দেশ থেকে দ্বেষ, হিংসা, ঘৃণা, ক্রোধ দূর করতে হবে। এক ধর্ম- এক ভাষা- এক জাতি ভারতের আদর্শ নয়। ভারতবর্ষ বহুত্ববাদে বিশ্বাস করে। সহিষ্ণুতা তার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। যেমন সহাবস্থান ভারতের ধর্ম। ভারতে রাম শান্তির কথা বলে। এদিন ইংরাজিতে বক্তব্য দিতে দিতে হঠাৎই মাতৃভাষায় প্রণব বাবু বলে ওঠেন, ” কেহ নাহি জানে কার আহ্বানে কত মানুষের ধারা। দুর্বার স্রোতে এল কোথা হতে সমুদ্রে হলো হারা।” এটাই ভারত। তাঁর বক্তব্যে এদিন ফিরে ফিরে আসে মহত্মা গান্ধী ও জওহর লাল নেহেরুর কথা। স্বাধীনতা সংগ্রামে বিশেষ অবদানের জন্য সর্দ্দার বল্লবভাই প্যাটেলকে তিনি জানান, হৃদয়ের অকৃত্রিম শ্রদ্ধা। উঠে আসে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ১৯৮৫ সালে কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে বক্তব্যের কথা। তিনি বলে ওঠেন বাল গঙ্গাধর তিলকের উক্তি স্বরাজ আমার জন্মগত অধিকার। ভারতের সুমহান ঐতিহ্যের কথা বারবার উঠে আসে প্রণব বাবুর কথায়। এছাড়া ভারতের ভিত্তি যে ধর্মনিরপেক্ষতা, সে কথাও জোর দিয়ে বলেন তিনি।
বৃহস্পতিবার নাগপুরে আরএসএস-এর মঞ্চে মোহন ভাগবতের পাশে দাঁড়িয়ে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি বলেন আমি ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করি। আমার কাছে দেশ তথা জাতীয়তাবাদ এবং দেশপ্রেম ৩টি একে অপরের সঙ্গে যুক্ত এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রাচীন ভারতবর্ষ যে অত্যন্ত সমৃদ্ধশালী স্থান ছিল সেকথাও প্রণব বাবু ফা হিয়েন, হিউয়েন সাং-কে উদ্ধৃত করে বলেন। এছাড়াও তিনি বলেন প্রাচীন ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থাও ছিল সবার থেকে এগিয়ে। তিনি উল্লেখ করেন নালন্দা, তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা। এছাড়াও তিনি বলেন ভারত ছিল সারা বিশ্বের শিক্ষাকেন্দ্র। উঠে আসে অর্থশাস্ত্রের কথা। পাশাপাশি প্রণব বাবু বলেন ভারত মাতাকে বারবার আক্রমণ করা হয়েছে। মুসলিম আধিপত্য, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ভারত দখল এইসব প্রসঙ্গও উঠে আসে। ডঃ প্রণব মুখোপাধ্যায় এদিন স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে বলেন, ২৯৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর ১৯৪৭-এর ১৫ আগস্ট স্বাধীনতাপ্রাপ্তি সবই তিনি এদিন অত্যন্ত মুন্সিয়ানার সঙ্গে বলেন। এছাড়াও প্রণব বাবু এদিন আরও বলেন, বসুধৈব কুটুম্বকম ‘The world in one family’-এটাই আমাদের আদর্শ। বহুত্ববাদ, সহিষ্ণুতা, বিবিধতার মধ্য দিয়েই ভারতবর্ষ তার ঐতিহ্য নিয়ে বেঁচে থাকবে বলে মন্তব্য করেন প্রণব মুখোপাধ্যায়।
Be the first to comment