নির্মলেন্দু কুণ্ডুঃ
হঠাৎ হইচইটা কানে আসতেই দোকান ছেড়ে বেরিয়ে আসে তপন৷এমনিতে অঞ্চলটা নিরিবিলি ও শান্ত হলেও এই স্কুল টাইমটায় একটু ভিড় হয়৷একটা প্রাইমারি স্কুল আছে গলির ভিতর দিকে৷ওখানেই কচি-কাঁচাদের নিয়ে আসেন দুয়েকজন অভিভাবক৷গ্রামাঞ্চল বলে খুব বেশি বাবা-মায়ের দেখা পাওয়া না গেলেও পাঁচ-সাত জন তো আসেনই৷সেখানেই একটা মনিহারী দোকান আছে তপনের৷মোটামুটি বিক্রিবাটা হয়৷সেই উপার্জনেই কোনক্রমে দুজনের সংসার চালায় তপন৷বিয়ের আট বছর কেটে গেলেও সংসারে নতুন প্রাণীর আবির্ভাব ঘটেনি৷গ্রামের গুণীন,ওঝা,কোবরেজ—মানে যতটুকু তপনের সাধ্যে কুলোয়,ততটুকু করেও কোন আশার আলো দেখেনি তপন আর মালতী৷দিন-দিন মালতীও কেমন যেন কুঁকড়ে যাচ্ছে৷রাস্তার ওপারেই তপনের বাড়ি৷এপার থেকেই দেখতে পায় মাঝে মাঝেই ছাদে দাঁড়িয়ে প্রাইমারি স্কুলের বাচ্চাদের দিকে তাকিয়ে থাকে মালতী৷মুখে এক অব্যক্ত যন্ত্রণা৷এদিকে ভালো ডাক্তার দেখাতে না পারার অক্ষমতার যন্ত্রণাকে নীরবতার আড়ালেই লুকিয়ে রাখে তপন৷
হঠাৎ সেদিন দোকানে দু-তিনটে খদ্দের সামলাতে সামলাতে এমন চিৎকারে দৌড়ে বেরিয়ে আসে তপন৷আওয়াজটা আসছে স্কুলের গলি থেকে৷অস্পষ্ট কোলাহলের মাঝে শুধু দুয়েকটা শব্দই কানে আসে তপনের—”ছেলেধরা,মার,মার…”৷
ছেলেধরা!!এই শব্দটাকে মনে-প্রাণে ঘৃণা করে তপন৷নিজে এখনো বাবা হতে না পারলেও সন্তানসুখ বা সন্তানস্নেহ যে কী,তা সে ভালোই জানে৷বাচ্চারা যখন জুলুজুলু চোখে ওদের বাবা-মায়ের কোলে চেপে বায়না করে,তখন ওদের আধো-বোল অণুরণন তোলে তপনের মনেও৷এরকম ফুলের মতো বাচ্চাদের যে বা যারা চুরি করতে পারে,তারা নরকের কীট ছাড়া অন্য কিছু নয়—এমনই মত তপনের৷তাই দ্রুত পা চালায় গলির দিকে ও৷কয়েকজন মিলে তখন যথারীতি মার শুরু করেছে৷আরেকটু এগোতেই বুঝতে পারে ছেলেধরাটা আসলে একটা মেয়েমানুষ৷ছি,ছি,মেয়েরা নাকি মায়ের জাত!শেষে ওরাও!!
আরো দ্রুত পা চালায় তপন৷হঠাৎ ওর নজর পড়ে মেয়েটার পরনের শাড়িটার দিকে৷পোশাকটা যে ওর খুব চেনা৷এই তো গেল বছর হাট থেকে কিনে দিয়েছিল শাড়িটা মালতীকে৷এক অজানা আশঙ্কায় দৌড় লাগায় তপন৷ভিড় ঠেলে মেয়েমানুষটার কাছে হাঁটু গেড়ে বসতেই ওর কোলে ঢলে পড়ে মালতীর প্রাণহীন দেহ৷
Be the first to comment