যুদ্ধ

Spread the love

মৃগাঙ্ক চক্রবর্তীঃ

সে অনেককাল আগের কথা। দুই রাজ্যে দুই রাজা ছিল। অমুক রাজ্যের রাজার নাম হবুচন্দ্র আর তমুক রাজ্যের রাজার নাম গবুচন্দ্র। দুজনেই বাহুবলে-সৈন্যবলে-রণনীতিতে-কৌশলে সমান পারদর্শী। রাজা মানেই তো সাম্রাজ্যের লোভ। হবুচন্দ্রের নজর তমুক রাজ্যের ওপর, আর গবুচন্দ্র চায় অমুক রাজ্যের দখল করতে। একদিন সব ঠিকঠাক করে, গবুচন্দ্র হবুচন্দ্রকে লিখে পাঠালেন এক চিঠি। ওতে তিনি লিখলেন তিনি যুদ্ধ চান। যুদ্ধে যে জিতবে, বদলে সে পরাজিতের রাজ্যের দখল পাবে। হবুচন্দ্রের কাছে খবর আর চিঠি দুই-ই পৌঁছলো। দুপক্ষই রাজি। শুরু হল যুদ্ধের প্রস্তুতি।
দু’দেশের রাজাই মন্ত্রীকে আদেশ দিলেন-“দেখো তো মন্ত্রী, সব ঠিকঠাক চলছে কিনা? সেসব দেখবার ভার সমস্ত তোমার। ও রাজ্য আমার চাই।”
রাজা দু’কথা বললে, মন্ত্রী গিয়ে সেনাপতিকে শোনায় চার কথা-“আপনি পুরনো লোক। সৈন্য প্রস্তুতির দায়িত্ব সব আপনার। যুদ্ধে মহারাজের জিত হলে, বুঝতেই পারছেন আপনার দৈন্য অবস্থার অবসান নিশ্চয় ঘটবে। তাই জোরকদমে শুরু করুন আপনার রণকৌশল।”
সেনাপতির হাতের চেয়ে মুখ চলে বেশী। রাজ্যের সমস্ত সৈন্য আর সাধারণ মানুষকে ডেকে উনি শুধালেন-” আজ তোমাদের ডাকবার একটাই উদ্দেশ্য। যুদ্ধের ডাক এসেছে। যুদ্ধে তোমাদের যেতেই হবে। তোমাদের রাজা এতকাল তোমাদের কথা ভেবে এসেছেন, আজ তাঁকে সমস্ত ঋণ ফিরিয়ে দেওয়ার পালা- তার পাশে দাঁড়িয়ে, তার সঙ্গে পা বাড়িয়ে। ওনার হয়ে তোমরা যুদ্ধ না করলে আর কে আছে ওনার আপন? তোমরাই তো ওনার আপনজন। আজ মাতৃভূমিকে বাঁচাতে, রাজার প্রাণ বাঁচাতে তোমাদের এগিয়ে এসে যুদ্ধে অংশ নিতে হবে- দরকার পড়লে রাজার জন্য, দেশের জন্য প্রাণ দিতে হবে।”
সেনাপতির চর্বিতচর্বণ বক্তৃতায় ভালোই কাজ হল। রাজ্যের সবাই রাজি। ক্রমে ঘনিয়ে এলো যুদ্ধের দিন। শুরু হল সেই মহাযুদ্ধ।
দুই রাজ্যের কেউ-ই কম যায় না। দুই রাজ্যেরই প্রচুর সৈন্য মারা গেলো। অবশেষে একসময় দেখা গেলো যুদ্ধে দুপক্ষের আর কোন সৈন্য অবশিষ্ট নেই। সবাই মারা গেছে। শুধু দুপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছেন মুখোমুখি হবুচন্দ্র আর গবুচন্দ্র। পেছন থেকে মন্ত্রী অমাত্যরা ভাবছেন এবার কি হবে? হঠাৎ সমস্ত নীরবতা ভেঙে গবুচন্দ্র বলে উঠলেন- “ওহে হবুচন্দ্র, ভিতু আমি মোটেই নই। কিন্তু যুদ্ধ আমি চাই না। আমি শান্তিতে বিশ্বাসী।”
হবুচন্দ্র সায় দিয়ে শুধলেন-” একদম। আমারও এসব একেবারে নাপসন্দ। তার চেয়ে চলুন- আমরা শান্তি চুক্তি করি যে কেউ আর কারও রাজ্যের দিকে নজর দেবো না।”
খাসা প্রস্তাব। যুদ্ধক্ষেত্রেই একটা গাছের তলায় জমায়েত হল সিংহাসন, টেবিল, প্রচুর খাবারদাবার। চলল শান্তিচুক্তি। সেখানে রাজ্যে এক পাগলও থাকতো। সে ওই যুদ্ধক্ষেত্রের পাশ দিয়েই যাচ্ছিলো। যেতে যেতে সে গান গাইছিল- “রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয়, আর উলুখাগড়ার প্রাণ যায়।”

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*