংরক্ষণ ও প্রদর্শন। তারপর থেকেই লাখো মানুষের ঢল সেখানে, আজ এই জাদুঘর জ্ঞান অন্বেষীদের কাছে এক তীর্থে পরিণত হয়েছে।

প্রথমেই আলফ্রেড নোবেল, তার কর্মময় জীবন, নোবেল প্রাইজের ইতিহাস নিয়ে মূল্যবান তথ্য এবং ব্যবহার করা জিনিস দিয়ে জাদুঘরটি সমৃদ্ধ। জেনে অবাক হবেন, আলফ্রেড নোবেলের নামে ৩৫৫টি নতুন জিনিস আবিষ্কারের পেটেন্ট আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাতটি ডিনামাইট। আর তার বাবাও ছিলেন একজন বিখ্যাত বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ, রাশান সেনাবাহিনীর জন্য জলমাইন আবিষ্কার করে তিনি প্রভূত খ্যাতি অর্জন করেন। এরপর আছে নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যবহার করা নানা দুর্লভ জিনিসপত্র। আলেকজান্ডার ফ্লেমিংয়ের প্রথম আবিষ্কৃত পেনিসিলিন, আইজ্যাক আসিমভের টাইপ রাইটার, দালাই লামার চশমা, রবিঠাকুর, মেরী কুরি, রুডইয়ার্ড কিপলিং, অমর্ত্য সেনের ব্যবহার করা স্মৃতি সংবলিত বেশ কিছু জিনিস। গোটা পৃথিবীর খ্যাতিমানদের সম্মেলন যেন ঘটেছে নোবেল জাদুঘরে। অডিও লাইব্রেরিতে আর্নেস্ট হেমিংওয়ে, মার্টিন লুথার কিং, জন স্টেইনবেক থেকে শুরু করে আরও বহু বিখ্যাত ব্যক্তির মাইক্রোফোনে কণ্ঠস্বর শুনে শিহরিত হতে হয়।

এছাড়া দুটি বড় হলঘর আছে নোবেল জাদুঘরে, দুটিতেই প্রোজেক্টর মারফত বড় পর্দায় প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়। জাদুঘর ভ্রমণ এইখানেই শেষ নয়, এর সুভ্যেনির বিপণনের দোকানটি যথেষ্ট সমীহ জাগানিয়া। হবেই না বা কেন, নোবেল জাদুঘর বলে কথা! দেয়ালজুড়ে শোভা পাচ্ছে নোবেল জাদুঘরের নামসহ নোবেল বিজয়ীদের ওপর প্রকাশিত আলোকচিত্র (ভিউকার্ড ও পোস্টার আকারে), সেই সঙ্গে নোবেল বিজয়ী সাহিত্যিকদের লেখা বই এবং গোটা নোবেল বিজয়ীদের ওপর প্রকাশিত নানা ভাষায় বই ও তথ্য চিত্র, এছাড়াও রয়েছে নোবেল বিজয়ী সাহিত্য নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র (হেমিংওয়ের দি ওল্ডম্যান অ্যান্ড দ্য সি, জন স্টেইনবেকের দি গ্রেপস অব র‌্যাথ ইত্যাদি)।

 

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*