মৃত্যুর পরেও জটিলতা অব্যাহত। শেষকৃত্য নিয়ে দায়ের হয়েছে মামলাও। আজ, বুধবার শুরু হবে শুনানি।
ষাট বছর ধরে তামিল রাজনীতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করার পরে মঙ্গলবার সন্ধেয় মারা যান করুণানিধি। ৯৪ বছর বয়স হয়েছিল তাঁর। এর পরে, মেরিনা বিচে প্রয়াত নেতার শেষকৃত্য করতে চায় ডিএমকে। প্রথমে রাজি হয়নি সরকার। আর তাই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে ডিএমকে। সরকারের যুক্তি মেরিনা বিচে জায়গা নেই। এই বিষয়টি নিয়েই হচ্ছে শুনানি।
মাদ্রাস হাইকোর্টের অস্থায়ী প্রধান বিচারপতি এইচ জি রমেশের ডিভিশন বেঞ্চে মামলার শুনানি হবে। নেতার মৃত্যুতে এদিন আদালত বন্ধ থাকলেও বিশেষ ঘটনা হিসেবে এই মামলা শুনবে আদালত।
সরকারের দাবি, মেরিনা বিচে জায়গা নেই। তাই গান্ধী মন্ডপমের কাছে দু’একর স্থানে শেষকৃত্যের আগে করুণানিধির দেহ শায়িত রাখা যেতে পারে। এখানে তামিলনাডুর বেশ কয়েক জন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর শেষকৃত্য হয়েছে আগে। কিন্তু ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে জয়ললিতার মৃত্যুর পরে তাঁর মেরিনা বিচেই শেষকৃত্য হয় আম্মার। তাঁর আগে দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী আন্নাদুরাই এবং এমজি রামাচন্দ্রণের শেষকৃত্য আয়োজিত হয় এই মেরিনা বিচেই।
সেই একই কায়দায় করুণানিধিরও শেষকৃত্য সম্পন্ন করতে চায় ডিএমকে। দলের নেতা তথা আইনজীবী এ সারভানন জানিয়েছেন আপাতত মেরিনা বিচে শেষকৃত্য হোক। স্মৃতি সৌধ নিয়ে পরে ভাবা যাবে। সূত্রের খবর, গতকাল রাতে মাদ্রাস হাইকোর্টে শুনানি শুরু হলেও তা স্থগিত হয়ে যায়। এর পরে আদালত সরকারকে সময় নষ্ট করতে বারণ করেছে। জানিয়েছে, সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হলে নানা সমস্যা হতে পারে। ডিএমকে-র দাবির সমর্থন জানিয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীও।
করুণানিধির শেষকৃত্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে শুরু করে সারা দেশের বহু নেতার উপস্থিত থাকার কথা। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই পৌঁছে গিয়েছেন, তাঁর মতো আরও অনেকেই পৌঁছে গিয়েছেন।
মেরিনা বিচে করুণানিধির শেষকৃত্য সম্ভব নয়। নানা আইনি জটিলতার কারণ দেখিয়ে প্রয়াত ডিএমকে নেতার পরিবারের আর্জি খারিজ করল কে পলানীস্বামীর সরকার। বর্তমান তামিলনাড়ু সরকারের এই সিদ্ধান্তকে ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্ক। সরকারি সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে মাদ্রাজ হাইকোর্টের শরণাপন্ন হয়েছেন করুণানিধির ছেলে এম কে স্ট্যালিন।
এ দিন সন্ধ্যা ৬টা ১০মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন ডিএমকে সুপ্রিমো মুথুভেল করুণানিধি। বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর। বর্ষীয়ান এই রাজনীতিকের পরিবারের দাবি ছিল, তাঁর শেষকৃত্য হোক মেরিনা বিচেই যেখানে তামিলনাড়ুর অধিকাংশ রাজনীতিকের সমাধিস্থল রয়েছে। এআইএডিএমকে সরকারকে চিঠি দিয়ে মেরিনায় তাঁর রাজনৈতিক গুরু সি এন আন্নাদুরাইয়ের সৌধের পাশে তাঁর সৌধ তৈরির আবেদন জানিয়েছিলেন স্ট্যালিন। কিন্তু সেই আর্জি খারিজ করে দিয়েছে পলানীস্বামীর সরকার।
সরকারের তরফে বলা হয়েছে, আন্নার স্মৃতিসৌধের পাশে প্রয়াত নেতাকে সমাধিস্থ করা যাবে না। মাদ্রাজ হাইকোর্টে এই বিষয়ে একাধিক মামলা বকেয়া রয়েছে। অনেক আইনি জটিলতাও পার করতে হবে। কাজেই, মেরিনা বিচের বদলে দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সি রাজাগোপালাচারী এবং কে কামরাজের স্মৃতিসৌধের পাশে করুণানিধিকে সমাধিস্থ করা যাবে। ওই সৌধের পাশেই গান্ধী মান্দাপাম এলাকায় দু’একর জমি দিতেও রাজি তামিলনাড়ু সরকার।
কিন্তু, তাতে চিঁড়ে ভেজেনি। সরকারের এই সিদ্ধান্তকে ঘিরে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। স্ট্যালিন জানিয়েছেন তিনি নিজে সরকারের কাছে লিখিত ভাবে আর্জি জানিয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে নিজে দেখাও করে এসেছেন।
তামিলনাড়ুর বর্তমান সরকার আইনি জটিলতার কারণ দর্শালেও বিভিন্ন সূত্র বলছে যেহেতু মৃ্ত্যুর সময়ে করুণানিধি মুখ্যমন্ত্রী পদে ছিলেন না, তাই তাঁকে মেরিনা বিচে জায়গা দেওয়া হয়নি। করণানিধির পূর্বসূরী আন্নাদুরাইও মৃত্যুকালে কর্মরত ছিলেন। ১৯৬৯ সালে তাঁর শেষকৃত্য হয় মেরিনায়। আন্নাদুরাইয়ের সমাধির থেকে ৫০ মিটার দূরেই রয়েছে তামিল রাজনীতির আর এক আইকন জয়ললিতার সমাধি।
Be the first to comment