শ্যামাপদ মালাকার –
ধর,–আমার বুকের ভিতর একটা তামাটে বর্ণ কৃষক নাঙল চালাচ্ছে,- –
আচ্ছা, ওটা বাদ দাও,
মনে করো- আমার সব অন্তরটাই পল্লীর মাঠ হয়ে চাষের গাজন চলছে।
কেউ লক্ষ্য করেনি, আকাশের গায়ে একটুকরো মেঘ- – ধীরে – ধীরে – সব আকাশটা ছেয়ে ফেলল।
আগাম দু’একফোঁটা, পরে দু’দশ ফোঁটার সাঙ্গে- – নেমে এল প্রবল বর্ষণ!
তুমিও হতবাক! আমিও!
হঠাৎ মাঠ অন্ধকার করা দারুণ একটা বজ্রপাতের শব্দে, তুমি আমায় আঁকড়ে ধরলে!
পলকে পলকে বর্ষণ- –
সারামাঠ ধরে- ধর ধর কোদাল ধর, লাজ ভেঙ্গে পাগ বেঁধে জল ধরে রাখ রব।
একদিকে আনীত শাকসেদ্ধ পান্তার উপর বৃষ্টির প্লাবন- –
অন্যদিকে হাঁকে ডাকে শব্দের অন্ধকারের এক কোণে,-মন্দবিদ্যুতের ন্যায় ধ্বনিত হতে লাগল- ধর ধর কোদাল ধর!
কেউ লক্ষ্য করিনি-
সমুদ্রউত্তাল তরঙ্গের ন্যায় বর্ষিত বৃষ্টির লহর, সারামাঠ প্রহত করে চলেছে- -মনে হচ্ছে এই বুঝি শেষ দিন!।
আমি যে কাঁপছি, তুমি টের পাচ্ছ,- –
আমিও টের পাচ্ছি!
আমার ললাট-চিবুক তোমার বুক বিদীর্ণ করে- হৃৎপিণ্ডের শিকড়ে শিকড়ে মাটির মতো ঠোঁটের গন্ধ লেপে দিতে চাইছি! সহসা সেখানেও কি একটা প্রবল ঝিঁকুনি দিয়ে বলে উঠবে,-“এ হতে পারে না,- -এ অন্যায় – অন্যায় -অন্যায়, তুমি বিশ্বাসঘাতক!”।
তখনও আমার বুকের ভিতর- কাদমাটি মাখা সেই কৃষকটা বলে চলেছে,-“লাজ ভেঙ্গে পাগ বেঁধে- ধর ধর কোদাল ধর,- -নিজের ফসল ঘরে তোল, ওরে নিজের ফসল ঘরে তো- – – – -!”।।
Be the first to comment