অসমের জাতীয় নাগরিকপঞ্জি নিয়ে বুধবার কার্যত একাই সংসদ ভবন চত্বর উত্তপ্ত করে রাখলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, নাগরিক পঞ্জি থেকে যাদের নাম বাদ গিয়েছে, তাদের বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী বলছে বিজেপি। এ কথা বলে বাংলাদেশকে অপমান করা হচ্ছে। তাঁর কথায়, “বাংলাদেশ কি জঙ্গি রাষ্ট্র? যা চলছে তাতে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক খারাপ হওয়ার উপক্রম হচ্ছে।”
এদিন দুপুরে সংসদের সেন্ট্রাল হলে যান মমতা। তিনি সেখানে পৌঁছতেই বিরোধী দলের সাংসদ ও সাংবাদিকরা তাঁকে বলতে গেলে ছেঁকে ধরেন। সেন্ট্রাল হলে বসেই নাগরিকপঞ্জি নিয়ে মোদী-অমিত শাহদের মুণ্ডপাত করেন মমতা। পরে লালকৃষ্ণ আডবাণীর সঙ্গে ক্ষণিকের জন্য সৌজন্য সাক্ষাৎ সেরে এসে বসেন সংসদের গ্রাউন্ড ফ্লোরে তৃণমূলের সংসদীয় পার্টি অফিসে। ছোট্ট ঘর। নেতা, সাংসদ, সাংবাদিক, চিত্র সাংবাদিকদের ভিড়ে সে ঘরে তিল ধারণেরও জায়গা ছিল না।
নাগরিকপঞ্জির প্রক্রিয়া নিয়ে মমতা যখন তীব্র আপত্তি জানাচ্ছেন, তখন মঙ্গলবারই বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ প্রশ্ন তুলেছিলেন, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ নিয়ে তৃণমূলের কী অবস্থান? তাঁর এ-ও বক্তব্য, মমতা ভোট ব্যাঙ্কের রাজনীতি করছেন। আর সেই কারণেই গণ যুদ্ধের কথা বলছেন!
নাগরিকপঞ্জিকরণের জন্য কেন গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি হতে পারে, তা এ দিনও ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, বিজেপি হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে, এক রাজ্যের সঙ্গে অন্য রাজ্যের মানুষের মধ্যে ঝগড়া উস্কে দিচ্ছে। এর পরিণাম হতে পারে ভয়াবহ। তাঁর কথায়, যে ভাবে চল্লিশ লক্ষ মানুষকে নাগরিক পঞ্জি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে তা গোটা বিশ্বের মধ্যে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে একটা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এর বিরোধিতায় তাই সেই তীব্রতার সঙ্গে স্বর তুলতে হবে বিরোধীদের।
তৃণমূলের সংসদীয় পার্টি অফিসে বসে এ দিন বিরোধী দলের সংসদীয় নেতাদের সঙ্গে পৃথক ভাবে কথা বলেন মমতা। তাঁদের জানুয়ারি মাসে ব্রিগেডের সমাবেশে আমন্ত্রণও জানান। উল্লেখযোগ্য ভাবে এ দিন তৃণমূলের পার্টি অফিসে এসে মমতার সঙ্গে দেখা করেন শিবসেনা সাংসদ ও মুখপাত্র সঞ্জয় রাউতও। ব্রিগেডে মোদী বিরোধী সমাবেশে শিবসেনাকে আমন্ত্রণ জানান মমতা।
পরে তিনি বলেন, অসমে যা পরিস্থিতি তাতে বিরোধী দলগুলির একটি প্রতিনিধি দলের সেখানে যাওয়া উচিত। অসমে তৃণমূল সাংসদদের একটি দলকে বৃহস্পতিবার অসমে পাঠাচ্ছেন মমতা। তিনি নিজেও অসমে যেতে পারেন বলে এর আগে ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। তৃণমূল সূত্রের মতে, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির প্রতিনিধিরা যেতে সম্মত হলে হতে পারে সেই টিমকে নেতৃত্ব দেবেন মমতাই।
নাগরিক পঞ্জি নিয়ে মমতার এই বিরোধিতাকে বুধবার ফের সমালোচনা করেছে বিজেপি। দলের সাধারণ সম্পাদক রাম মাধব বলেন, এঁদের কাছে দেশের নিরাপত্তার কোনও মূল্য নেই। শুধু রাজনীতি করছে। মানুষ এঁদের স্বরূপ চিনে নিচ্ছে।
Be the first to comment