তপন মল্লিক চৌধুরী,
উত্তর প্রদেশে চন্দ্র তোমার নামের ৮৬ বছরের এক বৃদ্ধা রিভলভার চালিয়ে সবার নজরে কেড়েছেন। এই বৃদ্ধ বয়সেও চন্দ্রের চোখ তাঁকে ধোঁকা দেয় না। সাদা শার্ট, নীল স্কার্ট এবং একটি স্কার্ফ পরিহিত এই বৃদ্ধা ১০ মিটার দূরে থাকা লক্ষ্য বস্তু ভেদ করতে পারেন।তোমার ৬৫ বছর বয়সে প্রথম নিজের এই অভিনব গুণ আবিষ্কার করেন। তখন থেকেই তাঁর নাম হয় ‘রিভলভার গ্রানি’ বা ‘রিভলভার দাদি’। অন্য দাদি/নানিদের মতো তিনিও পরিবারের জন্য রান্নাবান্না করেন, গবাদি পশু লালন-পালন করেন। কিন্তু গতানুগতিক এই জীবন থেকে বেরিয়ে চন্দ্র তোমার এখন ভারতের সবচাইতে বয়স্ক এবং বিশ্বের সবচাইতে বৃদ্ধ মহিলা শার্প শ্যুটারের খাতায় নিজের নাম লেখান। এ যাবত তিনি প্রায় ১০০-এর মতো তরুণ-তরুণীকে রিভলভার চালানো শিখিয়েছেন।যে বয়সে মানুষ অবসরের কথা ভাবে, সে বয়সে চন্দ্র তোমার জীবনের নতুন যাত্রা শুরু করেন।
আলজাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে চন্দ্র তোমার বলেন, প্রতিবেশী ও আত্মীয়রা প্রথমে আমাকে নিয়ে উপহাস করলেও আমার সাফল্যে তাঁদের সেই ভাবনার পরিবর্তন হয়েছে।চন্দ্র তোমার বলেন, ১৯৯৯ সালে তাঁর নাতনি শেফালী তোমার জহুরি রাইফেল ক্লাব নামে একটি শ্যুটিং ক্লাবে বন্দুক চালনা শিখতে শুরু করেন। কিন্তু নাতনি একা শুটিং ক্লাবে যেতে ভয় পাওয়ায় তিনিও তার সঙ্গে যাওয়া শুরু করেন। শেফালী বন্দুক চালনায় খুব একটা আগ্রহী ছিলেন না। চন্দ্র তোমার তেমন কিছু না ভেবেই বন্দুক হাতে নিলেন এবং লক্ষ্যভেদ করলেন। প্রথম বন্দুক হাতে নিয়েই তিনি লক্ষ্যভেদ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। ক্লাবের কোচ এটি দেখে তাঁর এই দক্ষতাকে আরো বৃদ্ধির পরামর্শ দিলেন।পরের দিন থেকে স্বামী ও বাবার চোখ ফাঁকি দিয়ে মাঠে গিয়ে বন্দুক চালনা শিখতে থাকেন চন্দ্র তোমার। নিখুঁতভাবে ভারসাম্য বজায় রাখতে চন্দ্র দীর্ঘক্ষণ পানির জগ হাতে ধরে থাকতেন। পরিবার যেন তাঁর বন্দুক চালনা শিক্ষায় বাধা দিতে না পারে তাই বিষয়টি তিনি পরিবারের সবার কাছে গোপন রাখেন।
একদিন স্থানীয় একটি পত্রিকায় ছবি ছাপা হওয়ার পর বিস্মিত হন চন্দ্র। এই ছবি যেন পরিবারের কেউ দেখতে না পারে তাই তিনি পত্রিকাটি লুকিয়ে রাখেন। কিন্তু বেশিদিন চন্দ্র নিজেকে লুকিয়ে রাখতে পারেননি। যখন মিডিয়াতে ঘন ঘন খবর আসতে থাকে এবং তিনি বিভিন্ন পুরস্কার পেতে থাকেন তখন তাঁর পরিবার বিষয়টি জানতে পেরে তাঁকে নিয়ে গর্ববোধ করে।চন্দ্র তোমার পাঁচ সন্তানরে মা এবং ১৫ জন নাতি-নাতনির দাদি। তাঁকে নিয়ে প্রতিবেশীসহ আত্মীয়রা খুবই গর্বিত।
Be the first to comment