গত ৩০শে জুলাই প্রকাশিত হয় অসমের ‘রাষ্ট্রীয় নাগরিক পঞ্জির’ চূড়ান্ত খসড়া। সেই তালিকাতে নাম ছিল না ৪০ লক্ষ মানুষের। এই মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছে তৃণমূল। সংসদের ভেতরে ও বাইরে এই ইস্যুতে সরব হয়েছে দল। এই নাগরিক পঞ্জির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং।
আজ তৃণমূল কংগ্রেসের আট সদস্যের এক প্রতিনিধি দল অসমের শিলচরে যায়। তাদের বিমানবন্দরে আটকে রেখে হেনস্থা করা হয়। এই আট সদস্যের মধ্যে ছিলেন লোকসভার চার সাংসদ ডঃ কাকলি ঘোষ দস্তিদার, ডঃ রত্না দে নাগ, অর্পিতা ঘোষ এবং মমতা বালা ঠাকুর। ছিলেন রাজ্যসভার দুই সাংসদ সুখেন্দু শেখর রায় এবং নাদিমুল হক। এছাড়া ছিলেন বাংলার মাননীয় মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ও বিধায়ক মহুয়া মৈত্র।
তৃণমূল প্রতিনিধিদলের হেনস্থার তীব্র প্রতিবাদ করেন দলের সাংসদরা। প্রতিবাদের জেরে রাজ্যসভার কার্যপ্রণালী দিনের মত মুলতুবি করা হয়। লোকসভাতেও এই বিষয়টি তোলেন সৌগত রায়।
এই বিষয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, আমি প্লেনে দিল্লী থেকে কলকাতা ফিরছিলাম, আমি যখন দিল্লীতে প্লেনে উঠছিলাম, আমার কাছে খবর আসছিল, যে আমাদের প্রতিনিধিদল যারা শিলচর গেছেন, তাদের হেনস্থা করা হয়েছে। ইটা ওখানকার সরকারের বর্বরোচিত মনোভাব।
তিনি আরও বলেন, আমি যখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম, তিনি বলেছিলেন কাউকে হয়রানির স্বীকার হতে হবে না। তারপর যখন আমাদের এক প্রতিনিধিদল অসমের ভিক্টিমদের সঙ্গে দেখা করতে যায়, তাদের বিমানবন্দর থেকে বেরোতেই দেওয়া হয়নি। বিমানবন্দরের ভেতরে তাদের সঙ্গে পুলিশ দুর্ব্যবহার করে। মহিলাদেরও রেয়াত করা হয়নি। যদি সবকিছু ঠিক থাকে (আমিও চাই সবকিছু ঠিক থাকুক) তাহলে সরকার এরকম দুর্ব্যবহার কেন করছে? এটা কি তাদের সত্য গোপন করার কৌশল? কেন ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে? অসমের মানুষ এখন আতঙ্কিত। বিজেপি সরকার সুপার এমার্জেনসির মতো বাহুবল প্রয়োগ করছে, এটা দুর্ভাগ্যজনক, আমি এর নিন্দা করছি।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আমাদের প্রতিনিধিদল ওখানে সাধারণ মানুষের সঙ্গে দেখা করতে গেছে, কোনও জনসভা হচ্ছে না। ১৪৪ ধারাতেও দু’জন, দু’জন করে মানুষ যেতে পারে, তাহলে এই আটজনকে আটকানো হল কেন? কোন ধারায় তাদের আটকানো হল? অনেক হয়েছে। ওদের মুখোশ খুলে গেছে। এটা বিজেপি সরকারের প্রতিহিংসার রাজনীতি, মানুষকে দেশছাড়া করার অভিসন্ধি। মধ্যপ্রদেশেও প্রতিনিধিদল গেছিল, আমরা আইন জানি।
তিনি বলেন, যখন আসানসোলে তিনজনকে খুন করা হয়েছিল, তখন ওখানে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এড়াতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছিল। তখন বিজেপি তাদের প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছিল, আমরা দেখা করতে দিয়েছিলাম। আমাদের সৌজন্যবোধ আছে। এটাই আমাদের আর ওদের তফাৎ। অসমের মানুষের সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খোলা উচিত। সরকার মিডিয়াকেও ভুল তথ্য দিচ্ছে। ভারতবর্ষে সুপার এমার্জেন্সি চলছে। এবং অসমের মানুষ যাতে ভয়ে কথা বলতে না পারে, এজন্য তাদের বিমানবন্দর থেকেই বেরোতে দিচ্ছে না। আমার মনে হয়, এটা তাদের শেষের শুরু। তারা রাজনৈতিকভাবে হতাশ, তাই তারা বলপ্রয়োগ করছে। দেশের জন্য পেশিশক্তি নয়, গণতন্ত্র প্রয়োজন।
Be the first to comment