অনুপ বৈরাগীঃ
১
গ্রামের নাম ভবানিপুর। ভাদ্র আশ্বিন মাস পটল তোলার সময়। যদিও বাড়ির মেয়েদের আপত্তিতে পারিবারিক অভিধানে ‘তোলা’ কেটে ‘ভাঙা’ করা হয়েছে। তো এই পটল চাষের সময় প্রতিদিন সকালে কর্তারা মাঠে গিয়ে পুরুষ ফুল নিয়ে স্ত্রী ফুলে ছুঁইয়ে আসেন তাতে নাকি ফলন ভাল হয়। সে জন্য হোক বা সঠিক চাষাবাদের জন্য ও সঠিক আবহাওয়ার জন্যই হোক এ বছর ফলন খুব বেশি। এক একজনের দু থেকে আড়াই মণ এক দুদিন ছাড়া উঠতে থাকলো। পাইকারি দাম সামান্য কমলেও লাভ বেশ ভালই। ঘরে ঘরে ভাঁড় উপছে পড়লেও সুখেনের ভাঁড়ে মা ভবানী ঢুকে বসে আছেন। মায়ের ‘অ সুখেন’ ডাক সুখেনের কানে ‘অসুখে’র মত শোনায়। মুখ ব্যাজার করে ভাবে জমি জমা না থাকলে হয়ত এবছর কিছুটা লাভের মুখ দেখত। কতকরে দাদাকে বলেছিল এবছরটা ছাড়িয়ে দাও।চাষ করে শোধ দিয়ে দেবে। তক্তাপোষে শুয়ে জানালা দিয়ে একফালি কুমড়োর মত চাঁদ দেখতে দেখতে পাস ফিরে শু’লো। ঘুমন্ত ইতুর মুখের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস বের করতে গিয়েও হজম করে নিল। যদি ইতুর শান্তির ঘুম ভেঙে যায়!কিছু একটা না করলেই নয়……।
২
-কিগো ! কোথায় ছিলে সাড়া সকাল । খুঁজে খুঁজে নাকাল!
-বাজারে গেছিলাম। কিছু পাইকারি সবজি কিনে খুচরো বিক্রি করার জন্য।
-এদিকে কি হয়েছে জানো?
-কি
-পটল খেত থেকে কে নাকি পটল চুরি করেছে।
-সবার খেত থেকে?(নিরলিপ্ত গলায় সুখেন বল্লো)
-তাই তো মনে হয়। গোদোল কাকা ছোটকা সবাই বলাবলি করছিল। তবে খুব বেশি নিতে পারেনি।দু এক কেজি করে হবে বড়জোর।বলছিল খাওয়ার জন্য হয়ত নিয়ে গেছে।
-হুম!
-ছোটকা কিছু পটল দিয়ে গেছে খাওয়ার জন্য।
-আচ্ছা ইতু মণ মণ পটল থেকে দু এক কেজি চুরি গেলে ওদের কিছু ক্ষতি হবে না। না রে? অথচ দু এক কেজি জমতে জমতে এক মণ হয়ে গেলে আরেকটা সংসার চলে যায়।
-তোমার কি হয়েছে বল তো? শরীর খারাপ লাগচে?
-নাতো। আজ বেশ বিক্রি হয়েছে জানিস। ভাবছি খুচরো সবজি বিক্রিটাই করবো। এক কেজি দু কেজি এক মণ……………।!!!
Be the first to comment